আশা নিয়ে শেষ দিনে বাংলাদেশ

আগের দিনের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে খেলা শুরু হয়েছিল আগে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থেকে গেল ঘাটতিই। কালো মেঘে ঢাকা আকাশ, আলোকস্বল্পতায় চতুর্থ দিনে খেলা শেষ হলো ১১ ওভার আগেই। মেঘ করলেও বৃষ্টি আসেনি। তবে ২২ গজে উঠেছে ছোটোখাটো ঝড়। ঝড়ের নাম সৌম্য সরকার!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2017, 04:56 AM
Updated : 10 March 2017, 04:39 PM

অন্ধকার বিকেলে আলোর রেখা
 
বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামতেই মেঘ করতে শুরু করেছিল গলের আকাশে। তবে তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে একটু হলেও দূর হয়েছে ড্রেসিং রুমের মেঘ।
 
চতুর্থ দিনের বিকেলটা পার করে দিয়েছেন দুজন। শুধু পার করা নয়, সৌম্যর ব্যাটে ছিল স্ট্রোকের ফোয়ারা। ৪৪ বলে করেছেন অর্ধশতক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্রুততম অর্ধশক। তামিম খেলেছেন নির্ভরতায়।
 
দিন শেষে ৪৭ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত সৌম্য। তামিম ৪৪ বলে ১৩। কোনো উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ ৬৭।
 
লক্ষ্য ৪৫৭। তবে সেটি নয়, বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য থাকবে হয়ত শেষ দিনে সম্ভাব্য ৯৮ ওভার কাটিয়ে দেওয়া।
 
শেষ দিনেও খেলা শুরু হবে ১৫ মিনিট আগে।

চাপকে জবাব, ‘সৌম্য স্টাইল!’
 
বড় রানের বোঝা কাঁধে। টিকে থাকার চাপ। কিন্তু সৌম্য সরকারের ব্যাটিং দেখে কে বলবে! ওয়ানডের গতিতে খেলে করলেন অর্ধশতক। ম্যাচে এটি তার দ্বিতীয়!
 
শুরু থেকেই শট খেলেছেন সৌম্য। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে ধার। ৪৪ বলেই স্পর্শ করলেন অর্ধশতক। ৬ চারের সঙ্গে একটি ছক্কা। বেরিয়ে এসে হেরাথকে ফুল টস বানিয়ে উড়িয়েছেন মিড উইকেট দিয়ে।
 
আরেক পাশে আস্থার সঙ্গে টিকে তামিম। রান তার ৪০ বলে ১৩।
 
দিনের শেষ পানি বিরতি সময় বাংলাদেশের রান বিনা উইকেটে ৬৩।

দুই প্রান্তে দু রকম শুরু
 
সহজাত শট খেলেছে চলেছেন সৌম্য সরকার। আরেক প্রান্তে দারুণ আঁটসাঁট তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের দুই ওপেনারের শুরুটা দুই রকম। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, পড়েনি উইকেট।
 
৪৫৭ রানের লক্ষ্যে ১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ৩৫। সৌম্য খেলেছেন ২৫ বলে ২৫ রানে। তামিম ৩৫ বলে ১০।

৪৫৬ রানের লিডে ছাড়ল শ্রীলঙ্কা
 
চা বিরতির পরও শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ে নামা অবাক করেছে অনেককেই। হয়ত রান খরায় থাকা দিনেশ চান্দিমালকে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সুযোগ দিলেন অধিনায়ক। সাত ইনিংস পর চান্দিমাল পেলেন অর্ধশতক।
 
বাংলাদেশের বিপক্ষে পাঁচ টেস্টে এটি চান্দিমালের প্রথম অর্ধশতক। তবে সেঞ্চুরি আছে তিনটি!
 
ওই ওভারেই মুস্তাফিজের বাইরের বলে শট খেলতে গিয়ে আউট হলেন দিলরুয়ান পেরেরা। রঙ্গনা হেরাথ দিলেন ইনিংস শেষের ঘোষণা। 
 
চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের লক্ষ্য ৪৫৭। তবে সেটি নয়, বাস্তবসম্মত লক্ষ্য এদিন বিকেলের ২৭ ওভার ও শেষ দিন কাটিয়ে ম্যাচ ড্র করা। সেটিও অনেক কঠিন।
  
চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে ৩৩ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা তুলেছিল ৮৬। ৪ উইকেট হারালেও দ্বিতীয় সেশন অনেক রান প্রসবা, ৩১ ওভারে ১৬০। শেষ সেশনে ৫ ওভারে ২৭। 
 
৬ উইকেটে ২৭৪ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা। ৫০ রানে অপরাজিত চান্দিমাল। ২৭ বলে ৩৩ করেছেন পেরেরা।

লিটনের ক্ষিপ্রতায় ডিকভেলার বিদায়
 
মিরাজের আগের বলটাতেই রিভার্স সুইপ করে চার মেরেছিলেন নিরোশান ডিকভেলা। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আবারও খেললেন রিভার্স। কিন্তু অসাধারণ ক্ষিপ্রতা ও দক্ষতায় সেটি গ্লাভসে জমালেন লিটন!
 
