বিজয়-কোহলির শতকে বিশাল সংগ্রহের পথে ভারত

সাদামাটা বোলিং-ফিল্ডিংয়ে হায়দরাবাদ টেস্টের প্রথম দিন শেষে চাপে বাংলাদেশ।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2017, 03:43 AM
Updated : 9 Feb 2017, 11:30 AM

সাদামাটা ফিল্ডিংয়ের মাশুল

প্রথম ওভারে উইকেট পাওয়া বাংলাদেশকে মাশুল দিতে হচ্ছে সাদামাটা বোলিং-ফিল্ডিংয়ের। দুটি শত রানের জুটি গড়া ভারত রয়েছে বিশাল সংগ্রহের পথে। শতক করে ফিরে গেছেন মুরালি বিজয়। গত বছর তিনটি দ্বিশতক পাওয়া বিরাট কোহলি এরই মধ্যে পেয়েছেন শতক।

প্রথম দিনের খেলা শেষে ভারতের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৩৫৬ রান। কোহলি ১১১ ও অজিঙ্কা রাহানে ৪৫ রানে অপরাজিত।

প্রথম নতুন বলে দারুণ বোলিং করা তাসকিন আহমেদ ৫৮ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। রান দেওয়ার শতকের পথে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি। আঁটসাঁট বোলিং করা তাইজুল ইসলাম ৫০ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট।

বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কম ওভার করা সাকিব আল হাসান ৪৫ রান দিয়ে উইকেটশূন্য।

কোহলির দুর্দান্ত শতক

ম্যাচের আগে মুশফিকুর রহিম বলেছিলেন, প্রথম বলে আউট হতে পারেন কোহলি আবার সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরিও করতে পারেন। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে চার হাঁকানো ভারতীয় অধিনায়ক শতকে পৌঁছান ১৩০ বলে। কোহলির চারে তার সঙ্গে অজিঙ্ক রাহানের জুটি পৌঁছায় শতরানে।

কোহলিকে খুব একটা পরীক্ষায়ও ফেলতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। এক-দুই নিয়ে রানের চাকা সচল রাখার সঙ্গে ১০টি চারও হাঁকান দারুণ ছন্দে থাকা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। 

ভারতের তিনশ পার

দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার পর তিনশ’ রানে পৌঁছায় ভারতের সংগ্রহ। চোট কাটিয়ে ফেরা অজিঙ্কা রাহানের সঙ্গে দলকে এগিয়ে নেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি।

৮৩ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ ৩০৫/৩।

কোহলি-রাহানের অর্ধশত রানের জুটি

অজিঙ্কা রাহানের সঙ্গে অর্ধশত রানের জুটিতে ভারতকে এগিয়ে নেন বিরাট কোহলি। ৯৭ বলে পঞ্চাশে যায় চতুর্থ উইকেট জুটির রান।

৮০ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ ২৮৫/৩।      

কোহলির অর্ধশতক

সাকিব আল হাসানের বলে এক রান নিয়ে অর্ধশতকে পৌঁছান ছন্দে থাকা বিরাট কোহলি। ৭০ বলে পঞ্চাশে যেতে ৫টি চার হাঁকান ভারতীয় অধিনায়ক।

৭৩ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ২৫৯/৩।

বিজয়কে ফেরালেন তাইজুল

আঁটসাঁট বোলিংয়ের পুরস্কার পান তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের স্টাম্পের বলে লাইনে না গিয়ে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন মুরালি বিজয়। ১৬০ বলে ১২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০৮ রান করেন এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।

বিজয় ফেরার সময় ভারতের স্কোর ২৩৪/৩।

বিজয়ের শতক

প্রথম ওভারেই উদ্বোধনী জুটির সঙ্গীকে হারানো মুরালি বিজয় এগিয়ে নেন ভারতকে। তৃতীয় সেশনের শুরুতেই শতকে পৌঁছান ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

৮২ বলে অর্ধশতককে পৌঁছানো বিজয় রান তিন অঙ্কে নিয়ে যান ১৪৯ বলে। এই সময়ে তার ব্যাট থেকে আসে ১১টি চার ও একটি ছক্কা। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি বিজয়ের দ্বিতীয় আর সব মিলিয়ে নবম শতক। 

ভারতের দুইশ’
 
