প্রথম দিনের খেলা শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৩৮ রান। দিনেশ চান্দিমাল ৮৬ ও রঙ্গনা হেরাথ ১৮ রানে ব্যাট করছেন। অবিচ্ছিন্ন অষ্টম উইকেটে এরই মধ্যে গড়েছেন ৪৩ রানের জুটি।
২১০ বলের ইনিংসে চারটি চার হাঁকানো চান্দিমাল দুবার বেঁচেছেন ‘বেনিফিট অব ডাউট’ পেয়ে। ৩৮ রানে স্নিকো না থাকায় স্লিপের ক্যাচ বাতিল হয়ে যায়। ৮ রান পর আউট ফিল্ডে দারুণ এক ক্যাচ ধরেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সেটিও ক্যাচ হয়নি বল মাটি ছুঁয়েছে কি না সেই সন্দেহ থাকায়।
বাংলাদেশের কোনো ভেন্যুতে এই ম্যাচ হলে চিত্রটা ভিন্ন হতো কোনো সন্দেহ নেই। যদিও প্রতিপক্ষের শততম টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে ছোটোখাটো আয়োজন করেছে শ্রীলঙ্কা। তাতে ম্যাচ শুরুর আগে মাঠে দেখা মিলেছে এক টুকরো বাংলাদেশের। ক্রিকেটাররা পেয়েছেন মেডেল, স্কুল শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে দিয়েছেন গার্ড অব অনার।
কঠিন সময়ে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানো ক্রিকেটাররা মাঠে গেয়েছেন ঐক্যের জয়গান। কেউ ভালো কিছু করলে ছুটে গিয়ে পিঠ চাপড়ে দিয়ে আসা, ছুটে গিয়ে কোনো একটা পরামর্শ দিয়ে আসার ব্যাপারটি চোখে পড়েছে পুরো দিন জুড়ে।
সেই ২০০৬ সালে বগুড়া টেস্টে শেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টস জিতেছিল বাংলাদেশ। তারপর থেকে কয়েন ভাগ্য লঙ্কানদের দিকে। টানা একাদশ টেস্টে টস জেতা দলটি নেয় ব্যাটিং। সাধারণত পি সারা ওভালে টস জিতলে আগে ফিল্ডিং নেওয়া হয়। যে কারণে নেওয়া সেই বাউন্স এবার নেই, উইকেট থেকে সহায়তা পাবেন স্পিনাররা। স্বাগতিকরা ব্যাটিংয়ে শক্তি বাড়াতে দলে নিয়েছে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে, খেলছে এক পেসার নিয়ে।
টেস্টে প্রথমবারের মতো টানা তিন মেডেন দিয়ে শুরু করা বাংলাদেশের আঁটসাঁট বোলিংয়ে প্রতিটি রান সংগ্রাম করে নিতে হয়েছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের। কয়েকবার অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া দিমুথ করুনারত্নেকে ফিরিয়ে শুরুটা করেন মুস্তাফিজুর রহমান। গালিতে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরা মিরাজ বিদায় করেন পরের দুই ব্যাটসম্যানকে।
গল টেস্টে শতক করা কুসল মেন্ডিস ও উপুল থারাঙ্গা তরুণ অফ স্পিনারের শিকার। দারুণ এক বলে স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে জমা পড়েন থারাঙ্গা। তার আগে মুশফিকের ত্বরিত স্টাম্পিংয়ে বিদায় নেন আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মেন্ডিস।
হাত থেকে ছুটেনি কোনো সুযোগ। ফিল্ডিংয়ে হয়নি বড় কোনো ভুল। সারাক্ষণ চাপটাও ধরে রেখেছিল অতিথিরা। দারুণ বোলিং করেছেন বোলাররা। বোলার পরিবর্তন, ফিল্ডিং সাজানো নিয়ে সারাক্ষণ তৎপর ছিলেন মুশফিক। মাঠে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো।
