মাহমুদউল্লাহর প্রতিটি দিনই চ্যালেঞ্জিং

সোফায় বসলেন খুব সাবধানে, ধীরে ধীরে। তার পরও মুখে যন্ত্রণার মত ভঙ্গি করলেন। যেন টান লেগেছে পিঠে। কেউ একজন মজা করে বললেন, “ভাই, চিকনগুনিয়া নাকি?” মাহমুদউল্লাহও কম সরস নন, “নারে ভাই, কোমরগুনিয়া!”

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2017, 10:05 AM
Updated : 25 July 2017, 02:17 PM

রোববার জিমে ট্রেনিংয়ের সময় টান লেগেছে কোমরে। পরে স্ক্যান করে দেখা গেছে, ফ্লুইড জমেছিল সামান্য। সেই ব্যথাই ভোগাচ্ছে মাহমুদউল্লাহকে। বিশ্রামে থেকে অবশ্য শরীর আগের দুদিনের চেয়ে একটু ভালো। জানালেন, ব্যথা আর না বাড়লে বুধবার থেকে আবার সাইক্লিং দিয়ে টুকটাক ট্রেনিং শুরু করবেন।

চোট যেমন ভোগাচ্ছে এখন, তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার জুড়েও ছিল নানা ভোগান্তি। ছিল চড়াই-উৎরাই। ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক। মঙ্গলবার পূর্ণ হলো ক্যারিয়ারের ১০ বছর।

মাইলফলক স্পর্শ করল ক্যারিয়ারের পথচলা, তাই অসুস্থতা নিয়েও দাবি মেটালেন সংবাদমাধ্যমের। শোনালেন তৃপ্তির কথা। জানালেন আশার বাণী।

“ভালো লাগছে। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ১০টা বছর পার করলাম। ১০ বছরে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে, সেটা জাতীয় দলে কাজে লাগানোটাই বড় ব্যাপার। চেষ্টা করব আরও বেশ কয়েক বছর যাতে পারফর্ম করে যেতে পারি।”

“মাশরাফি ভাই, সাকিব-তামিম-মুশফিকও ১০ বছর পার করেছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক দলের জন্য। আমার ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার বললে, এখন দায়িত্বও বেড়ে গেছে। যে কয় বছর খেলব আরও, এই দায়িত্ব যেন ভালোভাবে পালন করতে পারি। ওরাও আশা করি আরও অনেক দিন খেলবে। বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার থাকায় আমাদের কম্বিনেশনটা এখন খুব ভালো।”

১০ বছরে বদলে গেছে অনেক কিছুই। একটু ব্যাটিং আর একটু বোলিং দিয়ে ‘মিনি অলরাউন্ডার’ হিসেবে শুরু করে মাহমুদউল্লাহ এখন সীমিত ওভারে দলের অপরিহার্য অংশ। বিশ্বকাপে দেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমি-ফাইনালে ওঠার নায়ক।

নিজের পরিবর্তনটা উঠে এলো মাহমুদউল্লাহর কণ্ঠেও।

“মানসিকভাবে এখন আমি আগের চেয়ে বেশি গোছানো। আরও বেশি ইতিবাচক এবং আক্রমণাত্মক। এই জিনিসটা আমাকে বেশি সাহায্য করেছে। আর ফিটনেস এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। ফিটনেস নিয়ে সচেতনতাও বেড়েছে। তবে এটা ধরে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।”

সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে মাহমুদউল্লাহ দলের অন্যতম স্তম্ভও। তবে অন্য চার সিনিয়র ক্রিকেটারের তুলনায় এই স্তম্ভ নিয়ে নাড়াচাড়াও হয়েছে বেশি। ব্যাটিং পজিশনের মতো তার ক্যারিয়ারটাও থিতু হয়েছে কমই। সবশেষ শ্রীলঙ্কা সফরে জায়গা হারিয়েছেন টেস্ট দলে। ওয়ানডে দল থেকে বাদ দেওয়ার আয়োজন শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে গেছেন। প্রতিদানও দিয়েছেন আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ভালো করে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অসাধারণ সেঞ্চুরি করে।

লড়াইয়ের তবু শেষ দেখছেন না মাহমুদউল্লাহ। সামনে দেখছেন আরও অনেক চ্যালেঞ্জ। তার কণ্ঠেও প্রত্যয় চ্যালেঞ্জ জয় করার।

“প্রতিটি দিনই চ্যালেঞ্জের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটাই এমন যে কখনোই থিতু হতে পারবেন না। যত দিন যাবে, আপনাকে নিয়ে প্রতিটি টিম ততই ওয়ার্কআউট করবে। দুর্বলতা বের করতে চাইবে। আমি মানসিকভাবে এখন অনেক গোছানো।। এটা তাই বুঝতে পারি যে, আমার কোথায় শক্তির জায়গা, কোথায় কাজ করতে হবে।”

“এগুলো নিয়ে সব সময় কাজ করি। প্রতিনিয়তই কাজ করতে হবে। আমি জানি কষ্টের কোনো বিকল্প নেই। এটা চালিয়ে যাওয়াটা জরুরি। অনেক উত্থান-পতন ছিল। সামনে চাইব যেন নিজের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশ দলের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারি।”

শেষ কথাগুলোই বলা যায় মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ারের সারকথা। হাজারও প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে টিকে রয়েছেন। পেতে শুরু করেছেন কষ্টের ফল। বাংলাদেশের ক্রিকেটও ভোগ করতে শুরু করেছে ফলের উপকারিতা। এবার আরও অনেক বছর মাহমুদউল্লাহর কাছ থেকে আরও অনেক কিছু পাওয়ার পালা।