অশ্বিনের সঙ্গে লড়াই দেখছেন না সাকিব

তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস তখন ব্যাটিংয়ে নামছেন। ভারতীয় ‘এ’ দলের ফিল্ডাররাও নেমে গেছেন। কিন্তু সাকিব আল হাসান তখনও অনুশীলনের পোশাকে; মাঠের বাইরে কসরত করছেন ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়নের সঙ্গে। কারণটা বোঝা গেল খানিক পর। প্রস্তুতি ম্যাচে খেলছেন না সাকিব।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি সিকান্দারাবাদ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2017, 10:09 AM
Updated : 5 Feb 2017, 12:06 PM

টেস্ট একাদশের সম্ভাব্য দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বির সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে সাকিবকে। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ‘চাপ’ নিতে হয় তাকে। দলের ব্যস্ততম ক্রিকেটারও তিনিই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই। সাকিবকে তরতাজা রাখতেই তাই তার চাপ সামলানো হচ্ছে খুব সতর্কভাবে।

ভারতে আসার আগে দেশে দুই দিনের অনুশীলন সেশনও সাকিবের জন্য ছিল ঐচ্ছিক।

তাসকিন ও রাব্বি মাঠেই আসেননি। তবে সাকিবের জন্য ম্যাচ না খেলা মানেই পুরোপুরি বিশ্রাম নয়। বরং কোচ ও ব্যাটিং কোচের আলাদা সেশনই ছিল সাকিবকে নিয়ে।

সিকান্দারাবাদ জিমখানা মাঠে অনুশীলনের জন্য আছে গোটা পনেরো নেট। সেটির একটিতেই প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘক্ষণ ঘাম ঝরালেন এই অলরাউন্ডার। নেট বোলাররা তো ছিলই, সঙ্গে অফ স্পিন ও মিডিয়াম পেস মিলিয়ে বোলিং করলেন চন্দিকা হাথুরুসিংহে। থিলান সামারাবিরা মাঝেমধ্যেই এগিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন নানা কিছু। সবশেষে খুব কাছ থেকে ‘থ্রো ডাউন’ করলেন ব্যাটিং কোচ। হাঁটুর নীচে থাকা বলে ব্যাটিং করলেন সাকিব। হয়ত ভারতের মাটিতে টেস্টের জন্য সবচেয়ে জরুরি প্রস্তুতি এটিই!

সাকিবকে নিয়ে আলাদা করে প্রস্তুতির কারণটা বুঝতে খুব বড় বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। বাংলাদেশের জন্য সাকিবের পারফরম্যান্স সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ব্যাটে-বলে ভারতের মাটিতে সেই গুরুত্বটা বেড়ে যাচ্ছে আরও বেশি। বলা যায় বাংলাদেশের ভালো করার পূর্বশর্ত এখানে সাকিবের জ্বলে ওঠা।

শুধু দলের জন্যই তো। ভারত-বাংলাদেশ টেস্টে আরেকটা লড়াইয়ের ছবিও দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই। সেটি ব্যক্তিগত দ্বৈরথ। সাকিব বনাম অশ্বিন!

২০১১ সালের ডিসেম্বরে আইসিসি টেস্ট অলরাউন্ডারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথমবার শীর্ষে উঠেছিলেন সাকিব। এর পর চার বছর ধরে বেশির ভাগ সময় এখানে ছিল তারই রাজত্ব। মোটা ৭৬৭ দিন ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ টেস্ট অলরাউন্ডার। সেই মুকুট আপাতত রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মাথায়।

ব্যাটে-বলে গত কিছুদিনে অশ্বিন এতটাই উজ্জ্বল যে সাকিবের রাজত্ব তিনি শুধু কেড়েই নেননি, সিংহাসনে জমিয়েও বসেছেন। সাকিবও কম যাচ্ছেন না। সবশেষ দুটি র‌্যাঙ্কিংয়েই নিজের সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। অশ্বিনকে তবু দেখতে হচ্ছে উঁচুতে তাকিয়েই। পয়েন্টের ব্যবধান এখনও ৩৯।

শ্রেষ্ঠত্বের পরীক্ষা একটি টেস্ট দিয়েই হয় না অবশ্যই। তবে সমসাময়িক সেরা দুই অলরাউন্ডার যখন মুখোমুখি, ব্যক্তিগত লড়াইটিও তো ছড়ায় উত্তেজনার বারুদ!

সাকিব অবশ্য আগুন সেভাবে জ্বলে ওঠার আগেই জল ঢেলে দিলেন। অশ্বিনের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রসঙ্গটি যে অবধারিত, নিশ্চিত জানতেন তিনিও। প্রশ্ন শেষ না হতেই তাই কেড়ে নিলেন।

“এভাবে আমি চিন্তা করি না। আমি নিশ্চিত সেও চিন্তা করে না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজ দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারা।”

“অশ্বিনের জায়গায় অশ্বিন ভালো করছে। আমার জায়গাটায় আমি ভালো করতে পারি। যত বেশি ভালো করতে পারব, দলকে সাহায্য করবে। আসলে প্রতিটি ক্রিকেটারই দলের জন্য আলাদা করে গুরুত্বপূর্ণ। আমার যতটুকু অবদান রাখার সুযোগ আসে, সেটা করতে পারলেই আমি খুশি।”

শুধু অলরাউন্ডারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে নয়, বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়েও এক নম্বর অশ্বিন। উইকেট নিচ্ছেন বলতে গেলে নামতা গুণে। গত কিছুদিনে হয়ে উঠেছেন প্রায় পরিপূর্ণ স্পিনার। বোলার অশ্বিনে নিজের মুগ্ধতার কথা শোনালেন সাকিবও।

“অশ্বিন দারুণ বোলিং করছে..গত ২-৩ বছর ধরেই। ওর নিয়ন্ত্রণ অসাধারণ। সে যা চায়, করতে পারে। এইরকম নিয়ন্ত্রণ থাকলে আর কিছু করার দরকার নেই! এই নিয়ন্ত্রণ থেকেই আসে আত্মবিশ্বাস। সব মিলিয়েই সে এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা স্পিনার।”

বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে সাকিব ১৪ নম্বরে। আপাতত র‌্যাঙ্কিংয়ের লড়াই এখানে নেই। স্বয়ং সাকিবই মেনে নিচ্ছেন শ্রেষ্ঠত্ব। কিন্তু অলরাউন্ডারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে ব্যবধান রেটিং পয়েন্টে যতোই থাকুক, আসলে তো পিঠেপিঠি। মুখোমুখি লড়াইয়ের মঞ্চেই হয়ত ঝেরে ফেলতে পারেন কেউ কাউকে!

সাকিব যতোই প্রসঙ্গে জল ঢালুন, ছাই চাপা আগুন থেকেও ঠিকই উঠবে ধোঁয়া।