শেষ সেশনে শ্রীলঙ্কার রান উৎসব
৪০ ওভারের আগেই তিন উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। উইকেট তিনটি এই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ তিন ব্যাটসম্যানের, উপুল থারাঙ্গা, দিমুথ করুনারত্নে ও দিনেশ চান্দিমাল। তখন কে জানত, পরের ৪০ ওভারেও ধরা দেবে না আর একটি উইকেট!
তরুণ কুসল মেন্ডিস ও তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা আসিলা গুনারত্নে গড়লেন অসাধারণ এক জুটি। এক সময় রানের গতিটা থমকে রাখতে পেরেছিল বাংলাদেশ। এই দুজনের জুটিতে রানও উঠল দেদার। শুরুতে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করা বোলাররা হারালেন লাইন লেংথ।
দ্বিতীয় নতুন বলে ১৯৬ রানে এই জুটি ভেঙেছেন তাসকিন। ৮৫ রানে ফিরেছেন গুনারত্নে। স্বস্তি তবু খুব একটা মেলেনি। দিনের খেলা শেষের আগে ৩১ বলে ৩৩ রানের জুটি গড়ে ফেলেছেন মেন্ডিস ও ডিকভেলা।
শেষ সেশনে ওভার প্রতি প্রায় ৫ রান নিয়ে শ্রীলঙ্কা তুলেছে ১৬৬ রান।
টেস্টে ফেরার দিনে অফ কাটারে একটি উইকেট পেলেও মুস্তাফিজ ছিলেন না সেরা চেহারায়। প্রথম স্পেলের পর শুভাশীষ ছিলেন বিবর্ণ। দুই স্পিনার মিরাজ ও সাকিব ফেলতে পারেননি প্রভাব।
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে শ্রীলঙ্কার দিন
দ্বিতীয় নতুন বলে সাফল্য
কুসল মেন্ডিস ও আসিলা গুনারত্নের জুটিকে থামানোই যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় নতুন বলে মিলল সাফল্য। বলটি অবশ্য দারুণ কিছু ছিল না। তাসকিনের শর্ট অব লেংথ বল। সেটিই পুল করতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে আনলেন গুনারত্নে। পাওয়া হলো না সেঞ্চুরি।
আগের দুই টেস্টে করেছেন ৫৪, অপরাজিত ১৬, ১১৬ ও ৩৯। এবার ৩১ বছর বয়সী অলরাউন্ডার করেছেন ৮৫। মেন্ডিসের সঙ্গে চতুর্থ উউকেটে জুটি ১৯৬ রানের।
শ্রীলঙ্কার রান ৪ উইকেটে ২৮৮। মেন্ডিস ছিলেন ১৫১ রানে।
মেন্ডিসের সামনে বিবর্ণ বাংলাদেশ
১৬টি চারের পাশে ইনিংসটিতে মেরেছেন দুটি ছক্কা। আরেক পাশে আসিলা গুনারত্নেও খেলছিলেন দারুণ। এক সময় রানের গতিতে বাধ দিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। এই দুজনের জুটিতে রানও আসছে দারুণ গতিতে।
৮০ ওভার শেষেই দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার রান তখন ৩ উইকেটে ২৮৪। ১৫০ রানে অপরাজিত মেন্ডিস, ৮৩ রানে গুনারত্নে।
প্রথম বলে বেঁচে যাওয়া মেন্ডিসের সেঞ্চুরি
চা বিরতির আগে লঙ্কান ইনিংসে গতি
সেই যে প্রথম বলে ক্যাচ হয়েও বেঁচে গেলেন, এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি কুসল মেন্ডিস। দারুণ ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন দলকে। দারুণ খেলছেন আসিলা গুনারাত্নেও। এই দুজনের ব্যাটিংয়ে ধীরে ধীরে লাগামটা ধরতে চাইছে শ্রীলঙ্কা।
অফ কাটারেই মুস্তাফিজের প্রথম উইকেট
