১৪ উইকেট পতনের দিনে এগিয়ে পাকিস্তান

তিন ইনিংস আর ১৪ উইকেট পতনের দিনে ডোমিনিকা টেস্টে জয়ের আশা জাগিয়েছে পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতে মিসবাহ-উল-হক ও ইউনুস খানকে বিদায় জানানোর পথে এগিয়ে গেছে অতিথিরা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2017, 04:45 AM
Updated : 14 May 2017, 06:51 AM

তৃতীয় ও শেষ টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ১ উইকেটে ৭ রান। ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ৩ রানে ব্যাট করছেন।

সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে কাইরন পাওয়েলকে ফিরিয়ে দেন লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহ। এরপরই শনিবারের খেলা শেষ হয়ে যায়।

১-১ সমতায় থাকা সিরিজ জিততে শেষ দিনে ৯ উইকেট চাই পাকিস্তানের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের করতে হবে ২৯৭ রান। শেষ দিনের উইকেটে তত রান করা সহজ নয় তবে ৯ উইকেটে দিন কাটিয়ে দেওয়া খুব কঠিনও নয়।

উইকেটে কোনো জুজু নেই, টিকে থাকতে চাইলে যে সম্ভব সেটা দেখিয়েছেন ইয়াসির ও মোহাম্মদ আমির। তাদের ব্যাটেই তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য দিতে পেরেছে প্রথম ইনিংসে ১২৯ রানের লিড নেওয়া পাকিস্তান।

শতরানের লিডের খুশি মিলিয়ে যায় দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই। প্রথম ইনিংসে শতক করা আজহার আলি ফিরেন ৩ রানে, দুই ম্যাচে তৃতীয়বারের মতো শূন্য রানে বিদায় নেন বাবর আজম।

শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে শেষ হয় শান মাসুদের প্রতিরোধ। আরও একবার জুটি গড়েন ইউনুস-মিসবাহ। টেস্টে তাদের ১৫টি শত রানের জুটি আছে, অনেকবার দলকে টেনে তুলেছেন বিপদ থেকে। শেষবারের মতো জুটি বেধে তেমন কিছু করতে পারেননি দুই জনে, থামেন দুই অঙ্কে যাওয়া আগেই।

দেবেন্দ্র বিশুকে উড়ানোর চেষ্টায় শেষ হয় মিসবাহর শেষ আন্তর্জাতিক ইনিংস। ১৪ বলে ২ রান করা পাকিস্তান অধিনায়ক ফিরে যাওয়ার সময় বুক মিলিয়ে যান ইউনুসের সঙ্গে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সব খেলোয়াড় এসে একে একে তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে যান।

মাঠ ছাড়ার সময় সতীর্থরা গার্ড অব অনার দেন অধিনায়ককে। গ্যালারিতে পরিবারের সদস্যের মুখে তখন গর্বের হাসি।

খানিক পরে সেই বিশুর বলেই ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ইউনুস, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিজের শেষ ইনিংসে থামলেন ৩৫ রানে। মিসবাহর মতো প্রতিপক্ষের দলের খেলোয়াড়রা এসে হাত মিলিয়ে গেলেন, সতীর্থরাও দিলেন গার্ড অব অনার।

জয় দিয়ে মিসবাহ-ইউনুসকে বিদায় দিতে মুখিয়ে থাকা পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দেয় স্বাগতিকরা। ৯০ রানের মধ্যে তুলে নেয় ৭ উইকেট। লিড তখন মাত্র ২১৯ রানের।

প্রথম ৭ উইকেটে দশের বেশি রান আসে কেবল একটি জুটিতে। তৃতীয় উইকেটে ইউনুস-মাসুদের ৪৯।

নিজের শেষ ইনিংস খেলে ফেরার সময় ইউনুস খানকে সতীর্থদের গার্ড অব অনার। ছবি: ডব্লিউআইসিবি।

লড়াইয়ের পুঁজি গড়ার কাজটা করেন পাকিস্তানের বোলাররাই। দলের বিপদে দারুণ দুটি ইনিংস খেলেছেন আমির ও ইয়াসির। দুই জনে গড়েছেন ৬১ রানের চমৎকার এক জুটি।

একবার আউট হয়েও বিশুর ‘নো’ বলের জন্য বেঁচে যাওয়া আমির ৩টি চারে ফিরেন ২৭ রান করে। ইয়াসিরের সঙ্গে অভিষিক্ত হাসান আলির ছোট্ট এক জুটিতে তিনশ ছাড়ায় পাকিস্তানের লিড।

৫৫ বলে দুটি চার ও একটি ছক্কায় ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন ইয়াসির। হাসান ৬ বলে একটি করে ছক্কা-চারে অপরাজিত ১৫ রানে।

৮ উইকেটে ১৭৪ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের জন্য ৩০৪ রানের লক্ষ্য দেয় পাকিস্তান।

৫৩ রানে ৩ উইকেট নেন তরুণ পেসার আলজারি জোসেফ। দুটি করে উইকেট শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও বিশুর।

এর আগে উইন্ডসর পার্কে ৫ উইকেটে ২১৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় ২৪৭ রানে। মোহাম্মদ আব্বাসের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে স্বাগতিকরা দিনের প্রথম সেশন পর্যন্ত টিকেনি।

প্রথম ওভারে শেন ডাওরিচকে আউট করে শুরুটা করেন আমির। আগের দিন চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া রোস্টন চেইস ব্যাটিংয়ে ফিরে নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। আব্বাসের বলে তিনি বোল্ড হওয়ার পরের বলে ইউনুস খানকে ক্যাচ দেন বিশু।

পরের দুই ওভারে জোসেফ ও গ্যাব্রিয়েলকে বিদায় করে আড়াইশ রানের আগে স্বাগতিকদের থামিয়ে দেন আব্বাস। ৪৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে তিনিই দলের সেরা বোলার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩৭৬

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১১৫ ওভারে ২৪৭ (ব্র্যাথওয়েট ২৯, পাওয়েল ৩১, হেটমায়ার ১৭, হোপ ২৯, চেইস ৬৯, ভিশাল ৮, ডাওরিচ ২০, হোল্ডার ৩০*, বিশু ০, জোসেফ ০, গ্যাব্রিয়েল ০; আমির ১/৩২, আব্বাস ৫/৪৬, ইয়াসির ৩/১২৬, হাসান ০/২২, আজহার ১/১৫)

পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ৫৭ ওভারে ১৭৪/৮ ইনিংস ঘোষণা (আজহার ৩, মাসুদ ২১, বাবর ০, ইউনুস ৩৫, মিসবাহ ২, শফিক ১৩, সরফরাজ ৪, আমির ২৭, ইয়াসির ৩৮*, হাসান ১৫*; গ্যাব্রিয়েল ২/২৪, জোসেফ ৩/৫৩, চেইস ১/৩১, হোল্ডার ০/৭, বিশু ২/৫৪)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৬.৩ ওভারে ৭/১ (ব্র্যাথওয়েট ৩*, পাওয়েল ৪; আমির ০/২, আব্বাস ০/৩, ইয়াসির ১/২)