ব্যাটসম্যানকে রিভার্স খেলতে দেখেই একটু বায়ে সরেছিলেন লিটন। তার পরও বল সরে যাচ্ছিল আরও দূরে। লিটন তবু জমিয়েছেন হাতে।
 
ডিকভেলা ফিরলেন ১৫ রানে। মিরাজ নিলেন দ্বিতীয় উইকেট। নতুন ব্যাটসম্যান দিলরুয়ান পেরেরা উইকেটে গিয়েই মারলেন ছক্কা। যেটি হতে পারত ক্যাচ। সীমানায় হাত ছুঁইয়েও ধরতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ।
 
৫ উইকেটে ২২৯ শ্রীলঙ্কা, লিড ৪১১।

দুইশর দোরগোড়ায় দুই উইকেট
 
উপুল থারাঙ্গার উইকেট বয়ে আনল যেন আরও একটি উইকেট। সাকিব ফেরালেন বিপজ্জনক আসেলা গুনারত্নেকে। 
আগের ওভারেই মিরাজের বলে স্টাম্পড হতে হতে হননি গুনারত্নে। তবে খুলতে পারলেন না রানের খাতা। সাকিবের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে হলেন বোল্ড। লেংথে পিচ করে হালকা টার্ন করে ব্যাটের পাশ দিয়ে স্টাম্পে চুমু দেয় বল। 
 
আক্রমণাত্মক গুনারত্নেকে ফেরানোয় একটু হলেও কমতে পারে শ্রীলঙ্কার রানের গতি। শ্রীলঙ্কার রান ৪ উইকেটে ১৯৯। লিড ৩৮১।

প্রিয় প্রতিপক্ষ, সেই থারাঙ্গা
 
সাকিবের বলে অন সাইডে খেলে একটি সিঙ্গেল, উপুল থারাঙ্গা স্পর্শ করলেন সেঞ্চুরি। উঁচিয়ে ধরলেন ব্যাট। টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি, দেশের মাটিতে প্রথম।
 
প্রথম সেঞ্চুরিটি করেছিলেন ১০ বছর আগে। সেটি ছিল তার মাত্র তৃতীয় টেস্ট, ২০০৬ সালের মার্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে করেছিলেন ১৬৫। তার পরও তার টেস্ট ক্যারিয়ার প্রস্ফুটিত হয়নি কখনোই। বারবার বাদ পড়েছেন, ফিরেছেন। চলতি দফায় ফিরেছেন গত অক্টোবরে। ফিরেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছিলেন সেঞ্চুরি।
 
এই দফায় টেস্ট দলে ফিরে মিডল অর্ডারেই খেলছিলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিরলেন ওপেনিংয়ে। প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে করলেন সেঞ্চুরি! বাংলাদেশের বিপক্ষে তার ওয়ানডে সেঞ্চুরিও আছে তিনটি।
 
সেঞ্চুরির পরই মেরেছেন ছক্কা। পরের ওভারে মিরাজকে টানা দুটি চার। শট খেলতে গিয়েই মিরাজের বলে বোল্ড হয়েছেন ১১৫ রানে।
 
অন্য প্রান্তে চান্দিমাল ১১ রানে জীবন পেয়েছেন স্লিপে সৌম্যর হাতে। শ্রীলঙ্কা বাড়াচ্ছে রান। ৩ উইকেট হারিয়ে রান ১৯৮। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে এগিয়ে ৩৮০ রানে।

সাকিবের প্রথমে ভাঙল জুটি
 
লাঞ্চের পর থেকেই রানের গতি বাড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা। উপুল থারাঙ্গা ও কুসল মেন্ডিস, দুজনের ব্যাটেই রানের তাড়া। বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট পেয়েছে লঙ্কানদের সেই তাড়নাতেই।
 
সাকিবের আগের ওভারেই স্লগ সুইপে ছক্কা মেরেছিলেন মেন্ডিস। সেটির পুনরাবৃত্তির চেষ্টায় ধরা পড়লেন সীমানায়। ক্যাচ নিয়েছেন তাসকিন। ১৯ রানে ফিরলেন মেন্ডিস। ভাঙে ৬৫ রানের জুটি।
 
লাঞ্চের পর ৯ ওভারে রান উঠেছে ৪৭। প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে ১ রান দেওয়া মুস্তাফিজের পরের ৩ ওভারে এসেছে ২২। শুরু থেকে সাবধানে খেলা থারাঙ্গা টেসেট সপ্তম অর্ধশতক ছুঁয়ে যাচ্ছেন এগিয়ে।
 
মেন্ডিসের ফেরার সময় শ্রীলঙ্কার রান ২ উইকেটে ১৩৪। থারাঙ্গা ছিলেন ৭৬ রানে। শ্রীলঙ্কার লিড ৩১৬।

