‘রেকর্ডের জন্য লোভী নই, তবে লক্ষ্য ঠিক করি’

টেস্ট ক্যারিয়ারের বয়স হতে চলল ১০ বছর। এতদিনে খেলতে যাচ্ছেন ৫০তম টেস্ট! রোমাঞ্চটা তবুও কম নয়, একসময় যে এটিকেও মনে হয়েছিল দূর আকাশের তারা!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি চট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2017, 06:23 AM
Updated : 8 August 2017, 02:21 PM

চট্টগ্রামে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তামিম ইকবাল জানালেন মাইলফলক টেস্ট নিয়ে তার ভাবনা। ফিরে তাকালেন তার ক্যারিয়ারে, শোনালেন রেকর্ড ও রান তৃষ্ণার কথা, জানালেন লক্ষ্য। এসেক্স থেকে তার হুট করে ফেরার ঘটনা নিয়ে ভাঙলেন মৌনতা।

এসেক্সে ১ ম্যাচ খেলে হুট করে ফেরার পর বলেছিলেন, একদিক থেকে ভালো হলো যে ক্যাম্পে ফিটনেস ট্রেনিং করতে পারবেন। কতটা ভালো হলো সেই ট্রেনিং?

তামিম ইকবাল: ইংল্যান্ড থেকে অবশ্যই ওভাবে ফিরতে চাইনি। তবে আমার কাছে মনে হয়, যা হয় তা ভালোর জন্যই হয়। ফেরার পর ২-৩ সপ্তাহ যে ফিটনেস ট্রেনিং করলাম, এটা আগামী পুরো মৌসুম আমাকে ফিট রাখবে। ফিটনেসের দিক থেকে যে পর্যায়ে ছিলাম ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর, তার চেয়ে ৫ শতাংশ হলেও উন্নতি করেছি আরও।

আপনি তো এমনিতে “ফিটনেস ফ্রিক” নন…

তামিম: আমাদের দলের দু-একজন আছে, মুশফিক-সাব্বির, ওদের মত আমি হয়ত সারাদিন ফিটনেস নিয়ে থাকি না। তবে ফিটনেসকে যথেষ্ট সিরিয়াসলিই নেই। যতটুকু করি, যা করি, ভালোভাবে করি। আমার অনেক কাজ সেভাবে দেখা যায় না। নিজেকে ফিট রাখতে ডায়েট, রানিং থেকে শুরু করে যতটুকু দরকার, সবই করি।

ব্যাপারটা হলো দৃষ্টিভঙ্গির। আমি যদি রানিং বা ফিটনেস ট্রেনিং দেখে ভয় পাই, তাহলে কখনোই উন্নতি করতে পারব না। কিন্তু আমি এটিকে ব্যাটিংয়ের মতোই গুরুত্ব দেই, উন্নতি করতে হলে ট্রেনিং করতে হবে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে। আগে হয়ত একটু অন্যরকম ছিলাম। এখন আমি ভীষণ গুরুত্ব দেই।

ডায়েটের কথা বলছিলেন। আপনি, আপনারা পারিবারিকভাবেই ভোজনপ্রিয়। বিরিয়ানি ধরনের খাবার খুব পছন্দ করেন। ডায়েট করা তো সেদিক থেকে আপনার জন্য বড় ত্যাগ!

তামিম:
ডায়েট হয়ত আমাদের সবাই করে। তবে আমার ব্যাপারটা কি, আমি ‘রিচ ফুড’ খেতে বেশি পছন্দ করি। পারিবারিক কারণেই এটা হয়েছে। নতুন করে বলার কিছু নেই। আমাদের পরিবার চট্টগ্রামে দুটি কারণেই বিখ্যাত, খেলাধুলা আর খাওয়া। পারিবারিক ঐতিহ্যে বড় অংশ জুড়ে আছে খাওয়া-দাওয়া। ওই পরিবারের ছেলে হয়ে খাওয়া কন্ট্রোল করা মানে অনেক বড় ত্যাগ আমার জন্য।

আমি, আমার স্ত্রী, আমরা খেতে অনেক পছন্দ করি। নানা দেশের নানা কিছু পরখ করে দেখতে ভালোবাসি। সেটা যখন বাদ দিতে হয়, আসলেই অনেক কষ্ট হয়। শুনলে হাসতে পারেন, ডায়েট করার সময় আমি ও আমার স্ত্রী নেটে বিভিন্ন খাবারের ছবি দেখি। নিজেদের সান্ত্বনা দেই। নিজেকে বোঝাই যে আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার ২০ বছরের নয়। আর হয়ত ৭-৮ বছর। এই বছর কটা ভালোভাবে খেলতে পারলে ক্রিকেট ছাড়ার পর ইচ্ছেমত খাব।

অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম টেস্ট হতে যাচ্ছে আপনার ৫০তম টেস্ট। কতটা রোমাঞ্চিত?

