রান উৎসবের রোমাঞ্চ জিতে সুপার লিগে শেখ জামাল

সামনে রানের পাহাড়। টপকালে সুপার লিগের ঠিকানা। হারলে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ। রোমাঞ্চকর অভিযানে সেই পাহাড় জয় করেছে শেখ জামাল। শ্বাসরুদ্ধকর রান তাড়ায় মোহামেডানকে হারিয়ে উঠেছে সুপার লিগে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2017, 01:26 PM
Updated : 21 May 2017, 02:55 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ৬৮২ রানের উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে শেখ জামাল জিতেছে ১ উইকেটে।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে অপরাজিত ১৪৪ রান করেছেন শামসুর রহমান। দারুণ সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন রনি তালুকদার। মোহামেডান তুলেছিল ৩৩৯ রান। শেখ জামালের সেঞ্চুরি করেনি কেউ। তবে ছিল ঝড়ো কিছু কার্যকর ইনিংস। জিতেছে তারা ২ বল বাকি থাকতে।

১১ ম্যাচে ৭ জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে থেকে সুপার লিগে উঠল শেখ জামাল। সমান ম্যাচে মোহামেডানের পয়েন্ট ১২। সমান পয়েন্ট লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জের। কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ায় ছিটকে পড়ল রূপগঞ্জ। হেরেও সুপার লিগে মোহামেডান।

মোহামেডান জিতলে সুপার লিগে উঠত রূপগঞ্জ। তখন শেখ জামালের পয়েন্ট থাকত ১২। মুখোমুখি লড়াইয়ে জিতে এগিয়েছিল রূপগঞ্জ।

মোহামেডান ৩৩৯ রান করার পর শেখ জামালের আশার শেষ দেখছিলেন অনেকেই। আর রুপগঞ্জের আশার পালে লেগেছিল হাওয়া। অসাধারণ রান তাড়ায় সেই হাওয়ার পালে নিজেদের তরি তীরে ভেড়াল শেখ জামাল।

পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা শেষ সময়ে ছিল এমন এক মোড়, একটি বলই শেষ করে দিতে পারত শেখ জামালের আশা। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২ রান, উইকেটে শেষ জুটি।

৪৯তম ওভারে কামরুল ইসলাম রাব্বির দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মারলেন ইলিয়াস সানি, বাকি সব বলে সিঙ্গেল। এনামুল হক জুনিয়রের করা শেষ ওভারে প্রথম ৩ বলে এলো ২ রান। চতুর্থ বলে শেষ ব্যাটসম্যান শাহাদাত হোসেনের বাউন্ডারিতে জয়।

উদ্বোধনী জুটিতেই শেখ জামাল বুঝিয়ে দেয়, বড় রানেও তারা হাল ছাড়ছে না। ফজলে রাব্বি ও ভারতীয় প্রশান্ত চোপড়া ৩৯ বলে তোলেন ৫৮ রান।

২০ বলে ২৮ রান করা ফজলে রাব্বিকে ফেরানোর পর ওই ওভারে রাসেল আল মামুনকে তুলে নেন তাইজুল ইসলাম।

তবে দমে যায়নি শেখ জামাল। পরের জুটিতেই গতি পায় রান তাড়া। ইদানিং বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিংটাই ভালো করেন সোহাগ গাজী। এদিনও চারে নেমে দুর্দান্ত খেললেন।

ভারতীয় প্রশান্ত চোপড়া চালিয়ে খেলছিলেন শুরু থেকেই। দুজনের জুটি ৭০ বলে ৯৬ রানের।

৬০ বলে ৮৬ রান করেছেন প্রশান্ত, যার ৭০ রানই বাউন্ডারিতে। ১০টি চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কা।

মিডল অর্ডারে রাজিন সালেহ ও বিগ হিটার জিয়া্উর রহমান সুবিধে করতে পারেননি। এই সময়টায় দলকে টেনেছেন গাজী।

লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে আগের ৩ অর্ধশতকে সর্বোচ্চ রান ছিল ৫৯। এবার গাজী করেছেন ৬৪ বলে ৮৯।

গাজী ফেরার সময় রান ৬ উইকেটে ২৩৩। মোহমেডান হয়ত আশা করছিল একটু স্বস্তির। কিন্তু শেখ জামাল যে হাল ছাড়লো না! সপ্তম উইকেটে ৮২ বলে ৮৭ রানের জুটিতে আবার দলকে পথে ফেরান তানবির হায়দার ও ইলিয়াস সানি।

ক্যারিয়ার সেরা ৭২ বলে ৭৭ করে ফিরেছেন তানবির। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে শেষের বৈতরণী পার করেছেন ইলিয়াস সানি।

সকালে মোহামেডানের শুরুটাও ছিল ভালো। শামসুর রহমান ও সৈকত আলি গড়েন ৭৬ রানের জুটি। ২৮ বলে ৩৯ রান করে ফেরেন সৈকত।

দ্বিতীয় উইকেটে শামসুর ও রনি তালুকদারের ম্যারাথন জুটি। ১৭৭ বলে দুজন তোলেন ১৭৩ রান। ৯৯ বলে ১১০ রান করে ফিরেছেন রনি।

শামসুর ব্যাট করে গেছেন শেষ পর্যন্ত। সেঞ্চুরি ছুঁতে খেলেছিলেন ১৩৪ বল। পরের ১৮ বলে করেছেন ৪৪ রান। ৭টি করে চার ও ছক্কায় ক্যরিয়ার সেরা অপরাজিত ১৪৪।

দিন শেষে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও পেয়েছেন শামসুর। আছে হেরেও সুপার লিগে ওঠার স্বস্তি। তবে দিনটি শেখ জামালের!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

মোহামেডান: ৫০ ওভারে ৩৩৯/৫ (শামসুর ১৪৪*, সৈকত ৩৯, রনি ১১০, রকিবুল ৫, আসালাঙ্কা ২, মিলন ২১, কামরুল রাব্বি ১২*; শাহাদাত ১/৫৫, জিয়াউর ০/৩৯, ইলিয়াস সানি ২/৬৬, গাজী ০/৬৪, তানবির ০/৪১, নবিন ০/১৭, ফজলে রাব্বি ০/২৩, রাসেল ২/৩১)।

শেখ জামাল: ৪৯.৪ ওভারে ৩৪৩/৯ (ফজলে রাব্বি ২৮, প্রশান্ত ৮৬, রাসেল ০, গাজি ৮৯, রাজিন ০, জিয়াউর ৭, তানবির ৭৭, ইলিযাস সানি ৩৯*, মাহমুদুল ০, নবিন ২, শাহাদাত ৯*; আজিম ৪/৭০, তাইজুল ২/৭৬, কামরুল রাব্বি ০/৫৩, শামসুর , এনাম জুনি. ২/৬১, সৈকত ০/৩০, আসালাঙ্কা ১/১১)।

ফল: শেখ জামাল ১ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: শামসুর রহমান