ব্যাখ্যা খুঁজে বেড়াচ্ছেন ব্যাটিং কোচও

সুরঙ্গা লাকমলের শেষ বলটি হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উল্টো দিকে হাঁটা ধরলেন সাকিব আল হাসান। মন্থর পায়ে তাকে অনুসরণ করলেন মুশফিকুর রহিম। সীমানার কাছে দাঁড়ানো বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাবিরা তখনও বোঝার চেষ্টা করছেন, শেষ চার ওভারে কি হল মাঠে?

ক্রীড়া প্রতিবেদক কলম্বো থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2017, 02:27 PM
Updated : 16 March 2017, 03:57 PM

সামারাবিরা নিজে আঁটসাঁট ব্যাটিংয়ের প্রতিমূর্তি। অসীম ধৈর্য নিয়ে খেলতেন বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট। তার শিষ্যদের মধ্যে ধৈর্যের অভাব বড় বেশি। কলম্বোয় আরও একবার দেখা গেল তার প্রদর্শনী। তিনি শেখাতে পারেন, পরিস্থিতি বোঝাতে পারেন, কিন্তু মাঠে গিয়ে তো আর খেলে দিতে পারবে না।

পি সারা ওভালে বাংলাদেশের শততম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসেন সামারাবিরা। দেখেই বোঝা গেল কতটা বিব্রত শিষ্যদের শেষের ব্যাটিংয়ে। সংবাদ সম্মেলনে আসার সময়ই জানেন, কী প্রশ্ন আসতে যাচ্ছে। মজা করেই বললেন, আবার কিন্তু একই প্রশ্ন করো না। তার শিষ্যরা বারবার একই ভুল করে যাওয়ায় প্রশ্নটাও হল প্রায় একই। শেষ চার ওভারে যে ব্যাটিং দেখা গেল সেটা কি টেস্ট ব্যাটিং?

“এই মুহূর্তে আমার কোনো ধারণাই নেই। আমার মনে হয়, একটি বাজে শট আমাদের সমস্যায় ফেলেছে। ইমরুল কায়েসের আউটটা। আমি স্কিল শিখাতে পারি কিন্তু আপনি যখন টেস্ট খেলবেন তখন প্রতিপক্ষ কি করছে সে ব্যাপারে তো আপানার সতর্কতার দরকার হবে। আমি মনে করি, মাঠে আপনাকে চতুর হতে হবে। আমাদের ভাগ্য ভালো আমরা পাঁচ উইকেটে শেষ করতে পেরেছিল। আমি ভেবেছিলাম আমরা ছয় উইকেটে শেষ করবো।”

দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ২১৪/৫। ৭ বলের মধ্যে ৬ রানে ইমরুল, তাইজুল ইসলাম আর সাব্বির রহমানকে হারায় বাংলাদেশ। ফিরে যেতে পারতেন সাকিব আল হাসানও। একবার তার ক্যাচ ছাড়েন উপুল থারাঙ্গা, অন্যবার একটুর জন্য ফিল্ডারের হাতে যায়নি ক্যাচ।

চল্লিশের ঘরে গিয়ে আউট হয়েছেন তামিম ইকবাল, সাব্বির। টানা তৃতীয়বার অর্ধশতক ছুঁয়ে ফিরে গেছেন সৌম্য সরকার। থিতু হয়ে বিদায় নিয়েছেন একবার জীবন পাওয়া ইমরুল। শিষ্যদের বড় ইনিংস খেলার মানসিকতা না থাকায় হতাশ সামরাবিরা।

“প্রথম পাঁচে ব্যাটিং করলে আপনাকে শতক করতে হবে। আপনি যদি পঞ্চাশেই খুশি থাকেন তা যথেষ্ট নয়। গলে দেখুন কি হয়েছে। ‘নো’ বলের কল্যাণে প্রথম বলে বেঁচে যাওয়া কুসল মেন্ডিস বড় শতক করেছে, ১৯৪ পর্যন্ত গেছে। ভালো পিচে টেস্ট ক্রিকেটে রান করতেই হবে।”

উদাহরণ আছে কলম্বোতেও; ১৩৮ রানের দারুণ ইনিংস খেলেছেন দিনেশ চান্দিমাল। অষ্টম ও নবম উইকেটে দুবার গড়েছেন ৫৫ রানের জুটি। শেষ তিন উইকেটে ১৪৩ রান যোগ করেছে শ্রীলঙ্কা।  

রান করতে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান নির্ভরশীল সহজাত ব্যাটিংয়ের ওপর। ওয়ানডে ক্রিকেটে এভাবে সাফল্যও মিলেছে। ব্যাটিং কোচের বিশ্বাস, টেস্ট ক্রিকেটে এই পরিকল্পনা সব সময় কাজ করবে না। সেখানে খেলতে হবে পরিস্থিতি অনুযায়ী।

“আপনি সহজাত ক্রিকেট খেলতে পারেন কিন্তু প্রতিপক্ষ কি করছে সে ব্যাপারেও আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। এটাই ক্রিকেট। প্রতিপক্ষ কি করছে, কোথায় ফিল্ডার রেখেছে, কি আসছে- এগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি প্রতিটি বলে সহজাত ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। এটা ওয়ানডে ক্রিকেট নয়। পাঁচ দিনের ক্রিকেটে আপনাকে মানসিকভাবে আরও দৃঢ় হতে হবে।”

গত সেপ্টেম্বরে সামারাবিরা কোচ হয়ে আসার পর এনিয়ে সাত টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। প্রতি ম্যাচেই দেখা যাচ্ছে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি। কেন এমন হয় এখনও উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি।

“সত্যি বলতে কী আমার কোনো ধারণাই নেই। প্রতিবার একই ঘটনা ঘটছে। যখন ধস নামে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।”

টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের মেলে ধরতে এর দ্রুত সমাধান খুব জরুরি বাংলাদেশের জন্য।