বিশাল ছক্কা যেমন আছে তেমনি আছে বুলেট গতির ‘ফ্ল্যাট’ ছক্কা। ছোটোখাটো গড়নের মুমিনুল যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল, উড়িয়ে সীমানা পার করা খুবই সহজ কাজ।
“না, এর আগে এত ছক্কা এক ইনিংসে মেরেছি বলে মনে পড়ছে না। আসলে উইকেট খুব ভালো ছিল। শুরুতে একটু সমস্যা হলেও পরে পুরোপুরি ব্যাটিং সহায়ক ছিল। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই মারা গেছে। দেখুন ওরা অত ভালো না খেলার পরও মাত্র ৩৫ রানে হেরেছে।”
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের ৩০৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রাইম দোলেশ্বর ৯ উইকেটে করে ২৭২ রান।
১২০ বলে ১৫২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পরও মুমিনুল জানালেন, ওয়ানডে ক্রিকেট নাকি এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি!
“আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে এ জিনিসটা বুঝি।”
“(ওয়ানডে দলে ফেরা) নিয়ে চিন্তা করি না। (জাতীয় দলের হয়ে) ওয়ানডে ক্রিকেট খেলবো কি খেলবো না ভাবি না। আমি টেস্টে নিয়মিত পারফর্ম করলে হয়তো পরে সুযোগ আসবে।”
আগের দিনের ঝড়ের তাণ্ডবে বিদ্যুৎ ছিল না বিকেএসপিতে। রাতে ঘুমটা ভালো হয়নি মুমিনুলের। পরের দিন প্রচণ্ড গরমের মধ্যে নিজে তুলেছেন ঝড়, খেলেছেন চোখ জুড়ানো অনবদ্য এক ইনিংস।
নির্ঘুম রাত, তীব্র গরমের সঙ্গে ভুগিয়েছে ক্রাম্পও। তারপরও নজর ছিল দ্বিশতকের দিকেই।
রান উঠছে তরতরিয়ে। ড্রেসিংরুম থেমে বার্তা পাঠানো হয়েছিল, শেষ করে আসার। ততক্ষণ থাকলে দুইশ ছাড়িয়ে যেতে পারতেন বহুদূর। ফরহাদ রেজাকে স্লগ করতে গিয়ে থামতে হল আগেই। এ নিয়ে অবশ্য কোনো আক্ষেপ নেই মুমিনুলের।
“কোনো আক্ষেপ নেই, নিজের ব্যাটিং নিয়ে অবশ্যই সন্তুষ্ট। কারণ, দলের জন্য কিছু করতে পেরেছি। যে পরিস্থিতিতে ব্যাটিং করছিলাম… দুটি উইকেট পড়ে গিয়েছিল। আমি ও নাসির ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। ভালো জুটি হয়েছে। সবকিছু চিন্তা করলে খুব ভাল লাগছে আমার কাছে।”
“ড্রেসিংরুম থেকে বার্তা এসেছিল শেষ পর্যন্ত খেলার। শেষ করে আসতে পারলে নিজের জন্যও ভালো হতো।…এত গরমে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এই কারণে হয়তো বা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি, তাই আউট হয়ে গেছি।”
মুমিনুল যখন বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ঝড় তুলছিলেন তখনও পাশের মাঠে খেলা শুরু হয়নি। মুশফিকুর রহিম, তুষার ইমরান, মোহাম্মদ আশরাফুলরা মুগ্ধ হয়ে দেখছিলেন তার ব্যাটিং। চার-ছক্কা হাঁকালে ফেটে পড়ছিলেন উল্লাসে।
“সবাই সমর্থন করছিল। কারণ সবাই খুব ভালবাসে আমাকে (হাসি)। … আর ওই সমর্থনটা কাজেও লেগেছে। তারা উৎসাহ দিচ্ছিলেন নিজের কাছে ভালো লাগছিল… মনে হচ্ছিল কিছু একটা করি দলের জন্য… অন্তত চেষ্টা করি।”
মুমিনুলকে পরামর্শ দেওয়ার দিকে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন আশরাফুল। একটু পরপর চিৎকার করে মাঠে থাকার জন্য বলছিলেন তিনি।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নিজের ১২৯ ছাড়িয়ে খেলেছেন প্রথম দেড়শোর্ধ ইনিংস। সুযোগ ছিল বাংলাদেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার। তবে এ নিয়ে মোটেও ভাবেননি মুমিনুল, তার লক্ষ্য ছিল দলকে যতটা সম্ভব এগিয়ে নেওয়া।
“না, কোনো রেকর্ডের কথা মাথায় ছিল না। সেটা হলে তো স্বার্থপর ক্রিকেট খেলে কোনোভাবে ধীরে ধীরে শেষ করে আসতে পারতাম। দলের তখন যেভাবে দরকার ছিল সেভাবেই খেলেছি।”
মুমিনুলকে ভাবা হয় বড় দৈর্ঘ্যের আদর্শ ক্রিকেটার হিসেবে। তবে সব ফরম্যাটেই যে জ্বলে উঠার সামর্থ্য আছে, এই ইনিংস কী তারই বার্তা?
“না, আমার কাছে তা মনে হয় না। আমি যখন যেখানে খেলি… বিপিএলে যখন খেলেছি তখন টি-টোয়েন্টির সঙ্গে মানানসই ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করেছি। এখন এখানে খেলছি। দল আমাকে যে জন্য নিয়েছে সেই প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টা করছি।”
এখনও ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের শিরোপা জেতা হয়নি মুমিনুলের। টানা চার জয় পেয়ে দল আছে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। সামনে অনেক পথ বাকি, তবে এবার শিরোপা জয়ের ভালো সম্ভাবনা দেখছেন মুমিনুল।
“অবশ্যই শিরোপার জন্য খেলবো। কোনো সময় জিততে পারি নাই… । ইচ্ছা আছে এবার চেষ্টা করবো জেতার জন্য। নাসির হোসেন খুব ভালো ব্যাটিং করছিল, শফিউল ইসলাম খুব ভালো বোলিং করছিল। ওদের অনুপস্থিতিতে কাজটা কঠিন হবে তবে অসম্ভব নয়।”
অলরাউন্ডার নাসির সুযোগ পেয়েছেন সাসেক্সের ক্যাম্প আর আয়ারল্যান্ড সিরিজে। পেসার শফিউল এর সঙ্গে আছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলেও। তাদের অনুপস্থিতিতে আরও বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে প্রস্তুত মুমিনুল।