কোচের কাছে ফল হতাশার, সফর নয়

বরাবরের মতোই হ্যাগলি পার্কের পাশে পার্কিংয়ে গাড়ির লম্বা সারি। প্রতিদিনের মতোই তাজা বাতাস আর প্রকৃতির সান্নিধ্যে শরীরচর্চা করতে আসা মানুষের ছুটোছুটি। পাখপাখালির কিচিরমিচির। গায়ে আরামের পরশ বুলিয়ে দেওয়া মৃদুমন্দ বাতাস। গাছগাছালির ঘন সারির ফাঁক গলে রোদের আসা-যাওয়া। আলো-ছায়ার খেলা। ক্রিকেটের আদর্শ পরিবেশ। কিন্তু ক্রিকেটই নেই!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি ক্রাইস্টচার্চ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2017, 11:14 AM
Updated : 24 Jan 2017, 11:32 AM

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের পঞ্চম দিনের খেলা হওয়ার কথা এদিন। হ্যাগলি ওভালে নেই প্রাণচাঞ্চল্য। টিম হোটেলে গিয়ে অবশ্য খানিকটা সাড়াশব্দ পাওয়া গেল। খেলা শেষ হলেও শেষ হয়নি ‘মিটিং-সিটিং।’ সাপোর্ট স্টাফের বাকিদের নিয়ে সভায় বসেছিলেন প্রধান কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে।

হতে পারে নিউ জিল্যান্ড সফরের পোস্টমর্টেম, কিংবা ভারত সফরের পরিকল্পনা। তবে সভা থেকে বেরিয়ে হাথুরুসিংহের কণ্ঠে শোনা গেল পুরোনো বুলিই। প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে শুরু করে সবগুলো ম্যাচ হারার সফর। ফলটায় হতাশ হলেও কোচ খুঁজে পাচ্ছেন ইতিবাচক অনেক কিছু। এমনকি দলের উন্নতিও খুশি করেছে তাকে।

“ফলটা হতাশাজনক। আমরা একটি ম্যাচও জিতিনি। একটি ম্যাচ জেতার জন্য যথেষ্ট লম্বা সময় ভালো খেলতে পারিনি আমরা। তবে এই সফর থেকেও অনেক ইতিবাচক কিছু নেওয়ার আছে।”

“যে ধরনের কন্ডিশনে আমরা খুব বেশি খেলি না, সেখানে এসে জয়ের সুযোগ সৃষ্টি করাও অনেক ইতিবাচক ব্যাপার। আমি খুশি যে আমরা উন্নতি করতে পেরেছি। যদিও ফলাফলে আমাদের অর্জনের প্রতিফলন নেই।”

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ম্যাচ না জিতেও ‘অর্জন’ খোঁজাখুঁজি একসময় খুব চলত। সেসব দিন অনেক পেছনে পড়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছিলো। এই নিউ জিল্যান্ড সফর আবার ফিরিয়ে আনল সেই দিনগুলি। রঙিন পোশাকের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, টেস্টের দুই অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল, নানা সময়ে সংবাদমাধ্যমে মুখোমুখি হওয়া দলের অন্যরা এবং প্রধান কোচ, সবার কণ্ঠে তৃপ্তির ছোঁয়া জয়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেই।

উপমহাদেশের দলগুলির জন্য নিউ জিল্যান্ডে এসে জয়ের সুযোগ সৃষ্টি করাটাও বেশ কঠিন, সন্দেহ নেই। তবে অন্যদের ব্যর্থতাকে নিজেদের হারের ঢাল করে নিলে অন্যদের কাতারেই থাকতে হয়, এগিয়ে যাওয়া হয় না। বাংলাদেশ এবার হাতছাড়া করেছে সেই এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ।

কন্ডিশন বিরুদ্ধ অবশ্যই। তবে সেটি অ্যান্টার্কটিকার অনুভূতি নিয়ে আসেনি কোথাও। বরং ছিল অনেকটাই আরামদায়ক। যেমন স্বস্তি ছিল উইকেট। ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টিতে তো বটেই, দুটি টেস্টেও উইকেট ছিল প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি ব্যাটিং সহায়ক। বাংলাদেশ বেশিরভাগ সময় ডুবেছে ব্যাটিংয়েই।

জয়ের সুযোগ সৃষ্টিতেই ইতিবাচকতা খোঁজার এই গল্প সফরের শুরুর দিকে টাটকা ছিল। স্বাদ খারাপ ছিল না। সময়ের সঙ্গে সেটি হয়ে উঠেছে তেতো। এখন আর মুখে তোলার জো নেই!