অবশেষে থামছে মিসবাহর পথচলা

ইংল্যান্ড সফর দিয়ে বিদায় নিচ্ছেন? নাকি অস্ট্রেলিয়া? নইলে কবে! গত এক-দেড় বছর ধরে পাকিস্তানের প্রতিটি সিরিজের আগে এই প্রসঙ্গ ছিল অবধারিত। অবশেষে মিলল সেটির সুনিশ্চিত উত্তর। পথচলায় ইতি টানার ঘোষণা দিলেন মিসবাহ-উল-হক।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2017, 09:39 AM
Updated : 6 April 2017, 04:25 PM

আগের দিনই উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটারদের একজন মনোনীত হওয়ার খবর পেয়েছেন। পর দিনই জানিয়ে দিলেন বিদায়ের খবর। বৃহস্পতিবার লাহোরে সংবাদ সম্মেলনে মিসবাহ জানিয়েছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে আসছে টেস্ট সিরিজ খেলেই বিদায় জানাবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে।

বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে মিসবাহ জানালেন, কোনো চাপে নয়, নিজেই নিয়েছেন এই সিদ্ধান্ত।

“এটিই আমার শেষ সিরিজ, পিসিবি প্রধানকে সেটি জানিয়েছি। চেষ্টা করব, দারুণ কিছু করে বিদায় নিতে।”

“আরব আমিরাতে ইংল্যান্ড সিরিজ শেষেই (২০১৫ সালের অক্টোবরে) আমি বিদায় নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু ব্যপার ছিল, যে কারণে খেলা চালিয়ে যেতে হয়েছে। এখন সব ঠিক আছে। আমাকে কেউ চাপ দেয়নি বা কিছু নির্দেশ দেয়নি। নিজেই উপলব্ধি করেছি, পুরোপুরিই নিজের সিদ্ধান্ত।”

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ যখন শেষ হবে, মিসবাহর বয়স তখন ৪৩ পূর্ণ হতে বাকি থাকব দুই সপ্তাহ। ১৯৪৮ সালে স্যার গাবি এলেনের পর এত বেশি বয়সে টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দেননি আর কেউ।

২০০১ সালে নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট ম্যাচ দিয়েই মিসবাহর আন্তর্জাতিক অভিষেক। পরে কয়েক দফায় খেলেছেন আরও চার টেস্ট, ওয়ানডেতেও ছিল আসা-যাওয়া। দল থেকে ছিটকেও পড়েন লম্বা সময়ের জন্য। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে পুনরুজ্জীবন ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে।

টি-টোয়েন্টি থেকে ওয়ানডে ও টেস্ট, সব সংস্করণেই পাকা করেন জায়গা। ২০১০ সালে ফিক্সিং বিতর্কে জর্জরিত দুঃসময়ের মিসবাহকে দেওয়া হয় অধিনায়কত্ব। তার নেতৃত্বেই টালমাটাল সময়টা কাটিয়ে ওঠে পাকিস্তান।

পাকিস্তান টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথমবার শীর্ষে ওঠে মিসবাহর নেতৃত্বেই। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করাসহ টেস্টে দল পেয়েছে অসাধারণ কিছু সাফল্য। ব্যাট হাতে নিজেও খেলেছেন দারুণ সব ইনিংস। গড়েছিলেন টেস্টে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও।

টি-টেয়েন্টিকে বিদায় জানিয়েছিলেন ২০১২ সালে। ২০১৫ বিশ্বকাপ শেষে ওয়ানডেকে। এবার টেস্টের পালা। গত কিছুদিনে সাদা পোশাকে মলিন তার ও দলের পারফরম্যান্স। টানা ছয় টেস্ট হেরেছে পাকিস্তান। মিসবাহর ব্যাটেও নেই রানের সেই জোয়ার। তাই গুঞ্জন ছিল, বিদায়ের ঘোষণা আসছে যে কোনো সময়ই।

এখনও পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন ৭২টি, রান ৪ হজার ৯৫১। ব্যাটিং গড় এক সময় ছিল পঞ্চাশের ওপর। গত কিছু দিনের রান খরায় সেটি নেমে হয়েছে ৪৫.৮৪। সেঞ্চুরি ১০টি, পঞ্চাশ ৩৬টি।

পাকিস্তানকে সবচেয়ে বেশি ৫৩ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিসবাহ। সবচেয়ে বেশি জয়ও তার নেতৃত্বেই, ২৪টি। পাকিস্তানকে ১৫ টেস্ট জয়ে নেতৃত্বও দিতে পারেননি আর কেউ।

শেষ সিরিজেও পাকিস্তানের একটি অপূর্ণতা ঘোচানোর মিশন নিয়ে যাচ্ছেন মিসবাহ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে পাকিস্তান টেস্ট সিরিজ জিততে পারেননি কখনোই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের যে দশা, তাতে এবার মিসবাহদের সুবর্ণ সুযোগ।