এমন বছর আবার চান মুশফিক

এক-দেড় বছর বিরতিতে খেলতে নামলে প্রতিটি টেস্টই নতুন মনে হয়। প্রতিবারই মনে হয়, বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে এবার বুঝি অভিষেক হচ্ছে- কয়েকবারই শোনা গেছে মুশফিকুর রহিমের মুখে। এই বছর তার দল খেলতে পারে সব মিলিয়ে ১১ টেস্ট। অধিনায়ক চান বারবার ফিরে আসুক এমন বছর। 

ক্রীড়া প্রতিবেদক কলম্বো থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2017, 01:44 PM
Updated : 14 March 2017, 03:51 PM

কলম্বোর পি সারা ওভালে বুধবার শুরু হবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট। এই সংস্করণে যা দেশটির শততম ম্যাচ। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক শোনাচ্ছিলেন ২০০০ সালে বিকেএসপিতে টেলিভিশনে বসে ভারতের বিপক্ষে দেশের অভিষেক টেস্ট দেখার গল্প।   

“২০০০ সালে বাংলাদেশ যখন টেস্ট মর্যাদা পায়, আমি তখন বিকেএসপিতে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। সেখানে বসেই টেলিভিশনে খেলা দেখেছিলাম। ….বিশ্বাসটা ওখান থেকে জন্ম নিয়েছিল। মনে হয়েছিল, বাংলাদেশের হয়ে কোনোদিন টেস্ট খেলতে পারলে ভালো হবে। স্বপ্নটা তখন থেকেই।”

সেই স্বপ্ন এত দূর নিয়ে এসেছে মুশফিককে। কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দেওয়ায় ব্যাটসম্যানশিপে আরো অনেক দূর এগোনোর সুযোগ তার সামনে। দেশের সামনে তিনি নিজেও দেখেন নতুন উচ্চতায় যাওয়ার দারুণ সম্ভাবনা। 

“গত ১৭ বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট যত দূর এগোনোর কথা ছিল, ততটুকু হয়তো পারেনি। আমার মনে হয়, গত দুই আড়াই বছর ধরে আমরা যেভাবে ক্রিকেট খেলছি, সেভাবে খেলতে পারলে আমরা বহু দূর যেতে পারবো।”

চলতি বছর এরই মধ্যে নিউ জিল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। এখন পরীক্ষা দিচ্ছে শ্রীলঙ্কায়। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ আছে। সূচি চূড়ান্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সব মিলিয়ে হতে পারে ১১ টেস্ট।

“অন্যান্য সময় অনেক দিন পরপর আমাদের টেস্ট খেলতে হয়েছে। এটা যে কোনো দলের জন্য কঠিন। এ বছর পুরোটা ভালোভাবে খেলতে পারলে ভবিষ্যতে আমরা দল হিসেবে আরো ভালো পারফর্ম করতে পারবো।”

“এ বছর অনেক টেস্ট আছে। এমন কয়েকটি বছর যদি কাটাতে পারি তাহলে আমাদের জন্য খুব দারুণ ব্যাপার হবে। শততম টেস্ট শুরুর দিনটাও অনেক বড় একটা দিন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। অধিনায়ক হিসেবে এই ম্যাচ খেলতে পারলে এটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার হবে।”

গল টেস্ট হেরে কলম্বো এসেছে বাংলাদেশ। পিছিয়ে থাকা দলটি নিজেদের অনুপ্রাণিত করছে শততম টেস্টে খেলার রোমাঞ্চ থেকে।

“প্রতিটি টেস্টেই প্রত্যাশা থাকে। বাংলাদেশ এখন এমন একটা জায়গায় এসেছে যে, টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি যাই হোক, সবাই আশা করে যে বাংলাদেশ যে কোনো ম্যাচ জিততে পারে। এটাই একটা বড় অর্জন। এই প্রত্যাশা থেকেই খেলোয়াড়রা অনুপ্রাণিত হয় এবং মাঠে গিয়ে পারফর্ম করতে মুখিয়ে থাকে। অবশ্যই আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে যেন, শততম টেস্টে জয় নিয়ে ফিরতে পারি।”

১০ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে মুশফিকুর রহিম খেলেছেন মোটে ৫৩ টেস্ট। তার পরে এই সংস্করণে খেলা অনেকেই গেছেন তিন অঙ্কে।

বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সময় থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২১০টি টেস্ট খেলেছে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া ১৯৩। ভারত খেলেছে ১৬৪ টেস্ট। দেড়শ ছাড়িয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিউ জিল্যান্ড (১৩৯), পাকিস্তানও (১৩৭) বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। এই সময়ে জিম্বাবুয়ে খেলেছে ৫৬ টেস্ট।

“আগেও বলেছি, ১০ বছরে আমি মাত্র ৫৩টা টেস্ট খেলেছি। অথচ আমার পরে অভিষিক্ত হয়ে অনেকেই ১০০ টেস্ট বা বেশি খেলেছে। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে তাই উন্নতি করা কঠিন। ছয় মাস পর টেস্ট খেলতে নামলে দেখা যায় আগের টেস্টের পাঁচ-ছয়জন নেই। তাদেরও সময় লাগে সেট হতে।”

“টেস্ট তো একদিনে ভালো খেলে জেতা যায় না। স্কিল এবং মানসিকতার সমন্বয় লাগে। তবে এ বছর যতো খেলা আছে, বাংলাদেশ যদি এ রকম আরো দুই তিনটা বছর পায়, তবে টেস্টে একটা ভালো দল হয়ে দাঁড়াতে পারবে।”

এমন বছর যদি নিয়মিত মেলে বাংলাদেশের টেস্টে আরও ভালো না করার কোনো কারণ নেই।