তামিম: দেশের হয়ে ৫০টি টেস্ট খেলা অনেক বড় অর্জন। একটা সময় যখন এক-দুই বছরে ২-৩টি টেস্ট খেলতাম, মনে হতো যে ক্যারিয়ার শেষে ৫০ টেস্ট হবে তো! অবশেষে হচ্ছে। আশা করি, ৫০তম টেস্ট স্মরণীয় হবে আমার জন্য, দলের জন্য। তাহলেই মাইলফলকটা স্পেশাল হবে।

সাকিবেরও ৫০ টেস্ট হবে একই সঙ্গে…

তামিম: আমার জন্য যতটা স্পেশাল, ওর জন্যও নিশ্চয়ই ততটা স্পেশাল হবে। আমি নিশ্চিত, ওরও চাওয়া থাকবে যেন ওর পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ জিততে পারে। চাইবে স্মরণীয় করে রাখবে। ৫০তম টেস্ট খেলছি বলেই যে দারুণ কিছু করতে হবে, তা নয়। দেশের হয়ে সব টেস্টেই আমরা ভালো করতে চাই। এবারও সর্বোচ্চটা দেব। যদি ভালো করতে পারি তাহলে ভালো স্মৃতি থাকবে।

আপনার ৫০ টেস্ট খেলার এই সময়ের মধ্যেই আপনাদের দুজনের চেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন ৫১ জন। অ্যালেস্টার কুক খেলেছেন ১২০টি, ব্রড-অ্যান্ডারসনরা একশর বেশি। আক্ষেপ হয় না?

তামিম: আমাদের অন্তত ৭৫-৮০ টেস্ট ম্যাচ হওয়া উচিত ছিল। একটা সময় আমরা অনেক কম খেলতে পেরেছি। এখন তবু আগের চেয়ে একটু বেশি টেস্ট আমরা পাচ্ছি। আশা করব, গত ১০ বছরে আমরা যত টেস্ট খেলেছি, আগামী ৬ বছরে যেন তার চেয়ে বেশি টেস্ট খেলতে পারি। অন্তত ১০০ টেস্ট যেন খেলতে পারি।

৪৯ টেস্টে ৮ সেঞ্চুরি, ৩৯.৫৩ গড়ে ৩ হাজার ৬৭৭ রান। আপন আয়নায় আপনার টেস্ট রেকর্ডের ছবিটা কেমন?

তামিম:
আমার কাছে মনে হয়, বেশ ভালোই করেছি। এমনিতে যত ভালোই আপনি খেলুন, তৃপ্ত হতে পারবেন না। আমিও হয়ত আরও ভালো করলে ভালো হতো। হয়ত আরও কিছু রান, আরও কয়েকটি সেঞ্চুরি…

৪৯ টেস্টে ৮ সেঞ্চুরি কি যথেষ্ট?

তামিম: ৮টি সেঞ্চুরি মানে ‘ওকে’, খারাপ নয়। তবে দারুণ কিছুও নয়। আরও তিন-চারটি সেঞ্চুরি থাকলে ভালো হতো। আমার সুযোগ ছিল। টেস্টে ৬ বার আশি থেকে একশর আগে আউট হয়েছি। এর অন্তত চারটি সেঞ্চুরি করা উচিত ছিল। সেটা পারলে ভালো লাগত। তারপরও নিজের টেস্ট রেকর্ড নিয়ে আমি হতাশ নই।

তবে নিজের স্ট্যান্ডার্ড আমি এখানেই রাখতে চাই না। টেস্ট গড় নিতে চাই ৪৫ থেকে ৫০ পর্যন্ত। এটা আমার লক্ষ্য। জানি, অনেক পথ বাকি। আমার ইনিংসগুলোকে সেঞ্চুরিতে নিতে হবে। শুধু সেঞ্চুরি নয়, বড় সেঞ্চুরি করতে হবে।

এ বছর ওয়ানডেতে দারুণ খেললেও ৫ টেস্টে সেঞ্চুরি নেই। আরও চারটি টেস্ট আছে সামনেই। বড় ইনিংস নিশ্চয়ই আশা করা যায়?

