চ্যাম্পিয়ন জামানের গল্প

এলেন, দেখলেন, জয় করলেন- একটু দেরিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসা ফখর জামানের গল্পটা এমনই। অভিষেকের পর প্রতি ম্যাচে ছাড়িয়ে গেছেন নিজের আগের সেরাকে। তার হাত ধরেই প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতল পাকিস্তান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2017, 03:47 PM
Updated : 19 June 2017, 04:11 PM

ভারতের কাছে বিধ্বস্ত হওয়া প্রথম ম্যাচে খেলেননি জামান। সেই ম্যাচে আহমেদ শেহজাদের ব্যর্থতায় সুযোগ মেলে পরের ম্যাচে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা দলের বিপক্ষে ৩১ রানের ছোট্ট ইনিংসে আভাস দিয়েছিলেন কি করতে পারেন তিনি।

‘কোয়ার্টার-ফাইনাল’-এ পরিণত হওয়া শ্রীলঙ্কা ম্যাচে পান ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতকের দেখা। ফিরেন ৫০ স্পর্শ করে। টুর্নামেন্টের ফেভারিট ও স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আউট হন ৫৭ রানে, এই রান করার পথে আজহার আলির সঙ্গে গড়েন শতরানের জুটি।

ফাইনালে আরও উজ্জ্বল জামান। নিজের চতুর্থ ম্যাচেই পেয়েছেন শতক। টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছেছেন তিন অঙ্কে- যার দেখা এখন পর্যন্ত বিরাট কোহলির মতো ব্যাটসম্যান পাননি।

আজহারের সঙ্গে আরেকটি শতকে গড়ে দিয়েছেন বিশাল সংগ্রহের ভিত। ১১৪ রানের চমৎকার ইনিংসে জিতেছেন ফাইনালে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। এক সময়ে ছিলেন নেভিতে, সতীর্থরা ডাকেন ‘ফৌজি’ বলে। কতটা লড়াকু বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান, মাঠে রেখেছেন তার প্রমাণ।

ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড়- ১৮০ রানের জয়ে বড় অবদান ২৭ বছর বয়সী জামানের পরিণত ইনিংসের। বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের ইনিংসে মুগ্ধ প্রতিপক্ষের অধিনায়ক। ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন, বিস্ফোরক ঠেকানোর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি।

পাকিস্তানের বোলিং বরাবরই শক্তিশালী। কিন্তু ব্যাটিং খুব ভোগাচ্ছিল তাদের। তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা টপ অর্ডারে। বহু বছর ধরে থিতু ওপেনিং জুটি খুঁজছে পাকিস্তান। আপাতত তার সমাধান হয়ে এসেছেন জামান।

উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে অনেকটাই জমে গেছেন আজহার। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান একটু সময় নিয়ে খেলতে পছন্দ করেন। রানের চাকাটা সচল রাখতে বিস্ফোরক এক ব্যাটসম্যানের দরকার ছিল পাকিস্তানের। জামানের মধ্যে তা পেয়েও গেছে সরফরাজ আহমেদের দল।

জামান যতক্ষণ ক্রিজে থাকেন টপ অর্ডারের অন্য দুই ব্যাটসম্যান আজহার ও বাবর আজম  সময় নিয়ে খেলতে পারেন। প্রতিপক্ষের বোলিং এলোমেলো করার কাজটা বাঁহাতি ব্যাটসম্যানই নিজের কাঁধে তুলে দেন। ভারতের বিপক্ষে যেমন বিধ্বস্ত করে দিলেন অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে।

ভারতের কাছে প্রথম ম্যাচে হারের পর পাকিস্তানের যে ঘুরে দাঁড়ানো তাতে সামনে থেকে পথ দেখিয়েছেন জামান। তিনিই ছিলেন ‘এক্স ফ্যাক্টর’ যার অভাব অনুভব করে আসছিল মিকি আর্থারের দল।

খাইবার পাখতোয়ানখার মারদান জেলার ছোট্ট শহর কাতলাঙে জন্ম জামানের। ১৬ বছর বয়সে চলে আসেন করাচিতে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে ২০১২ সালে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট শুরু করেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বরাবরই সফল জামানের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় গত মার্চে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি দিয়ে।

২০১৬ সালে পাকিস্তানের ওয়ানডে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন জামান, এই বছরে চতুর্থ। পিএসএলের এবারের আসরে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে দারুণ খেলে নিজের দাবিটা আরও জোরালো করে তুলেন তিনি। তার সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ ছিলেন অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। 

আগ্রাসী জামানের ব্যাটিং স্টাইলে মুগ্ধ ভক্তরা। কোহলির ভাষায় তার ইনিংসে ‘৮০ শতাংশ শট’ ঝুঁকিতে ভরা। নিজের দিনে তিনি গুঁড়িয়ে দিতে পারেন যেকোনো দলকে। ঠিক এই ধরনের কাউকেই শিরোপা জিততে দরকার ছিল পাকিস্তানের।