ইমরুল না সৌম্য?

শটটি খেলে দাঁড়িয়ে রইলেন ইমরুল কায়েস। লং লেগে ফিল্ডার হার্দিক পান্ডিয়াও জায়গায় দাঁড়িয়ে। নড়তে হলো সামান্যই, ক্যাচ জমল তার হাতে এসে। ইমরুল তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে। হয়ত নিজের ওপরই বিরক্ত। আরও একবার!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিসিকান্দারাবাদ থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2017, 03:06 PM
Updated : 5 Feb 2017, 03:06 PM

হতাশায় পারলে সেখানেই নুইয়ে পড়েন। কিন্তু চাইলেই তো আর হয় না। সৌম্য সরকার ততক্ষণে মাঠে ঢুকে গেছেন। ইমরুল কোনো রকমে বের হলেন শরীরটাকে টেনে নিয়ে। সৌম্য উইকেটে গিয়ে এমন ভাবে খেলতে থাকলেন, ইমরুলকে ভুলে যেতে সময় লাগল না।

খানিক পর অবশ্য পাশেই পাওয়া গেল ইমরুলকে। জিমখানা ক্রিকেট মাঠে সামিয়ানা টাঙানা অস্থায়ী প্রেসবক্সেই বসেছিলেন বাংলাদেশ দলের ভিডিও অ্যানালিস্ট। ইমরুল গিয়ে বসলেন অ্যানালিস্টের ল্যাপটপের সামনে। ওয়েলিংটন টেস্টে ঠিক এভাবেই শর্ট বলে পুল করে লং লেগে ক্যাচ দিয়েছিলেন ইমরুল। তার আগে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেও শর্ট বলে পুল খেলে আউট। ল্যাপটপের পর্দায় চোখ না রেখেও বলা যায় কিসের কাঁটাছেড়া চলছিল ভিডিও বিশ্লেষণে।

অনেকটা সময় নিয়েই দেখলেন ইমরুল। কপালে ভাঁজ। অবশ্যই দুর্ভাবনার চিহ্ন। ভিডিও দেখা শেষে ব্যাট হাতে নেমে গেলেন। নেটে অনুশীলন চলল বেশ কিছুক্ষণ।

ইমরুল যখন জিমাখানা নেটে, সৌম্য তখন মাঝের ২২ গজে ছুটিয়ে চলেছেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি। বাউন্সি উইকেট। খানিকটা অসম বাউন্সও আছে। তামিম-মুমিনুলরা সুবিধে করতে পারলেন না। সৌম্য সেখানে দারুণ সাবলীল। ফ্লিক, ড্রাইভ, পুল-দারুণ টাইমিং আর চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য। প্রতিটি শট যেন দাপটের প্রতিচ্ছবি। এমনকি ডিফেন্স কিংবা বল ছাড়াতেও ঠিকরে বের হচ্ছিলো আত্মবিশ্বাস। অথচ কদিন আগেও চিত্রটা ছিল ভিন্ন!

নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন সৌম্য। আর টেস্ট একাদশে শুরুর দিকেই বসাতো হতো ইমরুলের নাম। টেস্টে দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। তামিম ইকবালের সঙ্গে তার জুটি দেশের সফলতম। হঠাৎই ইমরুলের আকাশে কালো মেঘের আনাগোণা। চোট বাধা কাটিয়ে উঠেছেন। কিন্তু একই ভাবে বারবার আউট আর দৃষ্টিকটু কিছু শট সামনে তুলে দিয়েছে বাধার দেয়াল।

সঙ্গে যোগ হয়েছে সৌম্যর আপন রূপে ফেরা। ইমরুলের চোটেই ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে সুযোগ পেয়েছিলেন সাদা পোশাকে প্রথমবার ওপেন করার। দুই ইনিংসে করেছেন ৮৬ ও ৩৬। এবার প্রস্তুতি ম্যাচে দূরূহ উইকেটে ৫২। তামিমের নিয়মিত সঙ্গী হিসেবে চোট কাটিয়ে ফেরার পর জায়গাও ফিরে পাওয়ার কথা ইমরুলের। কিন্তু তার আউটের ধরন ও সৌম্যর ফর্ম তুলে দিচ্ছে প্রশ্নের অবকাশ।

অভিজ্ঞতার পাশাপাশি স্পিনে দক্ষতার কারণেও হয়ত একটু এগিয়ে থাকবেন ইমরুল। সুইপ শটটাও খেলেন দারুণ। কিন্তু স্পিন পর্যন্ত টিকতে হবে তো? অশ্বিন-জাদেজা বল হাতে নেওয়ার আগেই উমেশ-ইশান্তদের শর্ট বল আগেই হয়ে উঠতে পারে ঘাতক। পেস বলে সৌম্যর দক্ষতা প্রশ্নাতীত। বিশেষ করে যখন এমন ছন্দে।

সৌম্য অবশ্য দুজনের লড়াইয়ের অস্তিত্বই স্বীকার করলেন না।

“ইমরুল ভাইয়ের সঙ্গে লড়াইয়ের চিন্তা করে খেলিনি। চেষ্টা করেছি নিজের খেলাটা খেলতে। ইমরুল ভাই তার জায়গায় খেলবে, আমি ভালো করলে আমার জায়গায় খেলব। কারও সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে খেলছি না। নিজের সঙ্গেই লড়াই করছি যে আরও ভালো করতে হবে। ভালো করলে আমিই সুযোগ পাব।”

ব্যাটিংয়ের সময় অবশ্যই সৌম্যর মাথায় লড়াইয়ের ভাবনা থাকে না। তবে ব্যাটের এক-একটি শটই তো জমিয়ে তুলছে লড়াই! নিজ নিজ জায়গায় ভালো করার কথাও বললেন। সমস্যা হলো, আপাতদৃষ্টিতে জায়গা তো একটিই!

ইমরুল-সৌম্যর লড়াই তাই জমে উঠেছে দারুণ। কিছুদিন আগেও দৌড়ে ছিলেনই না সৌম্য। এখন দুজনের একজনকে বেছে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজন হবে ফটো ফিনিশিংয়ের। কাজটা কঠিন। তবে কাজটি নিশ্চয়ই নিয়মিতই করতে চাইবেন মুশফিক-হাথুরুসিংহেরা!