মাহমুদউল্লাহকে দলে রাখা না রাখা নিয়ে অনেক কিছু হলো গতকাল। আপনি আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ নন। বাইরে থেকে কিভাবে দেখেছেন?
মাশরাফি বিন মুর্তজা: প্রথমে বলতে চাই, শেষ পর্যন্ত যা হয়েছে ভাল হয়েছে। গত কয়েকদিনে অনেক কিছুই কানে আসছিল। কালকে একেকবার একেকটা শুনছিলাম। পরিষ্কার কিছু তো জানি না। অস্থিরতা ছিল। তারপর যেভাবেই হোক ব্যাপারটা সেটেলড হয়েছে, এটাই আসল।
অস্থিরতা মানে, আপনার নিজের?
মাশরাফি: অস্থির তো লেগেছেই। কালকে একটা বিজ্ঞাপনের শুটিং ছিল, সেখানেও অস্থির ছিলাম। একটা ভয়ও ছিল, কী হয় না হয়...! শেষ পর্যন্ত বোর্ড প্রধান নিজে পদক্ষেপ নিয়ে একটি ভালো সমাধান করেছেন। আপনাদের প্রেস কনফারেন্সে ডেকে নিয়ে জানিয়েছেন। ভালো ভাবেই শেষ হয়েছে।
আড়াল থেকে আপনার ভুমিকা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে…
মাশরাফি: হ্যাঁ, ব্যাপারটা আমার কাছেও এসেছে। টুকটাক কথা হয়েছে, এমন বড় কিছু নয়। সমাধানটাই আসল। বোর্ড প্রধান উদ্যোগ নিয়েছেন। পজিটিভ সমাধান হয়েছে। শেষ পর্যন্ত যা হয়েছে, রিয়াদের জন্য ভালো হয়েছে।
মাহমুদউল্লাহ না থাকলে অধিনায়ক হিসেবে আপনি মিস করতেন?
আরও ব্যাপার আছে। সামনের সময়টুকু আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ। র্যাঙ্কিংয়ে জায়গা ধরে রাখতে এই সিরিজ গুরুত্বপূর্ণ। এরপর আয়ারল্যান্ড সিরিজ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তারপর পাকিস্তান সিরিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে রিয়াদকে হারানো আমাদের জন্য ভালো কিছু হবে না। নতুন কাউকে এই সময়ে আনা, গুরুত্বপূর্ণ সময় বা বড় টুর্নামেন্টে কেমন করবে, আমি ঠিক নিশ্চিত নই। নতুন ওই ক্রিকেটারের জন্যও চাপ হয়ে যাবে।
কিন্তু রিয়াদের ওপর ভরসা করতে পারি। ২০১১ বিশ্বকাপ বলুন বা ২০১৫, বড় টুর্নামেন্টে বড় ম্যাচে ভালো করেছে। সে জানে এসব জায়গায় কিভাবে কী করতে হয়।
সবশেষ নিউ জিল্যান্ড সিরিজটা ওর ভালো যায়নি। কিন্তু আগের সিরিজেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কঠিন পরিস্থিতিতে দারুণ ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছে। তাছাড়া সে সিনিয়র ক্রিকেটার। ড্রেসিং রুমেও ওর অবদান আছে, ভূমিকা আছে।
টেস্টের কথা আলাদা। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে বলতে পারি, সীমিত ওভারে রিয়াদ এখনও আমার দলের ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারদের একজন। লোকে হয়ত রান-উইকেট দেখে। অধিনায়ক হিসেবে আমি আগে দেখি দলের প্রয়োজনের সময় কে কতটা দিতে পারে। সেখানে রিয়াদের বিকল্প এখনও দেখি না। এখনই ছুঁড়ে ফেলা তাই সমাধান নয়। বরং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ওকে সেরা চেহারায় ফিরিয়ে আনতে পারলে দলের লাভ।
কিন্তু যেভাবে সবকিছু হলো, তাতে মাহমুদউল্লাহর ওপর চাপটা তো এখন এভারেস্টসম। পারফর্ম করা আরও কঠিন হলো না?
আমি ওকে বলব, চাপ না ভেবে এটাকে সুযোগ ভাবতে। মাঠে কেমন করতে পারে, সেটা নিয়ে ভাবতে। আর যেহেতু দলে আছে, তার মানে বোর্ড প্রেসিডেন্ট, নির্বাচকরা ওকে সম্মান করেছে। চাইব সেও পারফরম্যান্স দিয়েই সিদ্ধান্তটিকে সম্মান জানাক।
মাহমুদউল্লাহর জন্য যে চেষ্টা মাশরাফি করেছেন, সেই একই চেষ্টা সবার জন্য করেন? বা ভবিষ্যতে করবেন?
মাশরাফি: দেখুন, অফিসিয়ালি তো আমার সেরকম সুযোগ নেই। তার পরও যখন কিছু মনে হয়েছে, কাউকে নিতে চাইলে বা ধরে রাখতে চাইলে, আমি আমার মত করে বলার চেষ্টা করেছি সবসময়।
নাসিরকে নিয়ে এত কথা হয়। নাসির যখন ব্যাট হাতে রান করছিল না, আমি ওকে বেশি বেশি বোলিং করিয়ে চেষ্টা করেছি ওর আত্মবিশ্বাস ফেরাতে। চেয়েছি কিছু একটা করে জায়গা ধরে রাখুক।
আবার অনেক সময় পারিনি অনেক ক্ষেত্রে। যেটা বলতে চাচ্ছি যে, সব সময় পারা যায় না। কারণ অন্যদের কথাও তো আমার শুনতে হবে! ৫-৬ জনের মতামতের ব্যাপার। তার পর আবার একটা দলে হয়ত ৩-৪ জনকে নিয়ে প্রশ্ন থাকে। আমি তো সবার জন্য ফাইট একই সঙ্গে করতে পারব না। অন্যদের চাওয়াকেও গুরুত্ব দিতে হবে। হয়ত একজনকে নিয়ে বলতে পারি একসঙ্গে।
আমিই যে সবসময় ঠিক, তাও কিন্তু নয়। অনেক সময় কাজে লাগে না অনেক সিদ্ধান্ত। সবার ক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য। সবার সব সিদ্ধান্ত সবসময় কাজে লাগে না। এভাবেই হয়। তো আমি আমার মতো করে চেষ্টা করি, করব। কখনও পারা যায়, কখনও না।
মঙ্গলবার শততম টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। টেস্ট নিয়ে পুরোনো আক্ষেপ কি মাথাচাড়া দিচ্ছে? ‘যদি খেলতে পারতাম এই ম্যাচ!’
মাশরাফি: হতাশাটা তা সবসময়ের, একশতম টেস্ট বলে নয়। সবসময় বলেছি, সম্ভব হলে সব ফেলে টেস্টই খেলতাম। শরীরের কারণে সেটা হচ্ছে না। আলাদা করে তাই হতাশা বা আক্ষেপ নেই। দলকে শুভকামনা জানাই। শততম ওয়ানডে ম্যাচটা আমার মনে আছে। ভারতকে হারিয়েছিলাম আমরা (২০০৪ সালে, মাশরাফি ছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ)। এবার শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে হারানো না হোক, অন্তত খুব ভালো যেন খেলতে পারি। চেষ্টা করব দলের সবার সঙ্গে কথা বলতে, শুভেচ্ছা জানাতে।