ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। ডাবলিনে বাংলাদেশের ২৫৭ রান তাড়ায় কিউইরা জিতেছে ১৫ বল বাকি রেখে।
প্রথম ম্যাচে ম্যালাহাইডের উইকেট ছিল সবুজের গালিচা। তবে বুধবার ক্লনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে বাংলাদেশ অনেকটাই পেয়েছিল নিজেদের উইকেট। বাউন্স ছিল বটে। তবে উইকেট ছিল অনেকটাই মন্থর। বল ব্যাটে এসেছে ধীরে।
বোলিংয়েও সেই একই গল্প। স্পিনাররা পারেননি শুষ্ক উইকেটকে কাজে লাগাতে। অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজার বিরল এক বাজে দিন ছিল এদিন। অনুকূল উইকেটেও বল হাতে বিবর্ণ ছিলেন মূল দুই স্পিনার সাকিব আল হসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
অথচ শুরুটা ছিল বাংলাদেশের মনমতো। টস জিতলে বোলিং নিতেন মাশরাফি, তবে হেরেও খুব অখুশি ছিলেন না। ভালো ব্যাটিং উইকেট, অধিনায়কের চাওয়া ছিল দেখে শুনে খেলে শুরুটা ভালো করা। তামিম ও সৌম্যর ব্যাটে প্রত্যাশিত সেই শুরুই পায় বাংলাদেশ।
এরপরই ছন্দপতন। জিমি নিশামের অনেক বাইরের বল উড়িয়ে কাভারে ধরা পড়লেন তামিম। ভাঙল ৭২ রানের উদ্বোধনী জুটি।
পরের ওভারেই আবার ধাক্কা। মিচেল স্যান্টনারের সামনে খেলার বল পেছনে খেলে লাইন মিস করে বোল্ড সাব্বির রহমান। তাকে তিন নম্বরে খেলানোর কোচের পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ আরও একবার।
তামিমের ফেরার ওভারেই সৌম্য ছুঁয়েছেন অর্ধশতক। প্রায় দু বছর পর ওয়ানডেতে পঞ্চাশের দেখা পেলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। যদিও মাঝের সময়টায় খেলেছেন মাত্র ৭টি ওয়ানডে।
মুশফিক উইকেটে গিয়েই চাপটা সরিয়ে দেন ছক্কা ও চার মেরে। সৌম্যর সঙ্গে জুটিটাও কেবল গড়ে উঠছিল। কিন্তু আবারও সৌম্যর আত্মহত্যা। পঞ্চাশকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে না পারার ধারা ধরে রেখেই ফিরলেন ৬৭ বলে ৬১ রানে।
বিপর্যয়ে যথরীতি ভরসা সেই মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। শুধু ফাঁসটাই আলগা করেননি দুজন, রানও তুলেছেন বলে বলে। শেষটা যদিও ছিল হতাশার। দারুণ খেলতে থাকা মুশফিক উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন ৫৫ রানে। জুটি ৫১ বলে ৪৯।
শেষ স্বীকৃত দু্ই ব্যাটসম্যানের জুটিতে এরপর ইনিংস টেনে নেওয়ার চেষ্টা। মোসাদ্দেক যথারীতি খেলছেন দারুণ কিছু শট। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে মাহমুদউল্লাহর অর্ধশতক ৫৪ বলে। রান বাড়ানোর চেষ্টায় আউট হয়েছেন এর পরপরই। তবে মোসাদ্দেকের সঙ্গে ৬১ বলে ৬১ রানের জুটিই বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে আড়াইশর কাছে।
নিশামের এক ওভারে তিন চার মেরেছেন মোসাদ্দেক, ৪১ বলে ৪১ করে ফিরেছেন শেষ ওভারে। শেষ ৪ ওভারে রান ওঠেনি সেভাবে। রানও তাই প্রত্যাশার চেয়ে কম।
এই পুঁজি নিয়ে জিততে প্রয়োজন ছিল বল হাতে দারুণ শুরু। হলো উল্টো। অনেকবার প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেওয়া মাশরাফি প্রথম তিন বলেই হজম করলেন চার ও ছক্কা।
খুব বড় কোনো জুটি তারা গড়তে পারেনি। তবে প্রায় প্রতি উইকেটেই হয়েছে কার্যকর জুটি। ওপেনিংয়ে অর্ধশতক করেছেন অধিায়ক ল্যাথাম। মিডল অর্ডার রান পেয়েছেন নিল ব্রুম।
পঞ্চম উইকেটে ব্রুম ও জিমি নিশামের ৮০ রানের জুটিতেই জয় অনেকটা নিশ্চিত করে ফেলে নিউ জিল্যান্ড। জয়ের কাছে গিয়ে দুজনই ফিরেছেন। তবে জিততে সমস্যা হয়নি।
ছোট ছোট প্রাপ্তিগুলোকে পরের ম্যাচে সামগ্রিক সাফল্যে রূপ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ মাশরাফিদের সামনে। আপাতত এই ম্যাচের আক্ষেপ, আরেকটু ভালো ব্যাটিং, আরেকটু ভালো বোলিং!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫৭/৯ (তামিম ২৩, সৌম্য ৬১, সাব্বির ১, মুশফিক ৫৫, সাকিব ৬, মাহমুদউল্লাহ ৫১, মোসাদ্দেক ৪১, মিরাজ ৬, মাশরাফি ১, রুবেল ০*, মুস্তাফজ ০*; রান্স ০/৬৬, বেনেট ৩/৩১, স্যান্টনার ১/৩৭, নিশাম ২/৬৮, সোধি ২/৪০, মানরো ০/১৪)।
নিউ জিল্যান্ড: ৪৭.৩ ওভারে ২৫৮/৬ (ল্যাথাম ৫৪, রনকি ২৭, ওয়ার্কার ১৭, টেইলর ২৫, ব্রুম ৪৮, নিশাম ৫২, মানরো ১৬*, স্যান্টনার ৫*; মাশরাফি ১/৫৮, সাকিব ০/৫০, মুস্তাফিজ ২/৩৩, মিরাজ ০/৪৫, মাহমুদউল্লাহ ০/৮, মোসাদ্দেক ০/৭, রুবেল ২/৫৩)।
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জিমি নিশাম