হাবিবুলের অধিনায়ক মাশরাফি, মাশরাফির দলে গাজী

বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৫০ টেস্ট খেলেছেন হাবিবুল বাশার। ছুঁয়েছেন ৩ হাজার রান। দলের প্রতিকূল সময়ে অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে সামলেছিলেন দারুণভাবে। মাশরাফি বিন মুর্তজা টেস্টে বাংলাদেশের সফলতম পেসার। তাকে পেয়েই প্রথম বিশ্বমানের কোনো পেসার পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে চোটের থাবায় এখন আর টেস্ট খেলতে পারছেন না। বাংলাদেশের শততম টেস্ট খেলার সময়টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য দুজন বেছে নিয়েছেন নিজেদের পছন্দের সেরা বাংলাদেশ টেস্ট একাদশ।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2017, 03:45 AM
Updated : 15 March 2017, 04:32 AM

হাবিবুল বাশারের একাদশ:

১. তামিম ইকবাল

২. ইমরুল কায়েস

৩. হাবিবুল বাশার

৪. মুমিনুল হক

৫. মুশফিকুর রহিম

৬. সাকিব আল হাসান

৭. খালেদ মাসুদ পাইলট

৮. মোহাম্মদ রফিক

৯. মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক)

১০. তাপস বৈশ্য

১১. শাহাদাত হোসেন

(দ্বাদশ: রাজিন সালেহ)

কেন এই একাদশ:

নিজের একাদশে শুরুতে নিজেকে রাখতে প্রবল আপত্তি ছিল হাবিবুলের। পারফরম্যান্সে যদিও জায়গাটা প্রাপ্যই। তবু নৈতিক জায়গা থেকে রাখতে চাচ্ছিলেন না। ডন ব্র্যাডম্যানও নিজের পছন্দের একাদশে নিজেকে রেখেছেন জানার পর অবশ্য সিদ্ধান্ত বদলালেন, “স্যার ডন রেখেছেন? তাহলে রাখতে পারি। উনিই যখন নিজেকে রেখেছেন, আমি কোথাকার কে! (হাসি)”

“তামিম তো অটোমেটিক চয়েজ। সঙ্গে ইমরুলকে রাখছি। শাহরিয়ার নাফীস বা আমার কাছের বন্ধু জাভেদ ওমর থাকতে পারত। তবে গত ২-৩ বছরের পারফরম্যান্সে ইমরুল ওদের ছাড়িয়ে গেছে। নিয়মিত রান করেছে, বড় রান করেছে, রেকর্ড গড়েছে।”

“তিনে তো নিজে। চারে মুমিনুলকে রাখব। এর মধ্যেই যা করেছে, তাতেই সে দলে থাকতে পারে। সঙ্গে আমি সম্ভাবনাটাও যোগ করেছি। মুমিনুল অনেক অনেক দূর যাবে।”

“পাঁচ-ছয়ে মুশফিক ও সাকিবের জায়গা নিয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন দেখছি না। সাতে পাইলট। আমি টেস্টে সবসময়ই স্পেশালিস্ট কিপারের পক্ষপাতি। আমি যতদিন খেলেছি ও খেলা দেখেছি, আমার দেখা বাংলাদেশের সেরা কিপার সে। টেকনিক্যালি সেরা তো বটেই, মাঠ চাঙা রাখা, উৎসাহ দেওয়া, কথা বলা, প্রতিপক্ষকে খোঁচানো বা বিরক্ত করা, সবকিছুই সে দারুণভাবে করত। আর ব্যাটিং তো পারতই। দলের প্রয়োজনের সময় দারুণ সব ইনিংস আছে ওর। সব মিলিয়ে আদর্শ কিপার।”

“স্পিনে মোহাম্মদ রফিক আমাদের সেরা। সঙ্গে সাকিব তো আছেই। আমার দুর্ভাগ্য, অধিনায়ক থাকার সময় রফিক ও সাকিবকে একসঙ্গে পাইনি। কিছুটা পেয়েছি, তবে সাকিব তখন কেবল এল। রফিক ও পরে পরিণত সাকিবকে পেলে আমার দল আরও টেস্ট জিতত।”

“স্পিনার দুজন থাকায় আমি পেসার নিচ্ছি তিন জন। প্রথম পছন্দ মাশরাফি। কারণ মাশরাফি ইজ মাশরাফি! ওর রেকর্ড হয়ত দারুণ দেখাচ্ছে না, কিন্তু পারফরম্যান্স দারুণ ছিল। এমন কিছু স্পেল ওর ছিল, যেগুলো বিশ্ব মানের যে কোনো ফাস্ট বোলারও গর্ব করবে। বাংলাদেশের কোনো পেসারকে প্রতিপক্ষ ভয় পাচ্ছে, এটাও আমি স্লিপে দাঁড়িয়ে নিয়মিত দেখতাম ওর বোলিংয়ে। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেখেছি, নাসের হুসেইনের মত ব্যাটসম্যান মাশরাফির বলে কেঁপে গিয়েছে।”

“মাশরাফি ছাড়া টেস্টে আমাদের সফল পেসার বলতে শাহাদাত। কিছু ভালো পারফরম্যান্স্ও আছে। তৃতীয় পেসার হিসেবে তাপস বৈশ্যকে রাখছি। ওর ক্ষেত্রেও ফিগার সত্যিটা বোঝাতে পারছে না। একসময় দারুণ সার্ভিস দিয়েছে দলকে। বিশেষ করে ম্যাশের চোটের সময়গুলোতে একাই দলকে টেনেছে। এক সময় বেশ জোরে বোলিং করত।”

