‘তাহিরের উইকেটে’ বাংলাদেশের আশা

“এই উইকেটে প্রথম ম্যাচ খেলেছেন, নিশ্চয়ই বাড়তি সুবিধা পাবেন?” ইংলিশ সংবাদকর্মীর প্রশ্ন শুনে একটু ধন্দে পড়ে গেলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, “একই উইকেট? আমার মনে হয় না একই উইকেটে খেলব…।”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিলন্ডন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2017, 05:36 PM
Updated : 5 June 2017, 10:57 AM

পরে যা জানা গেল, মাশরাফির ধারণাই সত্যি। প্রথম ম্যাচের উইকেটে নয়, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভিন্ন উইকেটেই খেলবে বাংলাদেশ। তবে ইংলিশ সাংবাদিকের প্রশ্নও অর্ধেক সত্যি! বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ যেখানে হবে, সেই উইকেটেও ম্যাচ হয়েছে!

শনিবার ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ হয়েছে যে উইকেটে, সেখানেই সোমবার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া। সেই ধূসর ২২ গজই নতুন আশার ছোপ বুলিয়েছে বাংলাদেশের স্বপ্নের রঙে।

একদিন আগে ব্যবহৃত উইকেট একটু মন্থর হওয়ার কথা। স্পিন ধরতে পারে একটু হলেও। অন্তত বল ব্যাটে আসবে সামান্য ধীরে। আগের ম্যাচে ব্যাটিং স্বর্গে হাহাকার করে মরা বাংলাদেশের বোলিংয়ের জন্য উইকেটে সামান্য সহায়তাও মরুতে বর্ষণের মতো।

যে ম্যাচ হয়েছে এই উইকেটে, সেটিতে নায়ক ছিলেন ইমরান তাহির। ৪ উইকেট নিয়ে এই লেগ স্পিনার ছিলেন ম্যান অব দা ম্যাচ। তার মানের লেগ স্পিনার বাংলাদেশ দলে নেই। তবে সাকিবের মানের বাঁহাতি স্পিনার আছে, একটু মন্থর হলেও কাজে লাগানোর মতো স্পিনার আছে আরও।

সংবাদ সম্মেলন শেষে অনুশীলনে মাঠে নামার সময় যেমন মাশরাফির মুখে হাসির ঝিলিক, “স্লো উইকেট হলেই তো আমাদের ভালো…।” তবে সেই হাসি মিলিয়ে গেল পর মুহূর্তেই, “কিন্তু উইকেটে শুনলাম পানিও দিয়ে ফেলেছে প্রচুর, রোল করবে অনেক। স্লো আর থাকে কিনা…।”

“স্লো” থাকে কিনা, সেটিতেই এখন বাংলাদেশের আশা-নিরাশার দোলাচল। ইংল্যান্ড ম্যাচের মত উইকেট নিখাদ ব্যাটিং সহায়ক হলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন, বাংলাদেশের দলীয় সুর এটি। ওয়ার্নার-ফিঞ্চ-স্মিথ-ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে গড়া ব্যাটিং লাইন আপকে উইকেটে বেধে রাখা কঠিন। আর বাংলাদেশের ব্যাটিং শক্তির বিবেচনায় সাড়ে তিনশ রান করা বা তাড়া করার বাস্তবতা প্রায় অসম্ভব। উইকেটে বোলারদের জন্য ন্যূনতম সহয়তা থাকলেও তাই সেটিকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ।

কাজে লাগাতে চায় বলেই আবার ৫ বোলারে ফিরে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত। ব্যাটিং ধসের দুর্ভাবনায় আর ৩৩০ রানে চোখ রেখে আগের ম্যাচে ৮ ব্যাটসম্যান খেলিয়েছিল বাংলাদেশ। ফাটকা কাজে লাগেনি। মাশরাফি ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, একজন ব্যাটসম্যান কমছে একাদশে।

“কম্বিনেশনের কথা চিন্তা করতেই হবে। ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে তিনশ করেছি, ৭ ব্যাটসম্যান নিয়ে কেন নয়, সেটা একটা কথা। আবার ৫ বোলার না থাকলে সমস্যা কি হয়, সেটাও চিন্তা করতে হবে। সবকিছু মাথায় আছে। আশা করি, সঠিক ব্যালান্স নিয়ে খেলতে পারব।”

“যে উইকেটে খেলা হচ্ছে, আশা করি, ব্যাটসম্যানরা আত্মবিশ্বাসী থাকবে। বোলারদের কথা আমাদের ভাবতে হবে। বিশেষ করে এরকম উইকেট থাকলে। আমরা কালকে থেকে এটা নিয়েই ভাবছি। ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে কথা বলছি যে ওরা কতটা আত্মবিশ্বাসী। তামিম, মুশফিক যেরকম ফর্মে আছে, রিয়াদও ফর্মে আছে, আশা করি, সমস্যা হবে না। পঞ্চম বোলারটা কে হবে, এটাই ভাবার বিষয়।”

উইকেট যদি একটু মন্থরও থাকে, তাহলে সত্যি বলতে পঞ্চম বোলার নিয়ে খুব বেশি ভাবতে হবে না। মেহেদী হাসান মিরাজ হয়ে উঠবেন স্বয়ংক্রিয় পছন্দ।

পানি দিয়ে পরে রোল করা হলেও ব্যবহৃত উইকেট একটু মন্থর থাকতে পারে। সেই ভাবনা আছে স্টিভেন স্মিথেরও। গত ম্যাচে অল পেস অ্যাটাক নিয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া তাই একাদশে আনতে পারে লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পাকে।

“গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ হয়েছে যেখানে, সেটিতেই খেলা হবে। ব্যবহৃত উইকেট। ওভালে ব্যবহৃত উইকেটে একটু স্পিন ধরতে পারে। সেটি অবশ্যই আমাদের ভাবনায় থাকবে।”

সত্যিই স্পিন ধরলে সেটি ভাবনার চেয়ে দুর্ভাবনাই বেশি হওয়ার কথা স্মিথদের। বাংলাদেশের জন্য সেটি আলোর রেখা।

তবে দূর থেকে আলোর রেখা দেখা গেলেও ধরতে পারে না সবাই। যেতে পারে না সেই গন্তব্যে। বাংলাদেশ পারবে?

টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে পারতেই হবে। এই ম্যাচে যে দলই হারবে, তাদের টুর্নামেন্ট একরকম শেষই!