ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে হায়দরাবাদ টেস্ট?

মূল ফটক দিয়ে স্টেডিয়ামে ঢুকলেই মনে হবে যেন ছবির রাজ্য। মনসুর আলি খান পতৌদি, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, ভিভিএস লক্ষ্মণরা তো আছেনই। সেই আব্বাস আলি বেগ, গুল মোহাম্মদ, গুলাম আহমেদ, এমএল জয়সিমহা, নরসিমহা রাও থেকে ভেঙ্কটাপাথি রাজু, নোয়েল ডেভিড, এমনকি সেদিনের প্রজ্ঞান ওঝা, আম্বাতি রাইডুকেও খুঁজে পাওয়া যাবে। হায়দরাবাদের সব ক্রিকেটারই যেন জীবন্ত হয়ে আছে শিল্পীর সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায়।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিহায়দরাবাদ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2017, 03:15 PM
Updated : 8 Feb 2017, 03:53 PM

সবচেয়ে বড় ছবিটা অবশ্য কোনো ক্রিকেটারের নয়। প্যাড পরে ব্যাট হাতে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রাজীব গান্ধী। বিশাল এক প্রতিকৃতি! স্টেডিয়াম যার নামে, তার ছবি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে আকারে ও অবস্থানে ক্রিকেটারদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়ায় একটু চোখে লাগেই।

৫৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামের বিশালাকায় উঁচু গ্যালারি অবশ্য স্যালুট জানাচ্ছে ক্রিকেটারদেরই। শিবলাল যাদব ও ভিভিএস লক্ষ্মনের নামে নামকরণ করা হয়েছে দুই প্রান্তের প্যাভিলিয়ন। স্টেডিয়ামের প্রতিটি গেটও ক্রিকেটারদের নামে, সৈয়দ আবিদ আলি, কৃষ্ণমূর্তি, জয়ন্তিলাল…। হায়দরাবাদ শহরের উপকণ্ঠ উপলের এই রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামের দেয়ালে দেয়ালে মেখে আছে যেন ক্রিকেটের ইতিহাস।

বৃহস্পতিবার একদিক থেকে এই স্টেডিয়ামও নাম লেখাবে ইতিহাসে। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের প্রতিপক্ষ ভারত। এই ১৬ বছরে ৮টি টেস্ট খেলেছে দুই দল। তবে ভারতের মাটিতে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর, প্রথম টেস্ট এটিই!

মাঠের লড়াইয়ের আগেই অবশ্য দুই অধিনায়কের বেশ এক চোট টানাটানি হয়ে গেছে ইতিহাস নিয়ে। ভারতে আসার আগে মুশফিকুর রহিম বলে এসেছিলেন, এই টেস্টকে ঐতিহাসিক বলার কারণ নেই। ম্যাচের আগের দিন বিরাট কোহলি বললেন, ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট, দুই দল তো বটেই, দুই দেশের জন্যই ঐতিহাসিক মুহূর্ত!

ইতিহাসের মানদণ্ড নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে একটি ব্যাপার নিশ্চিত, একমত হবেন সবাই। এই টেস্ট একটি সুযোগ। বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ, নিজেদের জানান দেওয়ার। প্রমাণ করার। দাবি তোলার। একটি টেস্ট জন্ম নিতে লেগে গেছে ১৬ বছর। আরেকটি কত বছর পরে? কণ্ঠের প্রতিবাদে লাভ হয় সামান্যই। অনুরোধ-আকুতি, দেন-দরবারে হয়ত এভাবেই দান-খয়রাতের মত এক-আধটি টেস্টের সুযোগ মিলবে। কিন্তু সম্মানে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলার আমন্ত্রণ কবে? দুয়ার খুলে দিতে পারে এই টেস্টের পারফরম্যান্স।

কাজটা কঠিন। উইকেট-কন্ডিশন নিউ জিল্যান্ডের মত বিরুদ্ধ নয়। হায়দরাবাদে এখন যে গরম, বাংলাদেশের এপ্রিল-মে মাসের গরমের কাছে এটা কিছুই না। তার পরও কাজটা কঠিন। ভারত দেশের মাটিতে সবসময়ই ভাল। তবে এখন চলছে দেশটির টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে সাফল্যপ্রসবা সময়। বিরাট কোহলির দল ছুটছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। টানা ১৮ টেস্টে তাদের হারাতে পারেনি কেউ! অনেকটা এগিয়ে থেকে টেস্ট র্যা ঙ্কিংয়ে শীর্ষ দল তারা। বাংলাদেশ সেখানে টেস্টে উন্নতির পথ ধরে সবে হাঁটতে শুরু করেছে।

তবে প্রতিপক্ষ নয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনার জায়গা নিজেরাই। দারুণ খেলেও শেষ পর্যন্ত টেস্ট হেরে যাওয়ার বিচিত্র সব উপায় বের করে ফেলে বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ডে গিয়ে প্রায় ছয়শ রান তুলেও হারার অভাবনীয় কীর্তি গড়ে এসেছে মুশফিকরা।

ওই নিউ জিল্যান্ড সফরের কারণেই আবার বাংলাদেশকে সমীহ করছে ভারত। সব ম্যাচ হারলেও প্রতিকূলতার সঙ্গে যেভাবে লড়াই করেছে, যেভাবে প্রায় ছয়শ রান তুলেছে দারুণ গতিতে, সামর্থ্যটা সেখান থেকেই মেপে নিয়েছেন কোহলিরা। ভারতের কোচ-অধিনায়ক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, হালকাভাবে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ নিয়ে প্রশ্নের সুযোগ আছে সামান্যই। ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী নিয়ে কৌতুহল থাকতে পারত। সেটি সহজ করে দিয়ে চোট নিয়ে ফিরে গেছেন ইমরুল কায়েস। চোটের কারণে সবশেষ ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট না খেলা মুশফিকুর রহিম ফিরছেন টসে, তিনে মুমিনুল হক। দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বির সঙ্গে দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজ। সাতে সাব্বির রহমান।

দলের চাওয়ার বাইরে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক একটু ব্যক্তিগত বোঝাপড়াও করে নিতে পারেন। দুদলের সবশেষ লড়াইটির বয়স এক বছর হতে চলল। তবে সেই ম্যাচ এখনও দগ্ধ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। এই দুজনেরও দহন কম নয়। হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ বেরিয়ে গিয়েছিল দুজনের মুহূর্তের ভুলে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১ রানের হার!

ওই ম্যাচ আর ফিরে আসবে না। ওই প্রাপ্তিও আর মিলবে না। তবে এই দুজন দারুণ কিছু করলে ক্ষতে প্রলেপ তো পড়বে সামান্য হলেও! 

দলও দারুণ কিছু করতে পারলে তো সোনায় সোহাগা। বড় সুযোগে বড় পারফর্ম করলে প্রাপ্তিযোগও বড়। এই বড় পারফরম্যান্সের ব্যাখ্যা হতে পারে অনেক রকম। সমানে সমান লড়াই পাঁচদিন। দাপুটে কোনো ড্র। কিংবা আশার সীমানা আরেকটু বড়িয়ে, জয়!

শুরুর আগে ইতিহাস নিয়ে টানাটানি হতে পারে। তবে বাংলাদেশ জিতে গেলে সবাই এবং সব চলে আসবে একই প্রান্তে। টেস্ট ম্যাচটি তখন আক্ষরিক অর্থেই হয়ে থাকবে ঐতিহাসিক!