স্টয়নিসের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়েও অস্ট্রেলিয়ার হার

অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে প্রথম ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় অসম্ভব এক জয়ের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন মার্কাস স্টয়নিস। জয় যখন তার দলের হাত ছোঁয়া দূরত্বে, তখনই ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান জশ হেইজেলউডকে রান আউট করে নাটকীয় জয় তুলে নিয়েছে নিউ জিল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2017, 06:34 AM
Updated : 30 Jan 2017, 06:35 AM

স্টয়নিস বীরত্বের পরও ৬ রানে জিতে তিন ম্যাচের চ্যাপেল-হ্যাডলি ট্রফিতে এগিয়ে গেল নিউ জিল্যান্ড।

টিম সাউদির আগের দুই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে প্রয়োজনীয়তা ১৯ বলে ৭ রানে নামিয়ে আনেন স্টয়নিস। স্ট্রাইক ফিরে পেতে সেই ওভারের শেষ বলে দ্রুত একটি রান নিতে চেয়েছিলেন তিনি। শর্ট মিডঅনে থাকা কেন উইলিয়ামসন সুযোগ কাজে লাগাতে কোনো ভুল করেননি। রান আউট হয়ে যান হেইজেলউড।

মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমে ১৪৬ রানে অপরাজিত থাকেন স্টয়নিস। এই তরুণ অলরাউন্ডারের ১১৭ বলের ইনিংসটি গড়া ১১টি ছক্কা ও ৭টি চারে। ওয়ানডেতে সাত নম্বরে নেমে তার চেয়ে বেশি রানের ইনিংস আছে আর একটিই; শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিউ জিল্যান্ডের লুক রনকির অপরাজিত ১৭০।

অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে সোমবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ২৮৬ রান করে নিউ জিল্যান্ড। জবাবে ৪৭ ওভারে ২৮০ রানে অলআউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।

আগে থেকেই ছিলেন না স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার। ম্যাচের আগে চোটের জন্য ছিটকে যান ম্যাথু ওয়েডও। তার জায়গায় দলকে নেতৃত্ব দেন অ্যারন ফিঞ্চ। তবে দলকে সামনে থেকে পথ দেখাতে পারেননি তিনি।

জোড়া আঘাতে অস্ট্রেলিয়ার দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ফিঞ্চ ও ট্র্যাভিস হেডকে ফিরিয়ে দেন ট্রেন্ট বোল্ট। দলের বিপদ বাড়িয়ে দ্রুত ফিরেন শন মার্শ, পিটার হ্যান্ডসকম, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অভিষিক্ত স্যাম হেজলেট। ১৯তম ওভারে ৬৭ রানের মধ্যে বিদায় নেন প্রথম ৬ ব্যাটসম্যান।

এই মাঠে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে ১৫১ ও ১৪৮ রান করে অস্ট্রেলিয়া। দেখা দেয় আবার তার পুনরাবৃত্তির শঙ্কা। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন স্টয়নিস। জেমস ফকনারের সঙ্গে ৮১ রানের জুটিতে গড়েন প্রতিরোধ। তার সঙ্গে ৪৮ রানের আরেকটি কার্যকর জুটিতে দ্রুত রান সংগ্রহ করে আশা বাঁচিয়ে রাখেন প্যাট কামিন্স।

৫টি চার ও একটি ছক্কায় ২৮ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৩৬ রান করে কামিন্সের বিদায়ের পর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন স্টয়নিস। ক্লাব ক্রিকেটে এক ওভারে ছয়টি ছক্কা হাঁকানোর কৃতিত্ব আছে তার। সামর্থ্যের খানিকটা দেখান জেমস নিশামের এক ওভারে তিন ছক্কা হাঁকিয়ে।

নিজের শেষ বলে মিচেল স্টার্ককে ফিরিয়ে দেন মিচেল স্যান্টনার। তখনও ৭ ওভারে ৬১ রান প্রয়োজন অস্ট্রেলিয়ার।

