ছেলেদের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরু হচ্ছে বুধবার। মেয়েদের প্রিমিয়ার লিগ শুরু তো বহুদূর, দলবদলেরই খবর নেই এখনও। অনেক প্রতিকূলতা ঠেলে দুটি আসর হয়েছে আগে। তৃতীয় আসর মাঠে গড়ানোর লক্ষণ নেই। গড়াবে কোথায়, মাঠই যে নেই!
টুর্নামেন্ট আয়োজনে প্রস্তুত বিসিবির উইমেন্স উইং। কিন্তু মাঠ দিতে পারছে না গ্রাউন্ডস কমিটি। বাস্তবতা যা বলছে, তাতে জুনের আগে লিগ শুরুর সম্ভাবনা সামান্য।
গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশের বিপর্যয়ের পর বিসিবির প্রধান নির্বাহী, প্রভাবশালী সব পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সমন্বয় সভা হয়েছিল। আলোচনা হয়েছিল ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে। সিদ্ধান্ত হয়েছিল ঘরোয়া লিগ নিয়মিত করার। প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগ লিগের পাশাপাশি সামনে দ্বিতীয় বিভাগ লিগের আয়োজন করার। ভবিষ্যতের ক্রিকেটার জোগান দেওয়ার জন্য অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্ট করার।
কিন্তু আলোচনার পর সব আগের মতোই। সবচেয়ে বড় আয়োজন প্রিমিয়ার লিগই আছে থমকে। সভার পরপরই লিগ শুরুর তোড়জোড় শুরু করেছিল উইমেন্স উইং। কিন্তু বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাঠের সঙ্কট।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে চলছে সংস্কার কাজ। অন্যান্য মাঠগুলি ব্যস্ত ছিল ছেলেদের প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ লিগ আয়োজন নিয়ে। এখন শুরু হচ্ছে প্রিমিয়ার লিগ। ছেলেদের ক্রিকেটের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে মেয়েদের ক্রিকেটের উদ্যোগ।
বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির ম্যানেজার আব্দুল বাতেন মহাব্যস্ত। ইমার্জিং কাপের খেলা হলো কক্সবাজার, চট্টগ্রামে। কক্সবাজরে এখন হবে যুব বিসিএল। ছেলেদের প্রিমিয়ার লিগ শুরু হচ্ছে। আর শের-ই-বাংলার সংস্কার কাজ তদারকি তো আছেই। এই ব্যস্ততার মধ্যে মেয়েদের লিগ নিয়ে ভাবার ফুরসত বোধহয় মিলছে সামান্যই।
বিসিবির উইমেন্স উইংয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই ‘দুই-একদিন’ অনেকদিন ধরেই চলছে। দেখার পালা শেষ হচ্ছে না।
উইমেন্স উইংয়ের চেয়ারম্যান এমএ আওয়াল চৌধুরীকে মনে হলো এই বাস্তবতার কাছে অসহায়। পরিস্থিতি মেনে নিয়ে এই বিসিবি পরিচালক জানালেন, তারা বিকল্প ভাবছেন।
“আমরা তো প্রস্তুত। কিন্তু মাঠ নেই। এত এত খেলা ছেলেদের, মাঠ পাওয়া আসলেই মুশকিল। এখন যা অবস্থা, তাতে মনে হয় না জুনের আগে আমরা লিগ আয়োজন করতে পারব। বৃষ্টির সময় থাকবে। তবু আশা করি, খুব ঝমেলা হবে না।”
“আমরা ভাবছি ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপটা আগে আয়োজন করে ফেলব। এটা তো বিভাগীয় পর্যায়ে হবে, ঢাকার বাইরে। তাই সমস্যা হবে না।”
মাঠের সঙ্কটে ছেলেদের ঢাকা লিগ ঢাকার বাইরে হওয়ার নজির আছে। কিন্তু মেয়েদের লিগের যা বাস্তবতা, তাতে ঢাকার বাইরে আয়োজনের এই বিশাল খরচ বিসিবি বা ক্লাবগুলো, দুই পক্ষের জন্যই কঠিন।
মেয়েদের সময় কাটছে তাই অপেক্ষায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কোনো সূচি নেই সামনে। নেই ঘরোয়া ক্রিকেট বা ক্যাম্প। জাতীয় দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদের কণ্ঠে উঠে এলো হতাশা।
“হতাশ তো অবশ্যই। খেলা নেই, মেয়েদের সময় কাটছে শুয়ে বসে। মাঠ না পেলে কিছু করারও নেই। তবে আমাদের পারফরম্যান্স এমনিতেই ভালো না। বসে থাকলে আরও মরচে পড়ে যাবে। দ্রুত খেলা আয়োজন করতে পারলেই ভালো।”
“আমরা আমাদের চেয়ারম্যানের দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করি উনি কিছু করবেন। অন্তত ন্যাশানাল চ্যাম্পিয়নশিপ করলেও কিছু হয়।”
রুমানা যার কাছ থেকে নেতৃত্ব পেয়েছেন, সেই জাহানারা আলম মনে হলো বাস্তবতা মেনেই নিয়েছেন। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে দলের ব্যর্থতার রেশ এখনও রয়েছে তার মনে। লিগ শুরুর অপেক্ষায় না থেকে নিজের মতো চালিয়ে যাচ্ছেন অনুশীলন।
“বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে আগে বিসিবি আমাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল। অনুশীলন ক্যাম্প ছিল কক্সবাজারে। কিন্তু আমরা পারফরম্যান্সে সেই প্রতিদান দিতে পারিনি। এখনও বিসিবির ওপর আস্থা রাখছি। মাঠ না পেলে তো কিছু করার নেই।”
“লিগে দেরি হচ্ছে বলে আমি ঠিক হতাশ নই। হ্যাঁ, খেলা হলে তো ভালো লাগেই। তবে আমি নিজের মতো করেই অনুশীলন করছি। জিম করছি, ট্রেনিং করছি একাডেমিতে। মেয়েদের আরও অনেকেই নিজের মত করে ট্রেনিং করার চেষ্টা করছে বলে জানি।”
জাহানারা বা বাকিদের এই প্রচেষ্টা অবশ্যই দারুণ। তবে খেলা না হলে এই উদ্যমেও ভাটা পড়বে নিশ্চিত।
মাঠ নেই বলে লিগ নেই, মেয়েদের ক্রিকেটের বাস্তব চিত্রটাও ফুটে উঠছে এতে।