নেতৃত্বের প্রথম দিন রেকর্ডে রাঙালেন রুট

দিনের শুরুতে লর্ডসে ঝলমলে রোদ। টস ভাগ্যেও হাসল ইংল্যান্ড। কিন্তু লাঞ্চ হতে হতেই ড্রেসিং রুমে রাজ্যের আঁধার। সেই আঁধার ঘরই পরে আলোর রোশনাইয়ে ভাসল একজনের ব্যাটে। এতদিন ছিলেন ইংলিশ ক্রিকেটের যুবরাজ, এখন তিনিই অধিপতি। রাজ্যাভিষেকের দিনটি জো রুট স্মরণীয় করে রাখলেন রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2017, 06:38 PM
Updated : 6 July 2017, 06:41 PM

ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে প্রথম দিনেই রুট অপরাজিত ১৮৪ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লর্ডস টেস্টের প্রথম দিনে ইংল্যান্ডের রান ৫ উইকেটে ৩৫৭।

টেস্ট অধিনায়কত্বের অভিষেকে ইংল্যান্ডের হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন আগে পাঁচজন। তবে রানে রুট ছাড়িয়ে গেছেন সেই পাঁচজনকেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে অ্যালেস্টার কুকের ১৭৩ ছিল আগের সর্বোচ্চ।

রুটের প্রতিপক্ষ অধিনায়কেরও এদিন নেতৃত্বের অভিষেক। তবে রুটের মত নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে নয়, ফাফ দু প্লেসির অনুপস্থিতিতে ডিন এলগার চালাচ্ছেন ঠেকার কাজ।

দিনের শুরুতেই এলগারের মুখেই ছিল হাসি। টস হেরে বোলিং পেলেও অসন্তুষ্ট ছিলেন না। বরং কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন প্রথম সকালের আর্দ্রতা। ভার্নন ফিল্যান্ডার পূরণ করেছিলেন অধিনায়কের মনের আশা।

চতুর্থ ওভারেই ফিল্যান্ডার ফিরিয়ে দেন ইংল্যান্ডের সফলতম ব্যাটসম্যান কুককে। তার পরের ওভারে উইকেট আরেকটি। যদিও এলবিডব্লিউ হওয়া কিটন জেনিংস বেঁচে যেতেন রিভিউ নিলেই। ফিল্যান্ডারের বলটি পিচ করেছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে, চলে যেত লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে।

জেনিংস রিভিউ না নেওয়া বাঁচলেন না, গ্যারি ব্যালান্স বাঁচলেন না নিয়েও। বোলার মর্নে মর্কেল। কাউন্টিতে রানের বন্যা বইয়ে দলে ফেরা ব্যালান্স ফিরলেন ২০ রানে।

লাঞ্চের আগে প্রান্ত বদলে ফিরে আবার ফিল্যান্ডারের ছোবল। ১০ রানে বিদায় জনি বেয়ারস্টো। ৭৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন কাঁপছে ইংল্যান্ড।

রুট ততক্ষণে থিতু হতে শুরু করেছেন। শুরুতেই যদিও বেঁচে গেছেন দুবার। ৫ রানে সীমানায় তার ক্যাচ নিতে পারেননি অতিরিক্ত ফিল্ডার মারক্রাম, ১৬ রানে গালিতে দুমিনি।

নড়বড়ে শুরুর পর ক্রমেই নিজেকে ফিরে পান রুট। আর বিপর্যয়ে নেমে প্রতি আক্রমণকে তো নিয়ম বানিয়ে ফেলেছেন বেন স্টোকস। ইংল্যান্ডের নতুন অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক মিলে দারুণ জুটিতে পাল্টে দেন ইনিংসের চেহারা।

৪৪ রানে স্টোকসকে অবশ্য বোল্ড করতে পেরেছিলেন মর্নে মর্কেল, কিন্তু ছিল বিশাল নো বল! দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে ইংল্যান্ড তেলে ১০০ রান।

চা-বিরতির পরপরই অবশ্য ভেঙেছে ১১৪ রানের জুটি। ক্রমাগত শর্ট বলের পরিকল্পনায় সফল হন কাগিসো রাবাদা, ৫৬ রানে ফেরেন স্টোকস। কে জানত, স্বস্তির উইকেটের পরই দক্ষিণ আফ্রিকার দুঃস্বপ্নের আরেক অধ্যায় হবে শুরু!

শেষ সেশনে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন রুট। সঙ্গে দারুণ খেলতে থাকেন মইন আলিও। রানের চাকা ঘুরতে থাতে তীব্র গতিতে।

১৫০ বলে শতরান স্পর্শ করেন রুট। ৫৪ টেস্টে তার দ্বাদশ সেঞ্চুরি। সেখান থেকে দেড়শ ছুঁতে লাগে মাত্র ৪৩ বল!

১৪৯ রানে অবশ্য স্টাম্পড হয়ে হাঁটা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মাহারাজের বলটিও ছিল নো!

নতুন জীবনেও রুটের ব্যাটে স্ট্রোকের ফোয়ারা। আরেক পাশে মইনের ব্যাটেও মিলল তাল। শেষ বেলায় দ্বিতীয় নতুন বলেও তাই হতাশ প্রোটিয়ারা।

দিনশেষে ২২৭ বলে ১৮৪ রানে অপরাজিত রুট। ২৬ চারের পাশে একটি ছক্কা। ইনিংসটির পথে গড়েছন লর্ডসে দ্রততম হাজার রানের রেকর্ড। ক্রিকেট তীর্থে ১৭ ইনিংসে হাজার ছুঁয়ে পেছনে ফেলেন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসকে (১৯ ইনিংস)।

১০৫ বলে ৬১ রানে অপরাজিত মইন।

অবিচ্ছন্ন ষষ্ঠ উইকেটে ওভারপ্রতি পাচেঁর বেশি রান তুলে দুজনে যোগ করেছেন ১৬৭ রান। শেষ সেশনেই এসেছে ১৭৫ রান! 

রুটের সামনে এখন আরও বড় কীর্তির হাতছানি। নেতৃত্বে অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি আছে টেস্ট ইতিহাসে মাত্র দুজনের, গ্রাহাম ডাউলিং (২৩৯) ও শিবনারায়ণ চন্দরপল (২০৩*)। রুট হতে পারেন তৃতীয়। ডাউলিংয়ের রান ছাড়িয়ে উঠতে পারেন শীর্ষে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ৮৭ ওভারে ৩৫৭/৫ (কুক ৩, জেনিংস ৮, ব্যালান্স ২০, রুট ১৮৪*, বেয়ারস্টো ১০, স্টোকস ৫৬, মইন ৬১*; মর্কেল ১/৬৪, ফিল্যান্ডার ৩/৪৬, রাবাদা ১/৯৪, মহারাজ ০/১০৭, ডি ব্রুইন ০/৩০, বাভুমা ০/১৪)।