তামিম: আমার কাছে মনে হয়, যে ধরনের ব্যাটিং আমি করছি, আমার এখন নিয়মিত বড় ইনিংস খেলা উচিত। যদি থিতু হতে পারি, তাহলে ইনিংস লম্বা করা। একজন ওপেনার শুরুতে আউট হতেই পারে, সেটা নিষ্প্রাণ উইকেট হোক বা সিমিং উইকেট। কিন্তু থিতু হলে সেটাকে কাজে লাগানো উচিত। পরের চার-পাঁচ টেস্টে সেটিই চাইব।

টেস্টে দেশের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটি তো সাকিব নিয়ে নিলেন। ফিরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে আছে?

তামিম: অবশ্যই রেকর্ডটি ফিরিয়ে নিতে চাই, কেন নয়! দলের অন্যরাও হয়ত চায় নিজের করে নিতে। তবে রেকর্ডের জন্য লোভী নই, স্রেফ একটা লক্ষ্য ঠিক করা। ‘ভাঙতেই হবে’ হবে ধরনের জেদ নয়। কারণ সেটা হলে ইগো চলে আসবে, চাপ আসবে। বুঝতে হবে যে আমার একজন সতীর্থ একটি স্ট্যান্ডার্ড বেধে দিয়েছেন, আমাকে আরও অনেক পরিশ্রম করতে হবে সেই স্ট্যান্ডার্ড স্পর্শ করতে। আমি চেষ্টা করব কষ্ট করেই অর্জন করতে। এটা নিয়ে যে দিনরাত ভাবছি বা ঘুম হারাম হচ্ছে, তা নয়। তবে লক্ষ্য আছে।

দুবছর আগে ডাবল সেঞ্চুরির পর বলেছিলেন, বাংলাদেশের কারো ব্যাট থেকে ট্রিপল সেঞ্চুরিও এই এলো বলে। এখনও আসেনি। শিগগির আসবে বলে মনে হয়?

তামিম: গত দু-তিন বছরে কিন্তু আমাদের বড় ইনিংস বেড়েছে। দেড়শ-দুশ-সেঞ্চুরি আগের চেয়ে অনেক বেশি নিয়মিত হচ্ছে। কে জানে, হয়ত একটা দিন আসবে যেদিন কোনো ব্যাটসম্যানের সবকিছু মন মতো হবে এবং ট্রিপল করে ফেলবে। এমন নয় যে চাইলেই করা যায়। ট্রিপল সেঞ্চুরি অনেক কিছু পক্ষে থাকতে হয়। এজন্যই এটির সংখ্যা এত কম। অনেক গ্রেট ব্যাটসম্যানেরও ট্রিপল নেই।

নিজের দৃষ্টিতে আপনার সেরা টেস্ট ইনিংস কোনটি?

তামিম:
স্মরণীয় ইনিংস বেশ কটিই আছে। তবে তিনটি ইনিংসকে আমি আলাদা করতে পারি না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গত বছর মিরপুরে সেঞ্চুরি, পাকিস্তানের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি আর সবশেষ টেস্টে শ্রীলঙ্কায় ৮২।

মিরপুরে উইকেট ভীষণ কঠিন ছিল। ম্যাচে আর কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেনি। ম্যাচটি আমরা জিতেছিও। ডাবল সেঞ্চুরিটা স্মরণীয় ম্যাচের পরিস্থিতির কারণে। ড্রটিও জয়ের সমান ছিল। শ্রীলঙ্কারটা রান তাড়ায় শেষ ইনিংসে, আমার ইনিংসে দল জিতেছে। তিনটিকেই আমি পাশাপাশি রাখি।

আপনার সময়ে দেখা বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ইনিংস?

