তাইজুলের অনুপ্রেরণা ‘ব্যাটসম্যান’ নারাইন

ক্রিকেটে বোলার হিসেবে এসে ব্যাটসম্যান কিংবা ব্যাটসম্যান হিসেবে এসে বোলার হয়ে যাওয়ার উদাহরণ কম নেই। তারপরও তাইজুল ইসলাম যখন বললেন, তিনি ব্যাটসম্যান ছিলেন, শুনে একটু চমকে যেতে হল। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ টেস্ট স্পিনার শুরুতে ছিলেন বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2017, 02:21 PM
Updated : 16 May 2017, 02:21 PM

অনূর্ধ্ব-১৫ ক্রিকেটে তাইজুল ছিলেন ব্যাটসম্যান, বোলিং নিয়ে অত ভাবতেন না। ব্যাটিংয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতেন, ধ্যান-জ্ঞান ছিল ব্যাটিংই। বছর তিনেক পর চিত্রটা পাল্টে গেল।

“অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেটে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার সময় প্রচুর উইকেট পাই। পরে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে চলে আসি বোলার হিসেবে। তখন মনে হয়েছিল, ব্যাটিং-বোলিং দুইটা দিক সামলানো কঠিন হয়ে যাবে। মনে হয়েছিল, দুই দিক নিয়ে চিন্তা করলে কোনো দিকেই হবে না। ওই সময়ে বোলিংয়ে বেশি মনোযোগ দেই।”

বোলিংয়ে মনোযোগ দেওয়া তাইজুল ক্রমশ ব্যাটসম্যান থেকে বোলার হয়ে গেলেন। ২০১১ সালে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ১৮ বছর বয়সে অভিষেক হয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। তার তিন বছর পর দেশের হয়ে খেলেন টেস্টে। এই সংস্করণে এখন পর্যন্ত ১৩টি ম্যাচ খেলেছেন, ইনিংসে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড তার অধিকারে।

ওয়ানডেতে শুরুটা ছিল দুর্দান্ত, প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকে করেছিলেন হ্যাটট্রিক। এই সংস্করণে সব মিলিয়ে খেলেছেন ৪ ম্যাচ, নিয়েছেন ৫ উইকেট। গত বছর সেপ্টেম্বরের পর ওয়ানডেতে দেশের হয়ে আর খেলা হয়নি।

টি-টোয়েন্টিতে এখনও দেশের হয়ে খেলা হয়নি তাইজুলের। স্বপ্ন দেখছেন তিন সংস্করণেই দেশের হয়ে নিয়মিত খেলার। তার জন্য ব্যাটিংকে এখন থেকে দিতে চান বাড়তি গুরুত্ব।

“ব্যাটিং থাকলে সব ফরম্যাট খেলা সহজ হয়। চেষ্টা করব ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন দিকেই ভালো করে ওয়ানডে টিমে ঢোকার। মোহামেডানের কোচ সোহেল ইসলাম আমাকে নেটে ব্যাটিং করার সুযোগ দেন। তবে এখন আমি আর ‘সলিড ব্যাটসম্যান’ নই। ওপেনিং করতাম সে তো ১০ বছর আগের কথা।”

ব্যাটিং যে পারেন তার প্রমাণ দিয়েছেনও তাইজুল। গতবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে শেষ বলে ছক্কায় ম্যাচ টাই করেছিলেন। এবার দারুণ এক অর্ধশতকে মোহামেডানকে জিতিয়েছেন প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচ। আইপিএলে হঠাৎ করেই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান বনে যাওয়া অফ স্পিনার সুনিল নারাইনের সাফল্যও ব্যাটিং নিয়ে আরও কাজ করার অনুপ্ররেণা যোগাচ্ছে তাইজুলেকে।

“এই মুহূর্তে যদি ইনিংস উদ্বোধন করতে বা পিঞ্চ হিট করতে বলা হয়, মনে হয় না আমি পারব। কিন্তু ৬-৭ মাস বা এক বছর সময় যদি দেওয়া হয় তাহলে আমি পারব। সে আত্মবিশ্বাস আমার আছে। নারাইনের ব্যাটিং অবশ্যই অনুপ্রাণিত করে। তাকে সুযোগ দেয়া হয়েছে, সে সফল হয়েছে। এটা দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে।”

২৫ বছর বয়সী তাইজুলের বিশ্বাস, আগামীতে আরও শাণিত হবে তার বোলিং। চান সেই সময়ে ব্যাটিংটাও যেন হয় তার বাড়তি শক্তি।

“আমার যখন ২৮-৩০ বছর বয়স হবে তখন বোলিং আরও ভালো হবে। অনূর্ধ্ব-১৯ বা ‘এ’ দলে যখন খেলেছি সেই সময় আর এই সময়ের পার্থক্য অনেক। সময় গেলে বোলিং, চিন্তা-ভাবনা হয়তো আরও পরিণত হবে। তখন বুঝতে পারবো ব্যাটসম্যান কী করতে চাইছে। টানা এক জায়গায় বোলিং করার দক্ষতা তৈরি হবে। যখন নিজেকে ওই পর্যায়ে নিতে পারব তখন আর চিন্তা করতে হবে না।”

নিজের ঘাটতি পূরণ করে যত দ্রুত সম্ভব সেই পর্যায়ে যেতে চান তাইজুল। যেন সব সংস্করণে টানা ১০ বছর সার্ভিস দিতে পারেন দেশকে।