স্মিথ-ওয়ার্নারদের ‘বেকার জীবন’ শুরু

শেষ দিনেও হলো না সমঝোতা। অনুমিতভাবেই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) প্রস্তাবে রাজি হননি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা। শনিবার থেকে তাই কার্যত বেকার হয়ে গেলেন অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ক্রিকেটাররা থেকে শুরু করে দুইশর বেশি ক্রিকেটার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2017, 06:21 AM
Updated : 1 July 2017, 10:46 AM

নিকট অতীতের সবচেয়ে বড় এই সংকটে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের নিকট ভবিষ্যত। সামনেই ‘এ’ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর, অগাস্টে বাংলাদেশ সফরের টেস্ট দল ঘোষণা হয়ে গেছে আগেই। চলতি মৌসুমে আছে অস্ট্রেলিয়ান মৌসুমেরর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ অ্যাশেজ। আপাতত সবই এখন অশ্চিয়তায়।

বিকল্প দল দিয়ে কাজ চালানোর অবস্থাও এই সঙ্কটে নেই। কারণ শুধু জাতীয় ক্রিকেটাররাই এই সঙ্কটের অংশ নন। জাতীয় ও ঘরোয়া মিলিয়ে প্রায় ২৩০ জন ক্রিকেটার এই প্রক্রিয়ার অংশ। শনিবার থেকে তারা কেউ আর সিএর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নন।

সঙ্কটের শুরুও মূলত ওই ঘরোয়া ক্রিকেটারদের নিয়েই। দুই দশক ধরে চলে আসা বেতন কাঠামো অনুযায়ী বোর্ডের লভ্যাংশের একটা অংশ আনুপাতিক হারে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে দেওয়া হয় চুক্তিবদ্ধ জাতীয় ও ঘরোয়া ক্রিকেটারদের। তবে এবার নতুন কাঠামো বদলে নতুন প্রস্তাব দেয় সিএ। লভ্যাংশের একটি অংশ ভাগ করে দেওয়া হবে শুধু কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা পুরুষ ও নারী ক্রিকেটারদের, যেটির সংখ্যা হবে ২০ জন।

বোর্ডের মতে, ঘরোয়া ক্রিকেটাররা যেহেতু বোর্ডের আয়ে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারে না, তাই লভ্যাংশের ভাগীদারও তারা হতে পারে না। ঘরোয়া ক্রিকেটারদের বদলে ওই টাকা বোর্ড খরচ করতে চায় তৃণমূল ক্রিকেটে। স্মিথ-ওয়ার্নারদের আপত্তির জায়গা এখানেই। তাদের দৃষ্টিতে, এটি ঘরোয়া ক্রিকেটারদের জন্য অপমানজনক। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে ঘরোয়া ক্রিকেটের অবদানকে খাটো করা হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন তাই ফিরিয়ে দিয়েছে এই প্রস্তাব। এর মধ্যে চলেছে আলোচনা। হুমকি-পাল্টা হুমকি চলেছে দুই তরফ থেকেই। মূল জায়গাটা ঠিক রেখে আরেকটা বিকল্প প্রস্তাব করেছিল বোর্ড। কিন্তু মূল দাবিতে অটল ক্রিকেটাররা সেটিও ফিরিয়ে দিয়েছে।

চলমান সঙ্কটে ক্রিকেটারদের অনেকটা মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন ডেডিভ ওয়ার্নার। হুমকি দিয়ে রেখেছেন, সমঝোতা না হলে বিভিন্ন দেশের লিগে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা। অ্যাশেজেও দল পাবে না অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে বোর্ডের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, অনুমতি নেই এমন লিগে খেললে অন্তত ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হতে পারে ক্রিকেটারদের।

বোর্ডের তরফ থেকে এটিও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিছুদিন পর সমঝোতা হলেও ‘বেকার’ থাকা সময়টার জন্য তখন আর পারিশ্রমিক দেওয়া হবে না। বেতন-ভাতায় প্রতি ১৫ দিনে ১০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বেশি খরচ হয় বোর্ডের। সেই টাকাটা তারা খরচ করবে তৃণমূল ক্রিকেটে।

ক্রিকেটাররা তবু অনড়। নিজেদের ক্ষতি মেনেও ঘরোয়া ক্রিকেটারদের বঞ্চিত করতে চান না তারা। চুক্তির শেষ দিনে পেস বোলার জস হেইজেলউড জানিয়ে দিয়েছেন, ছাড় দেবেন না ক্রিকেটাররা।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য সোমবার ব্রিজবেনে ক্যাম্পে যোগ দেওয়া কথা ‘এ’ দলে নির্বাচিত ক্রিকেটারদের। আপাতত সেটি গেছে ঝুলে। নিজেদের ভবিষ্যত করণীয় ঠিক করতে রোববার সিডনিতে সভায় বসছেন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী অ্যালেস্টার নিকলসনসহ থাকবেন জাতীয় ও ঘরোয়া ক্রিকেটারদের অনেকেই।

শুধু ক্রিকেটারদের বেকার হয়ে পড়াই নয়, নানা সিরিজ নিয়ে অনিশ্চয়তায় টিভি সম্প্রচার, স্পন্সরশিপ চুক্তি, সব কিছুই নিয়েই এখন ভজকট বেধেছে। সবমিলিয়ে পেশাদার হিসেবে বরাবরের আদর্শ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট এখন গভীর সঙ্কটে।