হিসেবী ব্যাটিংয়ে দ. আফ্রিকাকে হারাল পাকিস্তান

শুরু থেকেই আকাশ আর ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে সম্ভাব্য লক্ষ্যে এক চোখ রাখা পাকিস্তান পেয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম জয়। ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৯ রানে হারিয়েছে সরফরাজ আহমেদের দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2017, 04:35 PM
Updated : 8 June 2017, 03:47 AM

ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচে বিধ্বস্ত হওয়া পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই জয় দিয়ে। উন্নতি করেছে বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে। ব্যাটিংও এদিন ছিল পরিণত।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লক্ষ্যটা হাতের নাগালেই রেখেছিলেন হাসান আলি, ইমাদ ওয়াসিমরা। অভিষিক্ত ফখর জামানের বিস্ফোরক ইনিংসে ভালো সূচনা পাওয়া পাকিস্তানের জয়ে বড় অবদান রয়েছে বাবর আজম ও শোয়েব মালিকেরও।

২২০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২৭ ওভারে পাকিস্তান ৩ উইকেটে করে ১১৯ রান। সে সময় ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে দলটির প্রয়োজন ছিল ১০১ রান।

কাগিসো রাবাদা ও ওয়েইন পার্নেলকে সহজেই সামলানো পাকিস্তানকে চাপে ফেলেন মর্নে মরকেল। ৩ বলের মধ্যে ফেরান ৬টি চারে ৩১ রান করা জামান ও আজহার আলিকে।

শুরুতে বেশ সময় নেন বাবর ও মোহাম্মদ হাফিজ। মেডেন দেন টানা তিন ওভার, ডট ২০ বল। তবে রান পাওয়ার পর আর পিছনে তাকাতে হয়রি তাদের।

হাফিজের বিদায়ে আশা জাগে দক্ষিণ আফ্রিকার। তবে বাবর ও মালিকের হিসেবী ব্যাটিংয়ে অনেকটা নিরাপদে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। হালকা বৃষ্টির মাঝেই খেলা হচ্ছিল, সেই সময়ে কোনো ঝুঁকিই নেননি দুই ব্যাটসম্যান।

 

বৃষ্টি একটু ভারী হয়ে গেলে মাঠ ছাড়ে দুই দল। এরপর আর খেলা সম্ভব হয়নি।

১৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার মরকেল। আইসিসি ওয়ানডে র্যা ঙ্কিংয়ের শীর্ষ দলটির আর কেউ উইকেট নিতে পারেননি।

শক্তির বিচারে দক্ষিণ আফ্রিকা ঢের এগিয়ে। আইসিসির র্যা ঙ্কিংয়ের হিসেবেও এই আসরের শীর্ষ আর তলানীর দলের খেলা। তবে মাঠে তার কোনো ছাপ ছিল না। সেখানে আগের ম্যাচে বড় হারের ধাক্কা ভুলে দাপুটে ক্রিকেট খেলেছে পাকিস্তান।

তাদের জন্য সহায়ক হয়েছে থিতু হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের ফেরা।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এলেই যেন ছন্দ হারিয়ে ফেলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। এবার অবস্থা আরও বেশি খারাপ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ রানে আউট হওয়ার পর পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম গোল্ডেন ডাকের স্বাদ। নিজের সবচেয়ে মন্থর অর্ধশতকে দলকে দুইশ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দিয়েছেন ডেভিড মিলার।

এজবাস্টনে বুধবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ২১৯ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

খরুচে ওয়াহাব রিয়াজের জায়গায় জুনায়েদ ফেরায় আরও ধার বেড়েছে পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের। মোহাম্মদ আমির ও জুনায়েদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে শুরু রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলাকে।

নবম ওভারে আক্রমণে এসেই ভীষণ প্রয়োজনীয় ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দেন ওয়াসিম। আমলাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ৪০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন বাঁহাতি এই স্পিনার।

বোলার হাফিজের সঙ্গে ‘লম্বা’ আলোচনার পর রিভিউ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সরফরাজ। নিলে ২৯ রানেই ফিরতে হত ডি কককে। বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ‘জীবন’ কাজে লাগাতে পারেননি। হাফিজের পরের ওভারেই বিদায় নেন এলবিডব্লিউ হয়ে।

 

সেই ২০০৭ সালে পাঁচবার শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। এরপর ব্যাপারটি ভুলতে বসেছিলেন বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর আর ওয়ানডেতে রানের খাতা খোলার আগে ফেরেননি। এবার ওয়াসিম তাকে ফেরালেন প্রথম বলেই।

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং গভীরতা যথেষ্ট। ৬১ রানের মধ্যে আমলা, ডি কক, ডি ভিলিয়ার্সকে হারালেও বড় সংগ্রহ এনে দেওয়ার সামর্থ্য অন্য ব্যাটসম্যানদের ছিল। সেই কাজটি অসম্ভব করে তুলেন ম্যাচ সেরা হাসান।

তার তিন উইকেটের প্রথমটি অবশ্য সাদামাটা বলে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে বোল্ড ফাফ দু প্লেসি। চমৎকার দুই বলে ডানহাতি পেসার ফেরান জেপি দুমিনি ও পার্নেলকে।

পরের ওভারে মিলার ঠেকিয়ে দেন হাসানের হ্যাটট্রিক। মারকুটে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সেই ওভারটি খেলেন মেডেন। ২৯ ওভারে ১১৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া দলটিকে মোটামুটি একটি পুঁজি দিতে শেষ পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন তিনি।

মরিসকে খানিকটা সঙ্গ দেওয়া ক্রিস মরিস আর কাগিসো রাবাদাকে ফেরান জুনায়েদ। মরিসের সঙ্গে ৪৭ আর রাবাদার সঙ্গে ৪৮ রানের দুটি জুটিতে দলের সংগ্রহ দুইশ পার করেন মিলার।

৮৩ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া মিলার শেষ পর্যন্ত তিনটি ছক্কায় ১০৪ বলে অপরাজিত থাকেন ৭৫ রানে। তার একমাত্র চার আসে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শেষ বলে।

২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সেরা বোলার হাসান। দুটি করে উইকেট নেন ওয়াসিম ও জুনায়েদ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ২১৯/৮ (ডি কক ৩৩, আমলা ১৬, দু প্লেসি ২৬, ডি ভিলিয়ার্স ০, মিলার ৭৫*, দুমিনি ৮, পার্নেল ০, মরিস ২৮, রাবাদা ২৬, মর্কেল০*; আমির ০/৫০, জুনায়েদ ২/৫৩, ওয়াসিম ২/২০, হাফিজ ১/৫১, হাসান ৩/২৪, শাদাব ০/২০)

পাকিস্তান: (লক্ষ্য ২৭ ওভারে ১০১) ২৭ ওভারে ১১৯/৩ (আজহার ৯, জামান ৩১, বাবর ৩১*, হাফিজ ২৬, মালিক ১৬*; রাবাদা ০/৩৬, পার্নেল ০/২৫, মরকেল ৩/১৮, মরিস ০/২২, তাহির ০/১৬)

ফল: ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে পাকিস্তান ১৯ রানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: হাসান আলি