বাংলাদেশকে পেলে বরাবরই চওড়া হয়ে উঠত দিনেশ চান্দিমালের ব্যাট। এবারের আগে ৫ ইনিংসে ব্যাট করে তিনটিতেই করেছিলেন সেঞ্চুরি। সেই চান্দিমালকে এবার ৫ রানেই ফেরালেন মুস্তাফিজুর রহমান।
লাঞ্চের পর বাংলাদেশের বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে হাঁসফাঁস করছিলেন চান্দিমাল। শেষ পর্যন্ত ফাঁস আলগা করতে গিয়েই উল্টো পড়লেন কাটা। স্টাম্পের বাইরে অফ কাটারে চালিয়ে দিলেন ব্যাট। গালিতে দারুণ ক্যাচ নিলেন মিরাজ। টেস্টে ফেরার পর মুস্তাফিজের প্রথম উইকেট।
৫ রান করতে চান্দিমাল খেলেছেন ৫৪ বল! আরেক পাশে ৪৬ রানে উইকেটে কুসল মেন্ডিস।
শ্রীলঙ্কা: ৪১ ওভারে ৯৭/৩
লাঞ্চের পর বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিং
সাকিব আল হাসানকে দিয়ে লাঞ্চের পর আক্রমণ শুরু করে বাংলাদেশ। শুরু থেকেই সাকিব করেছেন দারুণ আঁটসাঁট বোলিং। আরেক প্রান্তে শুভাশীষ ও তাসকিনও রান করার সুযোগ খুব একটা দেননি। উইকেটে পড়েছে লাঞ্চের আগের দুটিই, তবে বাংলাদেশের দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কা এগোচ্ছে মন্থর গতিতে।
নিজের প্রথম ৬ ওভারে সাকিব দিয়েছেন ৫ রান। লাঞ্চের পর প্রথম ১২ ওভারে শ্রীলঙ্কা তুলতে পারে ১৯ রান। যে দু-তিনটি বাজে বল এসেছে, সেটির ফায়দা অবশ্য নিয়েছেন কুসল মেন্ডিস। প্রথম বলে ক্যাচ দিয়েও শুভাশীষের নো বলে বেঁচে যাওয়া মেন্ডিস ক্রমেই হয়ে উঠেন সাবলীল। খেলছেন ৪৫ রানে।
আরেক পাশে চান্দিমালকে অবশ্য একমই উইকেটে বেধে রেখেছে বাংলাদেশের বোলাররা। ৫ রানে অপরাজিত আছেন ৪৯ বলে।
লাঞ্চের পর প্রথম পানি পানের বিরতির সময় শ্রীলঙ্কার রান ৩৯ ওভারে ২ উইকেটে ৯২।
করুনারত্নের প্রতিরোধ ভাঙলেন মিরাজ
শুরু থেকে সবচেয়ে আস্থার সঙ্গে খেলছিলেন দিমুথ করুনারত্নে। বেশ থিতু হয়ে গিয়েছিলেন উইকেটে। কিন্তু লাঞ্চের একটু আগে হারালেন মনোযোগ। বাজে শটে উইকেট উপহার দিলেন বাংলাদেশকে।
মেহেদী হাসান মিরাজের বলটি ছিল সাদামাটা। অফ স্টাম্পের বাইরে পরে টার্ন করেনি, যাচ্ছিল সোজা। বাঁহাতি করুনারত্নে ঠিক সামনেও যাননি, পেছনেও যাননি। পজিশনে না গিয়ে কাট করতে চাইলেন। ব্যাটে লেগে বল চুমু দিল স্টাম্পে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাফল্য। ভাঙল কুসল মেন্ডিসের সঙ্গে করুনারত্নের ৪৫ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি।
এক ওভার পরই বেলস তুলেছেন আম্পায়ার। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে লাঞ্চে গিয়েছে লঙ্কানরা। মেন্ডিসের রান ১৯, চান্দিমালের কেবল শুরু।
শ্রীলঙ্কা: ২৪ ওভারে ৬১/২
আক্রমণে এসেই শুভাশীষের অম্ল-মধুর স্বাদ
ম্যাচের প্রথম বল মুস্তাফিজুর রহমান করলেন অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের। পরের ওভারের প্রথম বল তাসকিন আহমেদ করলেন অনেক বাইরে। ওয়াইড!