৩৫ রানে ৩ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে চান্দিমাল ও আসেলা গুনারত্নের ব্যাটে। লাঞ্চ আরও মধুর করে তুলেন শুভাশীষ রায় চৌধুরী। প্রথম সেশনের শেষ ওভারে ফিরে জুটি ভাঙেন ডানহাতি এই পেসার। ফুল লেংথ বল প্যাডে লাগার পর আর আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করেননি গুনারত্নে, ৪ উইকেটে শ্রীলঙ্কার রান তখন ৭০।
গলেও প্রথম সেশনে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে বেঁধে রেখেছিল মুশফিকের দল। লাগাম ছুটেছিল পরের দুই সেশনে। দ্বিতীয় সেশনে ডি সিলভার সঙ্গে ৬৬ রানের জুটিতে আবার তার পুনরাবৃত্তির শঙ্কা। সহজেই খেলছিলেন দুই ব্যাটসম্যান। তাইজুল বল করার আগে এগিয়ে গেলেন সাকিব। খানিকক্ষণ কথা বললেন দুই বাঁহাতি স্পিনার। সেই ওভারেই পুল করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরলেন ডি সিলভা।
চা-বিরতিতে যাওয়ার আগে আর কোনো উইকেট নিতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। ব্যক্তিগত ৫৫ রানে চান্দিমালের ক্যাচ পড়ে মুশফিকের একটু সামনে।
এই মাঠে নিজের প্রথম অর্ধশতক পাওয়া চান্দিমালের সঙ্গে জমে উঠে নিরোশান ডিকভেলার জুটি। ইনিংসে প্রথমবার রান রেট ওঠে তিনের ওপরে। সহজেই খেলছিলেন দুই ব্যাটসম্যান। উইকেট ছুড়ে অতিথিদের লাগাম শক্ত করার সুযোগ করে দেন ডিকভেলা।
তৃতীয় সেশনের শুরুতে সাকিবের লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ডিকভেলা। স্বাগতিকদের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান গলে দ্বিতীয় ইনিংসেও আউট হয়েছিলেন রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে। স্পিনের বিপক্ষে তার আক্রমণের প্রধান অস্ত্র রিভার্স সুইপই। অনুশীলনে তাকে এই শট প্রচুর খেলতে দেখা যায়।
প্রথম টেস্টে ৫১ ও ৩৩ রান করা দিলরুয়ান পেরেরা এবার দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। চা-বিরতির পর প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আসা মুস্তাফিজের স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে সৌম্যর তালুবন্দি হন এই অলরাউন্ডার।
শেষ বেলায় চান্দিমালকে সঙ্গ দেন হেরাথ। দুই জনে টিকে আছেন ১৮.৩ ওভার। দ্বিতীয় দিন শুরুতেই এই জুটি ভাঙতে চাইবে বাংলাদেশ।
দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ ও মিরাজ। তাইজুল, শুভাশীষ, সাকিবের উইকেট একটি করে।
শ্রীলঙ্কার এই মাঠ উপমহাদেশের সবচেয়ে ফলদায়ী ভেন্যু। ২০ টেস্টের ১৬টিতেই ফল হয়েছে। বাংলাদেশ এখানে খেলা তিন ম্যাচেই হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। দুঃস্বপ্নের ভেন্যুতেই শততম টেস্টে নতুন শুরুর ইঙ্গিত দিল বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৮৩.১ ওভারে ২৩৮/৭ (করুনারত্নে ৭, থারাঙ্গা ১১, মেন্ডিস ৫, চান্দিমাল ৮৬*, গুনারত্নে ১৩, ডি সিলভা ৩৪, ডিকভেলা ৩৪, পেরেরা ৯, হেরাথ ১৮*; মুস্তাফিজ ২/৩২, শুভাশীষ ১/৪৭, মিরাজ ২/৫৮, তাইজুল ১/৩৪, সাকিব ১/৪৩, মোসাদ্দেক ০/১১)