“একটা প্রশ্ন আসতে পারে আশরাফুলকে কেন রাখিনি। আশরাফুল রান করেছে। কিছু ভালো ইনিংস আছে। ভারতের বিপক্ষে ১৫৮ রানের ইনিংসটি দুর্দান্ত ছিল। কিন্তু এর পরই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যখন ওর রান করাটা দলের জন্য দরকার ছিল, সে পারেনি। যেটা বলতে চাচ্ছি, দলের প্রয়োজনের সময় আমি ওকে পাইনি। ৬১ টেস্ট খেলে পরিসংখ্যানও খুব সমৃদ্ধ নয়।”

“আমার দলে অধিনায়ক মাশরাফি। হয়ত মাত্র একটি টেস্টে নেতৃত্ব দিতে পেরেছে। কিন্তু আদর্শ অধিনায়কের সবকিছুই ওর মধ্যে আছে। ওর নেতৃত্বে খেলতে পারলে আমারও দারুণ লাগত। দলে দ্বাদশ ব্যাক্তি রাখছি রাজিন সালেহকে। মূলত ফিল্ডিংয়ের জন্য। শেষ মুহূর্তে কেউ ইনজুরড হলে ব্যাটিং তো পারবেই।”

মাশরাফির একাদশ:

১. তামিম ইকবাল

২. ইমরুল কায়েস

৩. হাবিবুল বাশার

৪. মুশফিকুর রহিম

৫. মোহাম্মদ আশরাফুল (ভবিষ্যতে হয়ত মুমিনুল!)

৬. সাকিব আল হাসান

৭. খালেদ মাসুদ পাইলট

৮. মোহাম্মদ রফিক

৯. সোহাগ গাজী

১০. শাহাদাত হোসেন

১১. মুস্তাফিজুর রহমান

(দ্বাদশ: শুধু ফিল্ডিংয়ের জন্য হলে সাব্বির)

কেন এই একাদশ:

“শুরু থেকে বললে, তামিমের তো বিকল্পই নেই। ইমরুল গত কয়েক বছরে আগে-পরের অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। দুজনের জুটির রসায়নও ভালো।”

“তিনে সুমন ভাই (হাবিবুল) নিশ্চিত পছন্দ। মুশফিককে নিচ্ছি স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে, খেলবে তাই চারে। পাঁচে আশরাফুল। সুমন ভাই বা আশরাফুলের বদলে ভবিষ্যতে হয়ত মুমিনুল বিবেচনায় আসবে। সেই সামর্থ্য ওর আছে। তবে আপাতত রাখছি না।”

“স্পেশালিস্ট কিপার নেব, পাইলট ভাই। এখনও পর্যন্ত আমাদের সেরা কিপার তিনি। বলা যায় পরিপূর্ণ উইকেট কিপার ছিলেন। উনি ব্যাট করবেন সাতে।”

“আটে অবশ্যই রফিক ভাই। গ্রেট স্পিনার আমাদের। বিশা-হৃদয় বোলার। এরপর তিন পেসার রাখা যায়। তবে বৈচিত্রের জন্য আমি একজন অফ স্পিনার চাই। এজন্য রাখছি সোহাগ গাজীকে।”

“জানি, সোহাগ এখনও অসাধারণ কিছু করেনি। তবে যতটুকু খেলেছে, শুরুটা দারুণ। ১০ টেস্টে ৩৮ উইকেট মানে প্রায় টেস্ট প্রতি ৪টা উইকেট। একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিক। হয়ত সম্ভাবনার পুরোনো সে পূরণ করতে পারেনি। এখনও শেষও হয়ে যায়নি। তবু যতটুকু করেছে, তাতেই রাখতে চাই। মিরাজও আছে। শুরুটা দারুণ করেছে। আশা করি, ভবিষ্যতে দল গড়তে হলে ওকে রাখতে পারব।”

“এরপর দুই পেসার। প্রথম পছন্দ অবশ্যই শাহাদাত। আমাদের পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চারবার ৫ উইকেট ওর। দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, ভারতের ব্যাটিং লাইন আপের বিপক্ষে ৫ উইকেট আছে। ওকে রাখতেই হবে।”

“আমার দ্বিতীয় পেসার মুস্তাফিজ। জানি খুবই অবাক হবেন সবাই। ক্যারিয়ারের মাত্র শুরু ওর। আমি ওকে মূলত রাখছি সম্ভাবনার জন্য। যদি টেস্ট ক্রিকেট সিরিয়াসলি খেলতে পারে, বাংলাদেশের সম্পদ হবে ও। আর অন্য কোনো পেসারকে পারফরম্যান্সের জন্য রাখতে পারছি না, এটাও একটা কারণ।”

“নিজেকে আমি বিবেচনা করছি না। হ্যাঁ, রেকর্ডে হয়ত আমাকে রাখা যায়। কিন্তু আমি নিজে দল গড়ে নিজেকে রাখতে চাই না।”

“দ্বাদশ ব্যাক্তি শুধু ফিল্ডিংয়ের জন্য হলে সাব্বিরকে রাখব। এমনিতে আমি মনে করি টেস্ট জমানায় আমাদের সব সময়ের সেরা ফিল্ডার সাকিব। সে যেহেতু একাদশেই আছে, আমার ভাবনায় আসছে সাব্বির ও নাসির। তবে সব জায়গায় ফিল্ডিং, থ্রোয়িং, অলরাউন্ড ফিল্ডার বিবেচনায় সাব্বির একটু এগিয়ে।”

“আমার অধিনায়ক সুমন ভাই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের খুব কঠিন সময়ে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। অনেক প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা ছিল ওই সময়। সুমন ভাই দলটাকে গুছিয়েছেন, স্থিতিশীল করেছেন। মুশফিককে সহ-অধিনায়ক রাখছি।”