মেহেদী হাসান মিরাজের বলে সিঙ্গেল নিয়ে দলের সংগ্রহ দুইশ’ রানে নিয়ে যান মুরালি বিজয়। শতকের পথে থাকা এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের সঙ্গে তখন ক্রিজে অধিনায়ক বিরাট কোহলি। 
 
৫৫ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ ২০‌১/২।

ভারতের প্রতিরোধ ভাঙলেন মিরাজ
 
আগেভাগেই জুটি ভাঙার বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করা বাংলাদেশ ৫১তম ওভারে পায় দ্বিতীয় সাফল্য। উইকেটে জমে যাওয়া চেতেশ্বর পুজারাকে ফিরিয়ে তার সঙ্গে মুরালি বিজয়ের পর ১৭৮ রানের জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। 
 
তরুণ অফ স্পিনারের বলে ক্যাচ গ্লাভসবন্দি করেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ১৭৭ বলে ৯টি চারে ৮৩ রান করে পুজারা ফিরে যাওয়ার সময় ভারতের স্কোর ১৮০/২।

পুজারার অর্ধশতক
 
ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে অর্ধশতকে পৌঁছান চেতেশ্বর পুজারা। মুরালি বিজয়ের সঙ্গে শতরানের জুটি গড়া এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান পঞ্চাশে যেতে খেলেন ১০৮ বল। এই সময়ে তার ব্যাট থেকে আসে ৫টি চার।

বিজয়ের অর্ধশতক, ভারতের একশ
 

 

সাকিব আল হাসানের বলে চার হাঁকিয়ে অর্ধশতকে পৌঁছান মুরালি বিজয়। সেই চারেই তিন অঙ্কে যায় ভারতের সংগ্রহ। একই সঙ্গে চেতেশ্বর পুজারার সঙ্গে বিজয়ের জুটি যায় শতরানে। 
 
৮২ বলে পঞ্চাশে যান বিজয়। তার ব্যাট থেকে আসে ৮টি চার। 
 
৩১ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ১০৩/১।

প্রথম সেশনে ভারত ৮৬/১
 

 

বোলিংয়ে ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের ছাপ নেই স্কোর কার্ডে। প্রথম ওভারে তাসকিন আহমেদ লোকেশ রাহুলকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর প্রথম সেশনটাকে আরও ভালো করার সুযোগ এসেছিল অতিথিদের সামনে।মেহেদী হাসান মিরাজের বলে দুটি সুযোগ হাতাছাড়া হওয়ার পর এই তরুণ নিজেই রান আউটের সহজ এক সুযোগ হাতছাড়া করেন।  
 
প্রথম দিনের লাঞ্চে যাওয়ার সময় ভারতের স্কোর ২৭ ওভারে ১ উইকেটে ৮৬ রান। মুরালি বিজয় ৪৫ ও চেতেশ্বর পুজারা ৩৯ রানে ব্যাট করছেন। অবিচ্ছিন্ন দ্বিতীয় উইকেটে এরই মধ্যে ৮৪ রানের জুটি গড়েছেন এই দুই জনে।

মিরাজের অবিশ্বাস্য মিস
 
দুই ব্যাটসম্যান এক প্রান্তে তারপরও রান আউট করতে পারলো না বাংলাদেশ। কামরুল ইসলাম রাব্বির ধীর গতির থ্রো স্টাম্পের পিছনে থেকে এগিয়ে এসে সামনে ধরতে চেয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ধরতে পারেননি, বল হাত ফসকে বেরিয়ে যায় বেঁচে যান মুরালি বিজয়।

মিরাজের বলে হাতছাড়া ২ সুযোগ
 
ম্যাচের আগের দিন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম তাগিদ দিয়েছিলেন সুযোগ কাজে লাগানোর দিকে। হায়দরাবাদ টেস্টের প্রথম দিন পাশে দাঁড়িয়ে দেখলেন সতীর্থের সুযোগ হাতছাড়ার দৃশ্য। মেহেদী হাসান মিরাজের দ্বিতীয় ওভারে দুবার স্লিপে ক্যাচ ধরার চেষ্টায় হাতও লাগাতে পারেননি সাকিব আল হাসান। 
 
চেতেশ্বর পুজারার ক্যাচ একটু দূর দিয়ে গেলেও মুরালি বিজয়ের ক্যাচ হাতের কাছেই পেয়েছিলেন সাকিব।

