কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্সে সোমবার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তিন উইকেটে জিতেছে পাকিস্তান। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.২ ওভারে ২৩৬ করে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। জবাবে ৪৪.৫ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় পাকিস্তান।
নুয়ান প্রদিপ-লাসিথ মালিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে একসময় জয়ের সম্ভাবনা জোরালো হয়েছিল শ্রীলঙ্কার। কিন্তু চরম বাজে ফিল্ডিং ও সহজ ক্যাচ ছাড়ায় বলতে গেলে জয়টা হাতের মুঠো থেকে ফেলে দেয় তারা।
এক সরফরাজই পরপর দুই ওভারে 'জীবন' পান। ৩৯তম ওভারের তৃতীয় বলে মিডঅনে সহজ ক্যাচ ছাড়েন পেরেরা। ওই সময় তার রান ছিল ৩৮। আর ৪১তম ওভারের প্রথম বলে ডিপ স্কয়ারে ছুটে এসে ধরতে ব্যর্থ হন বদলি ফিল্ডার সেকুগে প্রসন্ন।
শেষ পর্যন্ত এই সরফরাজই নয় নম্বরে নামা মোহাম্মদ আমিরের সঙ্গে ৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে রোমাঞ্চকর জয় নিশ্চিত করেন। প্রথম ম্যাচে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে বিশাল ব্যবধানে হারের পর ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা দুই জয়ে শেষ চারের উঠলো দলটি।
সরফরাজ ৬১ ও আমির ২৮ রান করে অপরাজিত থাকেন।
দুই অঙ্কে গেলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি বাবর আজম; কিছুক্ষণ পর প্রদীপের বলেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। পরের ওভারেই এক রান করে ফিরে যান মোহাম্মদ হাফিজ।
আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আজহার আলীও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ; ৫০ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৪ রান করেন তিনি। লাসিথ মালিঙ্গার বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিকও ফিরে গেলে ব্যাকফুটে চলে যায় পাকিস্তান।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে একসময় পাকিস্তানের স্কোর ছিল ২৯.৫ ওভারে ১৬২/৭। ওখান থেকেই রোমাঞ্চকর জয়ের পথে চলা শুরু সরফরাজ-আমির জুটির।
৭৯ বলে ৬১ রান করার পথে পাঁচটি চার মারেন সরফরাজ। অধিনায়ককে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া আমিরের ৪৩ বলের ইনিংসে একটি বাউন্ডারি।
এর আগে শ্রীলঙ্কা ইনিংসের প্রথমদিকে উইকেট হারালেও নিরোশান ডিকভেলা ও কুশল মেন্ডিসের ব্যাটে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিল। রান রেট ছয়ের কাছাকাছি রেখে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৬ রান যোগ করেন তারা।
তিন বলে দুই উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে প্রতিরোধ গড়েন ডিকভেলা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। রান তোলার গতি কিছুটা কম হলেও ৭৮ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তারা। কিন্তু তখনই বড় ধাক্কাটা দেন মোহাম্মদ আমির ও জুনায়েদ খান; পরপর চার ওভারে একটি করে চার উইকেট তুলে নেন দুজন।
আমিরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন ৫৪ বলে ৩৯ রান করা অধিনায়ক ম্যাথিউস। জুনায়েদের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা।
পরের ওভারে ফিরে সবচেয়ে মূল্যবান উইকেটটি তুলে নেন আমির; ডিকভেলার দারুণ ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদ। ৮৬ বলে ৪টি চারে ৭৩ রান করেন এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। আর জুনায়েদের তৃতীয় শিকার থিসারা পেরেরা।
৩১ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার স্কোর ছিল ১৬১/৩। ৬ রানে চার উইকেট হারিয়ে তাদের ইনিংস দাঁড়ায় ৩৫ ওভারে ১৬৭/৭।
জুনায়েদ ও হাসান ৩টি করে উইকেট নেন। আমির ও ফাহিম নেন দুটি করে।
আগামী বুধবার প্রথম সেমি-ফাইনালে টুর্নামেন্টের স্বাগতিক ও এখন পর্যন্ত অপরাজিত দল ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। এই মাঠেই হবে দুদলের ফাইনালে ওঠার লড়াইটি।
পরদিন বার্মিংহামের এজবাস্টনে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হবে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত ও ১১ বছর পর এই প্রতিযোগিতায় ফেরা বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ৪৯.২ ওভারে ২৩৬ (ডিকভেলা ৭৩, গুনাথিলাকা ১৩, মেন্ডিস ২৭, চান্দিমাল ০, ম্যাথিউস ৩৯, সিলভা ১, গুনারত্নে ২৭, পেরেরা ১, লাকমল ২৬, মালিঙ্গা ৯*; জুনায়েদ ৩/৪০, হাসান ৩/৪৩, আমির ২/৫৩, ফাহিম ২/৩৭)
পাকিস্তান: ৪৪.৫ ওভারে ২৩৭/৭ (আজহার ৩৪, জামান ৫০, বাবর ১০, হাফিজ ১, শোয়েব ১১, সরফরাজ ৬১*, ইমাদ ৪, ফাহিম ১৫, আমির ২৮*; প্রদিপ ৩/৬০, পেরেরা ১/৪৩, লাকমল ১/৪৮, মালিঙ্গা ১/৫২)
ফল: পাকিস্তান ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা: সরফরাজ আহমেদ (পাকিস্তান)