তামিমের শরীরে চোট, মনে আক্ষেপ

টিম মিটিং তখন শেষ, গা গরমের ফুটবলও। নেটে সবার আগে গেলেন ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমান। বাকিরাও মাঠে। কিন্ত ট্র্যাকসুটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে আয়েশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তামিম ইকবাল। কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে যেতেই বললেন, “আমার তো আজকে প্র্যাকটিস নেই!”

ক্রীড়া প্রতিবেদক কার্ডিফ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2017, 03:06 PM
Updated : 7 June 2017, 03:06 PM

নতুন ভেন্যুতে এসে প্র্যাকটিস নেই! জার্সি, ট্র্যাকসুট উঁচিয়ে শরীরের ডান পাশটা দেখালেন তামিম। পেটের কাছে কালো হয়ে আছে জায়গাটা। অস্ট্রেলিয়া মাচের স্মৃতিচিহ্ন!

“কামিন্সের বলটা যে লেগেছিল, ১৪৮-১৫০ কিমি গতির বল। লাগার পর তো মনে হয়েছিল, ভেঙেই গেছে বুঝি!”

আধুনিক ক্রিকেটে বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানরাই সুরক্ষায় একদম ‘প্যাকেট’ হয়েই নামে। তবে তামিম একটু ব্যতিক্রম। সাধারণত ‘চেস্ট গার্ড’ পরেন না। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সদের মতো গতিময় বোলারকে খেলার সময়ও পরেননি। শরীরে তাই বয়ে বেড়াচ্ছেন কামিন্সের ছোবল।

খুব বাজে কিছু অবশ্য নয়। সতর্কতার জন্যই এদিন বিশ্রাম। বরং যে ছোবল দেখা যাচ্ছে না, সেটির চোটই বেশি গভীর। মনের চোট!

শরীরে আঘাত করেও কামিন্স টলাতে পারেননি, তার চেয়ে অনেক নিরীহ এক বলে মনে গভীর ক্ষত করে দিয়েছেন মিচেল স্টার্ক। লেগ স্টাম্পে শর্ট বল ছিল। এক পা উঁচিয়ে ক্যারিবিয়ান পুল খেলেছিলেন তামিম। তার ক্যারিয়ারে, এই টুর্নামেন্টে, ওই ম্যাচেও এই শট খেলছেন দারুণ সাফল্যে। কিন্তু ওই শটে একটু টাইমিংয়ের গড়বড়ে উঠল ক্যাচ। ৯৫ রানে আউট!

নার্ভাস নাইন্টিজের শিকার আগেও হয়েছেন। ঠিক ৯৫ রানেই আউট হয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আগেও আরও তিনবার। তবে এবারের আক্ষেপটা একটু বেশি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো আসরে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি হলো না ৫ রানের জন্য। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরির সুযোগও তো নিত্য আসে না! তামিম আক্ষেপটা লুকাচ্ছেন না।

“আক্ষেপ তো অবশ্যই আছে। কে না চায় পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি পেতে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরিও দারুণ। আগেও এমন অনেক সময় এসেছে ৮০, ৯০ এর পরে আমি উইকেট দিয়ে এসেছি। তবে ওইদিন ওই শটে বেশি কিছু করার ছিল না। ইনিংস জুড়ে ওই শট খেলেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত টপ এজ হয়ে গেল। তবে দলের জন্য অবদান রাখতে পেরে আমি খুশি। দল জিতলে আরও ভাল লাগত।”

শুধু নিজের সেঞ্চুরি হাতছাড়ায় নয়, আক্ষেপ আছে দলের পারফরম্যান্স নিয়েও। ওভালে দুটি ম্যাচেই গ্যালারিতে ছিল বাংলাদেশের জন্য দারুণ সমর্থন। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রায় অর্ধেক দর্শক ছিল বাংলাদেশের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তো গ্যালারি ভরা ছিল বাংলাদেশের সমর্থকেই। তাদের কিছু উপহার দিতে না পারার দায়টা দলের হয়ে নিচ্ছেন তামিম।

“ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলার অন্যরকম অনুভুতি। আমরা দুই ম্যাচেই দেখেছি সবচেয়ে বেশি উল্লাস আমাদের জন্যই ছিল। কিন্তু আমরা তাদের ওইরকম ক্রিকেট উপহার দিতে পারিনি। সব দিক থেকেই সব ঠিক ছিল, কিন্তু আমরাই ভাল ক্রিকেট খেলতে পারিনি।”

তামিমদের সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। কার্ডিফে হয়ত বাংলাদেশের দর্শক অত বেশি থাকবে না, তবে বাংলাদেশ জিততে পারলে সেটি শুধু মাঠের সমর্থকদের নয়, বিশ্ব জুড়ে বাংলাদেশের সবার জন্যই হবে দারুণ উপহার!