তামিম: মুশফিকের কয়েকটি ইনিংস আমি খুব হাইলি রেট করি। ইনিংসের কোয়ালিটি ছিল দারুণ। হায়দরাবাদে ভারতের বিপক্ষে ওর সেঞ্চুরি, খুব ভালো বোলিংয়ের বিপক্ষে কঠিন পরিস্থিতিতে করেছে। ওয়েলিংটনে সাকিবের ডাবল সেঞ্চুরি দারুণ ছিল, কিন্তু মুশফিকের ১৫৯ রানের কোয়ালিটি ছিল অনেক ভালো। অনেকটা সময় উইকেটে লড়াই করেছে, তার পর সেটিকে কাজে লাগিয়েছে।

আপনার খেলা সেরা বোলার?

তামিম: সেরা সময়ের সাঈদ আজমল, খুব কঠিন ছিল ওকে খেলা। শুরুর দিকে চামিন্দা ভাসকে খুব কঠিন লাগত।

এমন কোনো বোলার ছিল বা আছে, যাকে পড়তে সমস্যা হয়েছে? শচিন টেন্ডুলকার যেমন বলেছেন তার কাছে কঠিনতম বোলার হানসি ক্রনিয়ে, অ্যাডাম গিলক্রিস্টের সমস্যা হতো মাইকেল বেভানের বলে কিপিং করতে…

তামিম: আমার ওরকম কেউ নয়, সমস্যা হয় মর্নে মর্কেলকে খেলতে। তার উচ্চতার কারণে, লেংথের কারণে। বাঁহাতিদের সে সাধারণত ভালো বল করে, অ্যাঙ্গেলটার কারণে।

এখন আপনি রান করুন বা না-ই করুন, আপনার ব্যাটিংয়ে সবসময় একটা নিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি মেলে। এটা কি নিজেকে এখন আরও ভালো জানেন বলেই?

তামিম: অবশ্যই। এতদিন ধরে খেললে অভিজ্ঞতা তো হয়ই। তবে মূল ব্যাপার হলো, বেশ অনেক দিন ধরেই আমি একটি রুটিন অনুসরণ করে আসছি। সেই রুটির অনুসরণ করেই আমি গত ২-৩ বছরে সফল হয়েছি। সেটা বদলাচ্ছি না। যদি খারাপ সময় আসে, তখন হয়ত আবার ভাবা যাবে। আপাতত এটি আমার জন্য খুব কাজে দিচ্ছে।

সময়ের সঙ্গে আপনার শটের পরিধি বেড়ে যাওয়া, অফ সাইডেড ব্যাটসম্যান থেকে লেগ সাইডে উন্নতি, ব্যাটসম্যানশিপে সামগ্রিক উন্নতির কথা অনেকবার বলেছেন। কিন্তু উন্নতির প্রক্রিয়াটি কি ছিল? কিভাবে হয়েছে?

তামিম:
দেখুন, আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে আমি সহজাতভাবেই টেকনিক্যালি সাউন্ড ছিলাম। টেকনিকে কোনো সমস্যা ছিল না। আমার ইস্যু ছিল মানসিকতা। কোনো সময় কোনো কোচই টেকনিক নিয়ে বড় নড়াচড়া করেননি। হয়ত সালাউদ্দিন স্যার বা জেমি (সাবেক কোচ সিডন্স), কিংবা এখন হাথুরুসিংহে হয়ত ছোটখাটো টুকটাক অ্যাডজাস্টমেন্ট করেছে। এছাড়া আমার মাইন্ড সেট নিয়েই সবাই কাজ করেছে। এখনও কোচ সবসময় বলতে থাকেন যে আমার মাথা কিভাবে ‘ক্লিয়ার’ থাকা উচিত। আমিও এটা নিয়েই বেশি ভাবি। পাশাপাশি স্কিল বাড়ানোর চেষ্টা করি।

মাথা ‘ক্লিয়ার’ রাখার পদ্ধতি একেক ব্যাটসম্যানের তো একেকরকম। আপনার পদ্ধতি কি?