বিজয়-পুজারার অর্ধশত রানের জুটি
 
প্রথম ওভারেই উইকেট হারানো ভারত প্রতিরোধ গড়ে মুরালি বিজয় ও চেতেশ্বর পুজারার ব্যাটে। দ্বিতীয় উইকেটে তাদের অর্ধশত রানের জুটি আসে ৮৬ বলে।

তাসকিন-কামরুলের আঁটসাঁট বোলিং
 
সহজ রান দেননি তাসকিন আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি। তাদের প্রথম ১০ ওভারে ২৬ রান নেয় ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। কয়েকবার একটুর জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি বল।

শুরুতেই তাসকিনের আঘাত
 
প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। তরুণ এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাভার ড্রাইভ করতে গিয়ে বোল্ড হন লোকেশ রাহুল (২)। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে পায়ে লেগে বল স্টাম্পে আঘাত হানে। তখন ভারতের স্কোর ২/১।

ত্রিশতকও যথেষ্ট নয়!
 
অজিঙ্কা রাহানের চোটে এসেছিল সুযোগ। দুই হাতে কাজে লাগিয়েছিলেন করুন নায়ার। অপরাজিত ৩০৩ রানের ইনিংসেও জায়গা ধরে রাখতে পারেননি তিনি। চোট কাটিয়ে ফেরা রাহানে জায়গা পেয়েছেন একাদশে। 
 
ত্রিশতক করার পরের ম্যাচে না খেলা প্রথম খেলোয়াড় নায়ার নন। সেই ১৯৩০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২৫ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন ইংল্যান্ডের অ্যান্ডি স্যান্ডহ্যাম। পরের টেস্টেই নিয়মিত দুই ওপেনার হাবার্ট সাটক্লিফ ও জ্যাক হবস ফিরেছিলেন। পরের টেস্ট তো বটেই, আর কখনোই টেস্ট খেলতে পারেননি স্যান্ডহ্যাম।
 
১৯৩৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ৩৬৪ রান করার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলেননি ইংলিশ কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান লেন হাটন। 
 
২০০২ সালে লাহোরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ৩২৯ রানের ইনিংস খেলার পর পাকিস্তানের ইনজামাম-উল-হক খেলেননি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পুরো একটি সিরিজ।

বাংলাদেশ দলে ৩ স্পিনার ২ পেসার

নিউ জিল্যান্ডে সাকিব আল হাসানসহ দুই স্পিনার নিয়ে খেলা বাংলাদেশ খেলছে তিন স্পিনার নিয়ে। দলে ফিরেছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তাসকিন আহমেদের সঙ্গে দ্বিতীয় পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি। 
 
চোট কাটিয়ে মুশফিকের মতো ফিরেছেন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক।
 
বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, কামরুল ইসলাম রাব্বি, তাসকিন আহমেদ।    
 
তিন পেসার নিয়ে খেলছে ভারত। উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মার সঙ্গে আছেন ভুবনেশ্বর কুমার। নিজের শেষ ইনিংসে ত্রিশক করা করুন নায়ার বাদ পড়েছেন চোট কাটিয়ে অজিঙ্কা রাহানে ফেরায়। দলে আইসিসি টেস্ট বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দুই বোলার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা থাকায় তৃতীয় স্পিনারের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি স্বাগতিকরা।
 
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

 

হায়দরাবাদ টেস্টে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। টস জিতলে ব্যাটিং নিতেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও।

এবার প্রস্তুত বাংলাদেশ?

ভারতের বিপক্ষে আগের ৮ টেস্টের ছয়টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ, ড্র করেছে দুটিতে। ওই দুই ম্যাচেই ছিল বৃষ্টির বাধা। উন্নতির পথে থাকা মুশফিকুর রহিমের দল এবার প্রস্তুত বিরাট কোহলিদের বিপক্ষে সমান তালে লড়াই করার জন্য। কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে মনে করছেন, ভারতের বিপক্ষে খেলার এটাই আদর্শ সময়।
 
শিখতে নয় জিততে চান হাথুরুসিংহে
 
র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আর তলানির দিকের দলের লড়াই। টেস্ট ক্রিকেটে শক্তি-সামর্থ্য আর বাস্তবতায় পার্থক্য আকাশ-পাতাল। প্রতিবেশী হলেও প্রথমবার সফর। অনেকের কাছেই মনে হতে পারে, এই এক টেস্ট বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা সফর। তবে সেই দলে নেই চন্দিকা হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশ কোচ চান, জয় নিয়ে ফিরতে।