টেস্ট সেঞ্চুরি এত সহজ!

প্রথম দিনের খেলা তখন শেষ দিকে। ওভারের ফাঁকে হেলমেট খুলে গলায় পানি ঢালছিলেন বিরাট কোহলি। ততক্ষণে সেঞ্চুরি হয়ে গেছে। টিভি ক্যামেরা ভারত অধিনায়ককে ধরল খুব কাছ থেকে। ধারাভাষ্যকক্ষে সঞ্জয় মাঞ্জরেকার বললেন, “ক্লান্তির চিহ্ন নেই, আক্ষরিক অর্থেই নেই এক বিন্দু ঘাম!”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি হায়দরাবাদ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2017, 02:36 PM
Updated : 10 Feb 2017, 03:30 PM

‘ফিটনেস ফ্রিক’ বিরাট কোহলির জিম সেশন, পরিশ্রম, খাদ্যাভ্যাস আর ত্যাগ নিয়ে চাইলে মহাকাব্য লেখা যায়। সেঞ্চুরিতেই তাই তার ক্লান্ত হওয়ার কারণ নেই। তাই বলে ঘাম ছুটবে না একটুও! হায়দরাবাদের গরমে একেবারেই যে ঘামেননি ভারত অধিনায়ক, তা নয়। মাঞ্জরেকার আসলে বোঝাতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশের নখদন্তহীন বোলিং সামলানো এতটাই অনায়াস ছিল যে ঘামও ঝরাতে হয়নি!

সেই সেঞ্চুরিকে দ্বিতীয় দিনে ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছেন কোহলি। প্রথম শতরানে লেগেছিল ১৩০ বল। পরের শতরান ১০৯ বলেই। সংখ্যা যেমনটা বলছে, তার চেয়েও অনায়াস ছিল কোহলির দ্বিশতক। ব্যাটিংয়ে একটুও ছিল না অস্বস্তি। আউট হওয়ার আগে একবারের জন্যও মনে হয়নি আউট হতে পারেন। কোহলিকে আউট করা কঠিন। তবে বাংলাদেশের বোলিং, ফিল্ডিং ও শরীরী ভাষায় মনে হয়েছে, শুধু কঠিন নয়, কোহলিকে আউট করা বুঝি অসম্ভব!

আগের দিন যেমন প্রায় বিনা বাধায় তিন অঙ্কে পা রেখেছিলেন মুরালি বিজয়। সুযোগ দিয়েছিলেন একবার। চেতেশ্বর পুজারার সঙ্গে জুটি এতটাই জমেছিল যে দুজন প্রায় এক প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন! কিন্তু সেই উপহার নিতে বয়েই গেছে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের। নিজেরাই তো সেঞ্চুরি উপহার দিতে পণ করে আছেন!

উইকেট অবশ্যই বোলিংয়ের জন্য কঠিন। প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইন আপও বিশ্বসেরা। কিন্তু সেটিরও তো টোটকা আছে! নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান আটকে একটু চাপে তো ফেলা যায়! বাংলাদেশের বোলিংয়ে পড়েনি সেই চেষ্টার প্রতিফলন।

লড়াইয়ের ইচ্ছাটাই দেখা যায়নি বোলিং-ফিল্ডিংয়ে। ঋদ্ধিমান সাহাও তাই করে ফেলেন দাপুটে সেঞ্চুরি। বোলিং নিয়ে ছেলেখেলা করেন রবিন্দ্র জাদেজাও।

ঋদ্ধিমান-জাদেজাদের এমন ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য নেই, তা অবশ্য না। সেন্ট লুসিয়ায় দলের বিপর্যয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন ঋদ্ধিমান। কলকাতায় নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দলের দারুণ প্রয়োজনে দুই ইনিংসেই অর্ধশতক করে ম্যাচ-সেরা হয়েছেন। জাদেজা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন তিনটি। টেস্টেও এখন রান পাচ্ছেন নিয়মিত। কিন্তু তাদের কাজ কঠিন করে তোলা তো যায়! বাংলাদেশ উল্টো করেছে সহজ।

ভারতীয় ব্যাটসম্যনদের নিয়ে পরিকল্পনা নিশ্চয়ই ছিল। তবে সেটির প্রতিফলন পড়েনি মাঠে। ‘প্ল্যান এ’ ব্যর্থ হলে ‘বি’ বা ‘সি’তে যায় দলগুলি। বাংলাদেশের তো প্রথমটিই চোখে পড়ল না! টেস্ট শুরুর আগে মেহেদী হাসান মিরাজ বলেছিলেন, ভালো জায়গায় বল ফেলে রান আটকে রাখার চেষ্টা করবে দল। মিরাজ নিজেই ৪২ ওভার বোলিং করে মেডেন পাননি। দুই পেসার রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি পাঁচের বেশি। টানা ছয়টি বল এক জায়গায় রাখার নজির ছিল সামান্যই।

বোলিংয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজে ছিল ফিল্ডিং। নিউ জিল্যান্ড সফরে ক্যাচ হাতছাড়া হয়েছিল ২০টি। ভারতে এসেও হাতে সেই মাখন লাগানো। উইকেটের পেছনে মুশফিক বরাবরই তো শঙ্কার প্রতিশব্দ। সেই শঙ্কাগুলো সত্যি হয়েছে এই টেস্টেও।

কঠিন সময়ে দলকে চাঙা রাখার চেষ্টা করা যায় অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্বে। কিন্তু মুশফিকের সেই সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ছিল তো সবসময়ই। বোলিং পরিবর্তনে ছিল না কল্পনাশক্তির ছাপ। মাঠ সাজানোয় উদ্ভাবনী কিছু করে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে চমকে দেওয়া বা একটু ভাবনার প্রয়াসও ছিল না।

সব মিলিয়েই রানের পাহাড়ে ভারত, যে পাহাড়ে উঠতে কষ্ট হয়েছে সামান্যই। বাংলাদেশের বোলাররা থামানোর চেষ্টা করেননি, বরং বাড়িয়ে দিয়েছেন ওপরে তোলার গতি। ৫ বোলারের পাশে রান দেওয়ার সেঞ্চুরি!

তবু শেষ হয়ে যায়নি সব। ব্যাটিং দিয়ে ম্যাচ বাঁচানোর পথ এখনও খোলা। ৫ বোলারের সেঞ্চুরির মত ৫ ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি না হোক, অন্তত তিনজন করলেও ভারতকে আবার ব্যাট করানো যায়!