বিশ্বের সবচেয়ে নিখুঁত বা ভয়ঙ্করতম ব্যাটসম্যানকে বোলিং করার চ্যালেঞ্জটাও অনায়াসে নিতে পারেন মুস্তাফিজ। কিন্তু ক্যামেরা-রেকর্ডারের মুখোমুখি হতে তার বরাবরই আপত্তি। বিষয়টি ঠিক উপভোগ করেন না। সংবাদকর্মীরাও তাকে পাওয়ার আবদার খুব বেশি করেন না।
তবে প্রতিপক্ষ যখন ভারত, তখন মুস্তাফিজের ভাবনা না জানলে কী হয়! এই ভারতের বিপক্ষেই তার সাড়া জাগানো আবির্ভাব। প্রথম দুই ওয়ানডেতেই ১১ উইকেট নিয়ে গড়েছিলেন ইতিহাস।
২০১৫ সালে সেই সিরিজে ৩ ম্যাচে ১৩ উইকেট নেওয়ার পর এই প্রথম ওয়ানডেতে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছেন মুস্তাফিজ। তবে এই সময়ে দুবার খেলেছেন টি-টোয়েন্টি। দুটি অভিজ্ঞতাই ছিল হতাশার।
২০১৬ এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে ৪ ওভারে দিয়েছিলেন ৪০ রান। কদিন পর টি-টোয়োন্টি বিশ্বকাপে ৪ ওভারে ৩৪ রানে দুটি উইকেট নিতে পেরেছিলেন মুস্তাফিজ। তবে সেই ম্যাচ তো বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডিগুলো একটির।
বেঙ্গালুরুর সেই ম্যাচে শেষের দিকে ভজকট পাকিয়ে হারে বাংলাদেশ। শেষ বলে উইকেটেই ছিলেন মুস্তাফিজ, স্ট্রাইকে ছিলেন শুভাগত হোম। শেষ বলে একটি রান নিতে পারলেও ম্যাচ টাই করতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটে-বলে করতে পারেননি শুভাগত। দুজনে নিতে পারেননি একটি ‘বাই’ রানও। নন-স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে ছুটতে একটু সময় নিয়েছিলেন মুস্তাফিজ, স্ট্রাইকে থাকা শুভাগতও ক্রিজ থকে বের হন একটু দেরিতে।
সেই ম্যাচ এখনও পোড়ায় অনেককে। তবে মুস্তাফিজকে বলতেই যেন আকাশ থেকে পড়লেন, “কোন ম্যাচ!” মনে করিয়ে দেওয়ার পরও ভাবান্তর নেই, “মনে নেই। মনে রাখিনি।”
অতীত তার মনে নেই, আপাতত মন জুড়ে সেমি-ফাইনাল। জানালেন উপহার দিতে চান ভালো কিছু।
প্রতিপক্ষ যখন ভারত, ২০১৫ সালের সেই সিরিজের পর প্রথম ওয়ানডেতে মুস্তাফিজের কাছে প্রত্যাশাও বেশি থাকবে অনেকের। তবে ভারত বলে আলাদা কিছু ভাবছেন না বাঁহাতি পেসার, নিজেকে উজার করে দিতে চান সবসময়ের মতোই।
“বিশ্বাস সবসময়ই করি। আমি সবসময় যেটা ভাবি, সেটা করার চেষ্টা করি। বোলিংয়ে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি সবাই ভালো করতে পারি, ভালো কিছুই হবে।”
এই টুর্নামেন্টে এখনও অবশ্য দারুণ কিছু করতে পারেননি মুস্তাফিজ। জানালেন উইকেট একটি বড় কারণ।
“শেখার শেষ নেই। আমার কাটার দেশের উইকেটে ভালো ধরে। এখানে অত বেশি হচ্ছে না। তবু চেষ্টা করছি ভালো করার।”
মাশরাফি বিন মুর্তজাও কদিন আগে বলেছেন, ইংল্যান্ডের উইকেটে বোলিংয়ের ধরনটা শিখছেন মুস্তাফিজ। অধিনায়কের বিশ্বাস, ২০১৯ বিশ্বকাপে এবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে মুস্তাফিজের।
তবে দারুণ কিছুর সুযোগ আছে এবারও। মুস্তাফিজ আরেকবার জ্বলে উঠলে, ভারতকে হারাতে পারলেই চ্যাম্পিয়্স ট্রফির ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ। মাঠে আসা সমর্থকদের, দেশের মানুষকে দারুণ কিছুই উপহার দিতে চান মুস্তাফিজ।
“যারা আসে মাঠে সবাই দেশের খেলা বলেই দেখতে আসে। আমাদেরকে ভালোবাসে বলেই আসে। আমরা চেষ্টা করব ভালোবাসার সম্মান রাখার জন্য, দেশের মানুষের সম্মান রাখার জন্য।”