ডিরেক্টর ও ক্লাবের ভয়ে আম্পায়াররা সন্ত্রস্ত থাকে: বিসিবি প্রধান

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে আম্পায়ারিং নিয়ে বরাবরের যে অভিযোগ, সেটি স্বীকার করে নিলেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান। বললেন, আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারিদের আরও শক্তিশালী করতে হবে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2017, 02:35 PM
Updated : 24 April 2017, 11:29 AM

শনিবার ছিল বিসিবি পরিচালনা পরিষদের সভা। এদিন আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারিদের সঙ্গেও সভায় বসেছিলেন নাজমুল হাসান। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি প্রধান জানালেন আম্পায়ারদের সঙ্গে বসার কারণ।

“আম্পায়ারিং নিয়ে কিছু বিতর্ক আমরা শুনেছি। এটা নিয়ে কি ব্যবস্থা এবং কি চিন্তা করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। বোর্ডের পক্ষ থেকে আমরা কি চাই এবং কি করতে হবে, সেই ধারণা একটা দিয়েছি। এটা সিরিয়াস ইস্যু।”

ঢাকার লিগ ক্রিকেটে আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে বছরের পর বছর ধরেই। তবে গত কয়েক বছরে বিতর্ক ছাড়িয়ে গেছে যেন অতীতের সব কিছুকে। গত বছর প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর ম্যাচে আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেক প্রতিপক্ষ। বিসিবি প্রধান স্বয়ং অনেক দিন ধরে সম্পৃক্ত এই ক্লাবের সঙ্গে। নানাভাবে জড়িয়ে আছেন আরও কয়েকজন বোর্ড পরিচালকও।

প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগে আম্পায়ারিং বরাবরই যাচ্ছে তাই। কোনো নির্দিষ্ট ক্লাবকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, কোনো ক্লাবকে হারিয়ে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ ওঠে প্রায়ই।

এবার দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটে যেমন তুমুল বিতর্ক চলছে এসব নিয়েই। একটি ম্যাচে এক দলের বিপক্ষে সাতটি এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর অফিসিয়াল সাইটে স্কোরবোর্ড কয়েক দফা বদলের প্রমাণ মিলেছে।

আরেক ম্যাচে বারবার আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে শিকার হয়ে এক ক্লাব অভিনব প্রতিবাদের পথ বেছে নেয়। সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়ে এক বোলার ইচ্ছে করেই ওয়াইড ও নো বল করে ৪ বলেই ৯২ রান দিয়ে জিতিয়ে দেন প্রতিপক্ষকে। সেটি দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয় ফলাও করে।

এই দুই ঘটনার বাইরেও দ্বিতীয় বিভাগে এবার আম্পায়ারিং প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে আরও অনেকবার। প্রভাবশালী দু-একটি ক্লাবে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে নিয়মিতই।

ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে এবার প্রতি মাঠে তিনটি করে ক্যামেরা রাখা হচ্ছে। বিসিবি প্রধান জানালেন, প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগেও একই ব্যবস্থা করা হবে।

“গত বছর প্রিমিয়ার ডিভিশন নিয়ে কথা হয়েছে। আমি নিজে তিনটি খেলা দেখতে গিয়েছি। এরপর জিনিসটা একটু কমে এসেছিল। আমরা বলেছিলাম একটা কিছু করব। অভিযোগ করলেই তো হলো না। যৌক্তিকতা বিষয়গুলো তো বুঝতে হবে। এবার সেই কারণেই কিন্তু আমরা ক্যামেরা বসিয়েছি। এবার এখন পর্যন্ত আমার কাছে প্রিমিয়ার ডিভিশন নিয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। তো প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগেও আমরা ক্যামেরা বসাব।”

চার বলে ৯২ রানের ম্যাচ নিয়ে তদন্ত করে ইতিমধ্যেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিসিবির আকসু। বিসিবি প্রধান জানালেন আরও খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে এদিনের সভায়।

“এটা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেভাবে কাভারেজ পেয়েছে, তা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর। আমরা আকসুকে নিয়োগ দিয়েছিলাম। ইতিমধ্যে পর্যালোচনা করে তারা রিপোর্টও জমা দিয়েছেন। তারপরও আমরা প্রত্যেকে এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। আরও একটি কমিটি গড়া হয়েছে। এই কমিটিতে জালাল ইউনুস, আকরাম খান ও শেখ সোহেল আছে। তারা তিন দিনের মধ্যে এই ব্যাপারে আউটকাম দেবে।”

বিসিবি প্রধান আম্পায়ারিং নিয়ে সোচ্চার হলেও অভিযোগ আছে, ভূত লুকিয়ে সর্ষের মধ্যেই। ঢাকা লিগ পরিচালনা করেন যারা, সেই সিসিডিএম প্রস্তাব না করলেও ম্যাচ চালানো হয় বিতর্কিত আম্পায়ারদের দিয়েই। তাদেরকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাবও বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটিই করে থাকে!

বিসিবি প্রধান বললেন পুরো ব্যাপারটিকেই একটি প্রক্রিয়ায় মধ্যে আনার কথা। তার বিশ্বাস, মাঠে ক্যামেরা বসালে সমস্যা অনেকটা সমাধান হবে।

“একটা একটা করে অভিযোগ আসবে, আর আম্পায়ারদের বাদ দিবেন, তাহলে তো সঠিক সিদ্ধান্তই পাবেন না। এমনিতেই ডিরেক্টর আর ক্লাবদের ভয়ে আম্পায়াররা সন্ত্রস্ত থাকে। তারপর ওই চাপ। আম্পায়ারদের এবং ম্যাচ রেফারিদের আরও শক্তিশালী করতে হবে।”

“যখন ক্যামেরা বসানো হবে, কেউ কি ইচ্ছা করলে ক্লাবের পক্ষপাতিত্ব করতে পারবে? ব্যাপারটা হচ্ছে, এগুলো তো একটা প্রক্রিয়া। আমরা সিস্টেমটা চালু করতে চাচ্ছি। যদি কোনো অভিযোগ থাকে, আমরা যাতে খেলাগুলো দেখতে পারি। যাতে বুঝতে পারি, অভিযোগ সঠিক না বেঠিক।”

বিসিবি প্রধান জানালেন, প্রয়োজনে আইসিসির সহযোগিতায় ট্রেনার এনে দেশের আম্পায়ারদের ট্রেনিং করানো হবে। আর নিজের স্তরের লিগেও ম্যাচ রেফারি রাখা হবে।