তামিম: আমি আগে থেকে কিছু চিন্তা করতে চাই না। নেতিবাচক কিছু মাথায় ঢুকিয়ে ফেলতে চাই না। যদি ভেবে ফেলি যে ‘উইকেট কঠিন, সুইং করছে বা টার্নিং ট্র্যাক, কিভাবে রান করব’, তাহলেই সমস্যা। মাথায় ঘুরঘুর করবে। ম্যাচের আগে তাই ক্রিকেট নিয়ে যতটা সম্ভব কম চিন্তা করতে চাই। একদল ক্রিকেটার হয়ত সব কিছু পরিপাটি সাজিয়ে, খুব চিন্তা করে মাঠে নামে। আবার আমার মতো আরেক দল মাথায়ই আনতে চাইবে না যে কাল খেলা। মাঠে গিয়ে প্রথম বলটি খেলার আগে মনোযোগ দেওয়া শুরু হবে।

এক্ষেত্রে পরিবার ও চারপাশের মানুষদের সাহায্য তো বেশি দরকার হয়!

তামিম: আমি খুবই ভাগ্যবান যে আমার স্ত্রীর ক্রিকেট নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহও নেই। বাসায় তাই ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে হয় না। অন্যরাও যারা জানে, ক্রিকেট নিয়ে কথা বলে না।

স্ত্রীর প্রসঙ্গ যখন উঠলো, এসেক্স থেকে আপনার ফেরা নিয়ে ‘এসিড সন্ত্রাস’ ধরণের ভীষণ স্পর্শকাতর খবর এসেছিল দেশের সংবাদমাধ্যমে…

তামিম:
দেখুন, যে ব্যাপারটা সত্যি নয়, সেটা যদি এভাবে পাবলিকলি ছড়ানো হয়, তাহলে সেটা খুব অন্যায়। ঠিক নয়। আমার জন্য ঠিক নয়। যে দেশ থেকে এসেছি, সেই দেশের জন্য ঠিক নয়। ব্যক্তিগত কারণে চলে আসতে চাওয়ার পরও যে ক্লাবটি আমাকে সম্মান জানিয়েছে, সেই ক্লাবের প্রতি ঠিক নয়।

ব্যাপারটি আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে। যারা এ ধরনের খবর ছড়ায়, তারা ভুলে যায়, এরকম একটা খবরের কারণে আমাকে হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। আর শুধু আমাকে নিয়ে ভুল খবর হলেও একটা কথা ছিল। আমাকে এরকম ব্যাপার অনেক সামলাতে হয়। কিন্তু আমার স্ত্রীকেও ভুগতে হয়েছে। একটা ভুল খবরের কারণে আমার স্ত্রীকে হাজারটা ফোন কল রিসিভ করতে হয়েছে, অংসখ্য মেসেজ পেয়েছে, পাঁচশটা মানুষকে আলাদা করে বোঝাতে হলো যে ওরকম কিছু হয়নি। এটা তো ওর প্রাপ্য নয়। এজন্য আমি খুব আপসেট ছিলাম।

এরপর আপনি অফিসিয়াল ফেইসবুক, টুইটারে এই খবরকে ‘সত্যি নয়’ বলার পরও যেভাবে সত্যি প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে অবাক হয়েছেন?

তামিম: অবাক হয়েছি, প্রচণ্ড খারাপও লেগেছে। প্রথম কথা, আমি প্রথমে যখন বলেছিলাম ‘ব্যক্তিগত কারণ’, আমার কাছে মনে হয়েছে সেটিকেই সবার সম্মান করা উচিত ছিল। অন্তত আমি আশা করেছিলাম, তারা আমার ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আমার সঙ্গে কথা বলবে। তার পর কিছু লেখার থাকলে লিখবে। না থাকলে নাই। দুভার্গজনকভাবে সেটা হয়নি।

এরপর আমি ‘নট ট্রু’ বলার পরও যেভাবে সেটাকে ‘ট্রু’ করার চেষ্টা হয়েছে, সেটা বিস্ময়কর ছিল। কেউ নিজে ‘না’ করার পরও সেটিকে সত্য দাবি করলে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ থাকতে হয়। ‘অমুক সূত্র’ বা ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তমুক’ দিয়ে কি তখন প্রমাণ হয়? আমি কৈফিয়ত চাইতে যাইনি কারণ এটা যার যার রুচির ব্যাপার। এমনিতেই ওসব খবরের জন্য আমাকে ও আমার স্ত্রীকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। আর বাড়াতে চাইনি।

যা হোক, প্রতিটি ঘটনাই শিক্ষা। এই ঘটনা থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি। আশা করি, যারা এমনটি করেছে, তারাও শিক্ষা নেবে।