পেসারদের জন্য উইকেটে কিছু সহায়তা আছে ভেবেই একাদশে তিন পেসার রেখেছে বাংলাদেশ। ঠিক জায়গায় বল ফেললে সেটির প্রমাণও মিলছে। কিন্তু বাংলাদেশের নতুন বলে দুই পেসার তাসকিন ও মুস্তাফিজ ধারাবাহিকভাবে বল ফেলতে পারেননি ঠিক জায়গায়। প্রথম ৫ ওভার কাটিয়ে দিতে কোনো সমস্যাই হয়নি শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে ও উপুল থারাঙ্গার। বোলিং পরিবর্তন করতেই মিলল সাফল্য!
ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসে শুভাশীষ রায়ও শুরু করেছিলেন লেগ স্টাম্পের বাইরে বল ফেলে। তবে চতুর্থ বলেই বোল্ড করে দেন থারাঙ্গাকে। স্টাম্পে পরে স্কিড করা বল থারাঙ্গার (৪) ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে আঘাত করল স্টাম্পে।
পরের বলেই আবার এসেছিল উইকেট। স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন কুসল মেন্ডিস। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বলটি ছিল নো বল!
শ্রীলঙ্কা: ৬ ওভারে ১৬/১।
মুশফিক শুধুই ব্যাটসম্যান
২০০৭ সালের শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল মুশফিকের। সেই সফরের দ্বিতীয় টেস্টে ৮০ রানের ইনিংস খেলার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এবার ১০ বছর পর সেই শ্রীলঙ্কা থেকেই শুরু হচ্ছে তার ক্যারিয়ারর নতুন অধ্যায়। কিপার ব্যাটসম্যান নয়, বাংলাদেশ অধিনায়ক নামছেন শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে।
কিপিং করবেন লিটন দাস। তাকে জায়গা দিতে একাদশের বাইরে যেতে হয়েছে সাব্বির রহমানকে।
বাংলাদেশ দলে ৩ পেসার
বাংলাদেশ একাদশ সাজিয়েছে তিন পেসার ও সাকিব আল হাসানসহ দুই স্পিনার নিয়ে। ২০১৫ সালের জুলাই-অগাস্টে দুটি টেস্ট খেলার পর আবারও টেস্ট খেলছেন মুস্তাফিজুর রহমান।
তাসকিন আহমেদ তো আছেনই। তৃতীয় পেসার হিসেবে কামরুল ইসলাম রাব্বির চেয়ে শুভাশীষ রায়কে বেছে নিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
শ্রীলঙ্কা দলে ৩ স্পিনার
বাংলাদেশ তিন পেসার, দুই স্পিনার নিয়ে নামলেও শ্রীলঙ্কা উল্টো। দুই পেসার সুরঙ্গা লাকমল ও লাহিরু কুমারার সঙ্গে তিন স্পিনার অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ, অফ স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরা ও চায়নাম্যান লাকশান সান্দাকান।
বাংলাদেশ একাদশ: মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, তাসকিন আহমেদ, কামরুল ইসলাম রাব্বি, মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, শুভাশীষ রায় চৌধুরী।
টস জিতলেন হেরাথ
টস জিতলেন রঙ্গনা হেরাথ। সিদ্ধান্তটি অনুমিতই ছিল। বেছে নিলেন ব্যাটিং। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম জানালেন, টস জিতলে ব্যাটিং নিতেন তিনিও।