অসত্য প্রচারে ভীষণ হতাশ তামিম

অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এসেক্স জানিয়েছিল, কারণটি ব্যক্তিগত। তবে দেশের কিছু সংবাদমাধ্যমের খবর ছিল ‘হেইট ক্রাইমের’ শিকার তামিম ইকবালের পরিবার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামিম জোর দিয়ে বললেন খবরটি ‘সত্য নয়’। তবু চলল সত্য প্রমাণের চেষ্টা। অবশেষে সেসব নিয়ে মুখ খুললেন বাঁহাতি ওপেনার। জানালেন, দেশের কিছু সংবাদমাধ্যমের ‘অসত্য প্রচারে’ ভীষণ হতাশ হয়েছিলেন তিনি।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি চট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2017, 05:10 AM
Updated : 8 August 2017, 02:21 PM

৫০তম টেস্টের মাইলফলক ছোঁয়ার আগে তামিম দীর্ঘ একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে। চট্টগ্রামে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রস্তুতি ক্যাম্পের ফাঁকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে আরও অনেক বিষয়ের সঙ্গে উঠে এসেছে এসেক্স থেকে ফেরার পরের ঘটনাবলীও।

“দেখুন, যে ব্যাপারটা সত্যি নয়, সেটা যদি এভাবে পাবলিকলি ছড়ানো হয়, তাহলে সেটা খুব অন্যায়। ঠিক নয়। আমার জন্য ঠিক নয়। যে দেশ থেকে এসেছি, সেই দেশের জন্য ঠিক নয়। ব্যক্তিগত কারণে চলে আসতে চাওয়ার পরও যে ক্লাবটি আমাকে সম্মান জানিয়েছে, সেই ক্লাবের প্রতি ঠিক নয়।”

তামিম জানালেন, ওই ‘ভুল’ খবরের জন্য তাকে ও তার পরিবারকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

“ব্যাপারটি আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে। যারা এ ধরণের খবর ছড়ায়, তারা ভুলে যায়, এরকম একটা খবরের কারণে আমাকে হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।”

“শুধু আমাকে নিয়ে ভুল খবর হলেও একটা কথা ছিল। আমাকে এরকম ব্যাপার অনেক সামলাতে হয়। কিন্তু আমার স্ত্রীকেও ভুগতে হয়েছে। একটা ভুল খবরের কারণে আমার স্ত্রীকে হাজারটা ফোন কল রিসিভ করতে হয়েছে, অংসখ্য মেসেজ পেয়েছে। পাঁচশটা মানুষকে আলাদা করে বোঝাতে হয়েছে যে ওরকম কিছু হয়নি। এটা তো ওর প্রাপ্য নয়। এজন্য আমি খুব আপসেট ছিলাম।”

দেশের সংবাদমাধ্যমের সূত্র ধরে ওই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ক্রিকেট বিশ্ব জুড়ে। জানতে পেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামিম জানান, ব্যাক্তিগত কারণেই ফিরছেন, সংবাদমাধ্যমের খবর সত্যি নয়।

কিন্তু তামিম নিজে অস্বীকার করার পরও কয়েকদিন ধরে নানা সূত্রের খবর দিয়ে আগের খবরকে সত্যি প্রমাণের চেষ্টা চলেছে। এটি তামিমকে বিস্মিত ও হতাশ করেছে আরও বেশি।

“অবাক হয়েছি, প্রচণ্ড খারাপও লেগেছে। প্রথম কথা, আমি প্রথমে যখন বলেছিলাম ‘ব্যক্তিগত কারণ’, আমার কাছে মনে হয়েছে সেটিকেই সবার সম্মান করা উচিত ছিল। অন্তত আমি আশা করেছিলাম, তারা আমার ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আমার সঙ্গে কথা বলবে। তার পর কিছু লেখার থাকলে লিখবে। না থাকলে নাই। দুভাগ্যজনকভাবে সেটা হয়নি।”

“এরপর আমি ‘নট ট্রু’ বলার পরও যেভাবে সেটাকে ‘ট্রু’ করার চেষ্টা হয়েছে, সেটা বিস্ময়কর ছিল। কেউ নিজে ‘না’ করার পরও সেটিকে সত্য দাবি করলে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ থাকতে হয়। ‘অমুক সূত্র’ বা ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তমুক’ দিয়ে কি তখন প্রমাণ হয়?”

এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন তামিম। তার বিশ্বাস, শিক্ষা নেবে সংবাদমাধ্যমও।

“আমি কৈফিয়ত চাইতে যাইনি কারণ এটা যার যার রুচির ব্যাপার। এমনিতেই ওসব খবরের জন্য আমাকে ও আমার স্ত্রীকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। আর বাড়াতে চাইনি।”

“যাহোক, প্রতিটি ঘটনাই শিক্ষা। এই ঘটনা থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি। আশা করি, যারা এমনটি করেছে, তারাও শিক্ষা নেবে।”

এসেক্সের হয়ে ন্যাট ওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে খেলতে গত ৮ জুলাই ইংল্যান্ড যান তামিম। খেলার কথা ছিল ৯ ম্যাচ। কিন্তু ১ ম্যাচ খেলার পরই ১১ জুলাই সিদ্ধান্ত নেন ব্যক্তিগত কারণে দেশে ফেরার। অফিসিয়াল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তামিমের ‘প্রাইভেসি’ রক্ষা করতেও অনুরোধ করেছিল এসেক্স।

কিন্তু দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করে, লন্ডনে এসিড সন্ত্রাসের হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তামিম। ভয় দেখিয়ে তাকে ধাওয়া করার ঘটনাও নাকি ঘটেছে। তামিম সেসব অস্বীকার করে আসছেন। পুলিশে অভিযোগ ছিল না; ‘হেইট ক্রাইমের’ কোনো প্রমাণও মেলেনি।