শান্ত সকালে আগুয়ান শ্রীলঙ্কা
 
আগের দিনের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে খেলা শুরু হয়েছে ১৫ মিনিট আগে। প্রথম সেশনে তাই খেলা হলো ৩৩ ওভার। লম্বা এই সেশনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি মোটে একটি উইকেট।
 
শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ে নেই তাড়াহুড়ো। দেখা যায়নি দ্রুত রান বাড়ানোর তাগিদ। প্রথম ইনিংসে লিড ১৮২ রান। লঙ্কানরা সেটি বাড়িয়ে নিচ্ছে আস্তে আস্তে।
 
চতুর্থ দিন লাঞ্চের সময় শ্রীলঙ্কার রান ১ উইকেটে ৮৭। লিড ২৬৯ রানের। উপুল থারাঙ্গা ব্যাট করছিলেন ৪০ রানে, ৮ রানে কুসল মেন্ডিস।
 
বাংলাদেশে একমাত্র সাফল্য এসেছে তাসকিন আহমেদের হাত ধরে। তবে সকালের সেরা বোলার ছিলেন মুস্তাফিজ। ৫ ওভারে দিয়েছেন ১ রান। সকালে ক্যাচ ছাড়ার পর বল হাতেও সাকিব প্রথম ইনিংসের মতোই বিবর্ণ। প্রভাব ফেলতে পারেনি বাকিরাও।

লিড আড়াইশ ছাড়িয়ে প্রথম উইকেট
 
একটু একটু করে বাড়ছিল লিড। বাড়ছিল চাপও। অবশেষে খানিকটা স্বস্তির হাওয়া। বাংলাদেশকে দিনের প্রথম সাফল্য এনে দিলেন তাসকিন আহমেদ।
 
শর্ট অব লেংথ বল প্রত্যাশার চেয়ে একটু নীচু ছিল। করুনারত্নে ঠিকমত পুল করতে পারেননি। ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে ছুটে ক্যাচ নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ।
 
দিনের শুরুতে টেন স্পোর্টসের সঙ্গে কথোপকথনে প্রথম ইনিংসের জন্য আক্ষেপ করেছিলেন করুনারত্নে। বলেছিলেন থিতু হলে এবার ইনিংস বড় করবেন। কিন্তু পারলেন না আবারও। ফিরেন ৩২ রানে।
 
প্রথম উইকেট তাসকিন পেলেও এখনও পর্যন্ত দিনের সেরা বোলার মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের প্রথম স্পেল ৫-৪-১-০!
 
শ্রীলঙ্কার রান ১ উইকেটে ৭১, লিড ২৫৩।

উদ্বোধনী জুটিতে অর্ধশতক
 
ব্যাটের রানের তীব্র গতি নেই। তবে আছে নির্ভরতা। ৭ রানে জীবন পাওয়ার পর আর সুযোগ দেননি করুনারত্নে। উপুল থারাঙ্গাও এগিয়ে যাচ্ছেন সাবলীল। উদ্বোধনী জুটিতেই শ্রীলঙ্কা ছাড়িয়ে গেছে পঞ্চাশ।
 
২০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার রান বিনা উইকেটে ৫৭, লিড ২৩৯

সাকিব ছাড়লেন করুনারত্নেকে
 
আগের দিন এক সেশন গিয়েছে বৃষ্টির পেটে। চতুর্থ দিনে খেলা শুরু হয়েছে ১৫ মিনিট আগে। আকাশে মেঘ নেই। তবে রোদের তেজ আগের তিন দিনের চেয়ে কম।
 
খুব একটা তেজ নেই মাঠের খেলাতেও। শ্রীলঙ্কার শুরুটা হয়েছে সতর্ক। বাংলাদেশ দারুণ কিছু করতে না পারলেও চেষ্টা করছে রান আটকে রাখতে। এর মধ্যেও এসেছিল একটি সুযোগ। মেহেদী হাসান মিরাজকে বেরিয়ে এসে তুলে মেরেছিলেন দিমুথ করুনারত্নে। শর্ট কাভারে সাকিব লাফিয়ে বলে হাত ছুঁইয়েও জমাতে পারেননি বল। ৭ রানে বাঁচলেন করুনারত্নে। শ্রীলঙ্কার রান বিনা উইকেটে ২০।
 
তৃতীয় দিন শেষে স্কোর:
 
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯৭.২ ওভারে ৩১২ (তামিম ৫৭, সৌম্য ৭১, মুমিনুল ৭, মুশফিক ৮৫, সাকিব ২৩, মাহমুদউল্লাহ ৮, লিটন ৫, মিরাজ ৪১, তাসকিন ০, শুভাশীষ ০*, মুস্তাফিজ ৪; লাকমল ১/৪২, কুমারা ১/৭০, পেরেরা ৩/৫৩, হেরাথ ৩/৭২, সান্দাকান ১/৬৯)
 
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৪৯৪