ট্রেন্ট বোল্টকে ছক্কা হাঁকিয়ে ৯৬ বলে শতকে পৌঁছান স্টয়নিস। ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়ার সঙ্গে তিন অঙ্কের রান করা প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার তিনি।  দশম উইকেটে হেইজেলউডের সঙ্গে ৪ ওভার স্থায়ী ৫৪ রানের জুটিতে দলকে নিয়ে যান জয়ের খুব কাছে। ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানকে আগলে রাখতে প্রতি ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নেন তিনি। কিন্তু ৪৭তম ওভারে শেষ বলে সেই চেষ্টা করতে গিয়েই ভাঙে জুটি।

নিউ জিল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার স্যান্টনার ৩ উইকেট নেন ৪৪ রানে।

এর আগে টম ল্যাথাম, কেন উইলিয়ামসন, রস টেইলর ও কলিন মানরোকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন অতিথিরা। চোট কাটিয়ে ফেরা দুই ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিল ও নিল ব্রুমের দুই অর্ধশতকের ওপর ভর করে লড়াইয়ের পুঁজি গড়ে নিউ জিল্যান্ড।

৭৩ বলে ৮টি চারে ৬১ রান করে ফিরেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মার্টিন। পরের ওভারে ফিরে মানরোকে বিদায় করেন স্টয়নিস। ১৩৪ রানে ৫ উইকেট হারানো নিউ জিল্যান্ড প্রতিরোধ গড়ে ব্রুম-জেমস নিশামের ব্যাটে। ষষ্ঠ উইকেটে এই দুই জনে গড়েন ৭৬ রানের জুটি। অলরাউন্ডার নিশাম ৪৫ বলে ফিরেন ৬টি চারে ৪৮ রান করে।

সেখান থেকে দলের সংগ্রহ আড়াইশ ছাড়ায় ব্রুমের ব্যাটে। ৭৫ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৭৩ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। শেষ দিকে ৭ বলে ১৬ রানের ছোট কিন্তু কার্যকর এক ইনিংস খেলেন ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান বোল্ট।

প্রত্যাশিত সুইং পাননি মিচেল স্টার্ক, জশ হেইজেলউডরা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বোলিং-ফিল্ডিংও ছিল এলোমেলো। অতিরিক্ত থেকে এসেছে ২৯ রান। হাত থেকে ছুটেছে অনেক ক্যাচ।

৪৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে অতিথিদের সেরা বোলার স্টয়নিস। দল হারলেও অলরাউন্ড নৈপুণ্যের জন্য তিনিই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

আগামী বৃহস্পতিবার নেপিয়ারে হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৮৬/৯ (গাপটিল ৬১, ল্যাথাম ৭, উইলিয়ামসন ২৪, টেইলর ১৬, ব্রুম ৭৩, মানরো ২, নিশাম ৪৮, স্যান্টনার ৭, , সাউদি ০, ফার্গুসন ৩*, বোল্ট ১৬*; স্টার্ক ১/৫৯, হেইজেলউড ১/৪৮, কামিন্স ২/৬৭, ফকনার ১/২৯, স্টয়নিস ৩/৪৯, হেড ১/২১)

অস্ট্রেলিয়া: ৪৭ ওভারে ২৮০ (ফিঞ্চ ৪, হেড ৫, মার্শ ১৬, হ্যান্ডসকম ৭, ম্যাক্সওয়েল ২০, হেজলেট ৪, স্টয়নিস ১৪৬*, ফকনার ২৫, কামিন্স ৩৬, স্টার্ক ৩, হেইজেলউড ০; সাউদি ১/৬৩, বোল্ট ২/৫৮, ফার্গুসন ২/৪৪, স্যান্টনার ৩/৪৪, নিশাম ০/৪৯, মানরো ১/২০)

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৬ রানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মার্কাস স্টয়নিস।