নিউ জিল্যান্ডের হয়ে লড়াই করেছেন কেবল অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। তার বিদায়ের পর হয়নি কোনো জুটি, প্রতিরোধ গড়তে পারেননি কেউ।
টানা দুই জয়ে ইংল্যান্ডে পয়েন্ট চার। দুই পরিত্যক্ত ম্যাচ থেকে দুই পয়েন্ট পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার সেমি-ফাইনাল ভাগ্য নিজেদের হাতেই। আগামী শনিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেই শেষ চার নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের।
তার আগের দিন বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে নিউ জিল্যান্ড। সেই ম্যাচে জয়ী দলের শেষ চারে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তার জন্য গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে হবে ইংল্যান্ডকে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১০ রান তোলে স্বাগতিকরা। প্রথমে ব্যাট করে এ নিয়ে শেষ ১৩ ম্যাচে ১১ বার তিনশ ছাড়াল দলটি।
তিন বল আগে ইংল্যান্ডকে গুটিয়ে দেওয়া নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস থেমেছে ৪৪ ওভার ৩ বলে, ২২৩ রানে।
লুক রনকির গোল্ডেন ডাকে রান তাড়ায় শুরুতেই ধাক্কা খায় নিউ জিল্যান্ড। মার্টিন গাপটিলের সঙ্গে ৬২ আর রস টেইলরের সঙ্গে ৯৫ রানের জুটিতে দলকে কক্ষপথেই রাখেন উইলিয়ামসন।
এই ম্যাচের আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ৫ ইনিংসে ৯৩.৭৫ গড়ে রান সংগ্রহ করা টেইলরকে সংগ্রাম করতে হচ্ছিল রানের জন্য। তবে সাবলীল ছিলেন উইলিয়ামসন। নিজের জোনে বল পেলেই আদায় করে নিচ্ছিলেন বাউন্ডারি।
৯৮ বলে ৮টি চারে ৮৭ রান করা উইলিয়ামসনকে আউট করে নিউ জিল্যান্ডকে সবচেয়ে ধাক্কাটা দেন মার্ক উড। অধিনায়কের বিদায় দিয়ে যে ধস নামে তাতে বাধ দিতে পারেননি কেউই। মাত্র ৬৫ রানে শেষ ৮ উইকেট হারায় নিউ জিল্যান্ড।
টেইলর ফিরেন ৩৯ রান করে। জিমি নিশাম, কোরি অ্যান্ডারসন, অ্যাডাম মিল্ন আর টিম সাউদিকে বিদায় করে দলের বড় জয় নিশ্চিত করেন প্লানকেট। ৫৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনিই দলের সেরা বোলার।
ম্যাচের দুটি মেডেন ওভারই করেন বল। ৮ ওভারে ৩১ রান দিয়ে নেন রনকি আর টেইলরের উইকেট। তাতে জিতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
দিন শেষে নায়ক পেসার বল। তবে ম্যাচের প্রথম ভাগে রাজত্ব করেছেন ব্যাটসম্যানরাই। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্সে মঙ্গলবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে অষ্টম ওভারে ভাঙে ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি। ছন্দ হারিয়ে ফেলা জেসন রয়কে বোল্ড করেন মিল্ন।
নতুন বলে খুব একটা কার্যকর ছিলেন না সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট। মিল্নের বাড়তি গতি কিছুটা ভুগিয়েছে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের। ছন্দে থাকা হেলস-রুটের ৭১ রানের জুটিতে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
বিপজ্জনক হয়ে উঠা এই জুটিও ভাঙেন মিল্ন। ৬০ বলে তিনটি চার আর একটি ছক্কায় অর্ধশতকে পৌঁছেই হেলস পরের বলে উড়ান এই পেসারকে। মিল্ন প্রতিশোধ নেন পরের বলেই, এলোমেলো করে দেন হেলসের স্টাম্প।
অ্যান্ডারসনের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে দ্রুত ফিরেন ওয়েন মর্গ্যান। বেন স্টোকসের সঙ্গে ৫৪ রানের আরেকটি জুটিতে দলকে কক্ষপথে ফেরান বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ম্যাচে শতক করা রুট।
ইংলিশ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এবার বেশিদূরে যেতে পারেননি। ফিরেন অলরাউন্ডার অ্যান্ডারসনের বল স্টাম্পে টেনে এনে। ৬৫ বলে খেলা রুটের ৬৪ রানের ইনিংসটি গড়া ৪টি চার ও দুটি ছক্কায়।
নতুন বলে খুব একটা কিছু করতে না পারা ট্রেন্ট বোল্ট বিদায় করেন বিপজ্জনক হয়ে উঠা স্টোকসকে (৪৮)। বাঁহাতি পেসারের বলে ইংলিশ অলরাউন্ডারের আপার কাট যায় থার্ড ম্যানে, মিল্নের হাতে।
দুই স্পিনিং অলরাউন্ডার খুব একটা সঙ্গ দিতে পারেননি বাটলারকে। মইন ফিরেন অ্যান্ডারসনের বলে ক্যাচ দিয়ে। বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের বলে এলবিডব্লিউ হন চোট পাওয়া ক্রিস ওকসের জায়গায় একাদশে ফেরা রশিদ।
লিয়াম প্লানকেটের সঙ্গে ৫ ওভার স্থায়ী ৪৯ রানের জুটিতে দলকে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দেন বাটলার। ১ মাত্র রানের মধ্যে শেষ তিন উইকেট হারিয়ে আচমকাই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড।
৪৮ বলে দুটি করে ছক্কা-চারে ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান বাটলার।
৫৫ রানে অ্যান্ডারসন নেন ৩ উইকেট। শেষটায় খরুচে হয়ে যাওয়া মিল্ন ৩ উইকেট নেন ৭৯ রানে। পরপর দুই বলে উড ও বলকে ফিরিয়ে দেওয়া সাউদির উইকেট এই দুইটিই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৪৯.৩ ওভারে ৩১০ (রয় ১৩, হেলস ৫৬, রুট ৬৪, মর্গ্যান ১৩, স্টোকস ৪৮, বাটলার ৬১*, মইন ১২, রশিদ ১২, প্লানকেট ১৫, উড ০, বল ০; সাউদি ২/৪৪, বোল্ট ১/৫৬, মিল্ন ৩/৭৯, অ্যান্ডারসন ৩/৫৫, স্যান্টনার ১/৫৪, নিশাম ০/১৭)
নিউ জিল্যান্ড: ৪৪.৩ ওভারে ২২৩ (গাপটিল ২৭, রনকি ০, উইলিয়ামসন ৮৭, টেইলর ৩৯, ব্রুম ১১, নিশাম ১৮, অ্যান্ডারসন ১০, স্যান্টনার ৩, মিল্ন ১০, সাউদি ২, বোল্ট ০*; বল ২/৩১, উড ১/৩২, প্লানকেট ৪/৫৫, স্টোকস ১/৪৬, রশিদ ২/৪৭)
ফল: ইংল্যান্ড ৮৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জেইক বল