একটি আত্মঘাতী শটের ময়নাতদন্ত
ওয়েলিংটন থেকে আরিফুল ইসলাম রনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 16 Jan 2017 06:15 PM BdST Updated: 16 Jan 2017 07:47 PM BdST
এলোমেলো দু-এক শব্দ বলে, একটু থেমে, আবার কিছু বলার চেষ্টা করে এক পর্যায়ে হেসে ফেললেন তামিম ইকবাল। মুখে অসহায়ত্বের হাসি আর কণ্ঠে আত্মসমর্পণের সুর, “আমরা যখন… এটা নিয়ে… এটা আমি কী করে ব্যাখ্যা দেব…!”
Related Stories
তামিম যে ঘটনার ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না, সেটিই বিস্মিত করেছে কেন উইলিয়ামসনকে। তামিমের আগে সংবাদ সম্মেলনে কিউই অধিনায়ক বলে গেছেন, উপহারটি তাদের কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত। প্রসঙ্গ, পঞ্চম দিন সকালে সাকিব আল হাসানের শট!
প্রথম ইনিংসে সাকিব ছিলেন রেকর্ড গড়া নায়ক। তবে টেস্ট ক্রিকেট তো আর স্রেফ এক ইনিংসের খেলা নয়। ম্যাচের বদলে যাওয়া চিত্র সাকিবের কাছ থেকে দাবি করছিল আরও কিছু। প্রথম ইনিংসের মত বড় কিছু নয়। একটি সেশন, নিদেনপক্ষে এক ঘণ্টা উইকেটে থাকলেও ড্রয়ের পথে এগিয়ে যেত বাংলাদেশ। চাঙা হতো ড্রেসিং রুম। ইমরুল কায়েসের ব্যাটিংয়ে নামা তখন অনিশ্চিত। মুশফিকুর রহিম অপেক্ষায় ছিলেন আঙুলের ব্যাথা নিয়ে। দল তাকিয়ে ছিল সাকিবের দিকে।
সাকিব তাকালেন বুঝি সীমানা ছাড়িয়ে। দিনের মাত্র অষ্টম বলেই তেড়েফুড়ে উড়িয়ে মারতে গেলেন মিচেল স্যান্টনারকে। সহজ ক্যাচটি যখন জমছে মিড অনে কেন উইলিয়ামসনের হাতে, গ্যালারিতে, প্রেসবক্সে, ধারাভাষ্যকক্ষে তখন অনেক জোড়া বিস্ফোরিত চোখ। হয়ত ড্রেসিং রুমেও। এটা কি সত্যি, নাকি কোনো দুঃস্বপ্ন? দলের ভীষণ প্রয়োজনের সময়, গর্বের ড্রয়ের হাতছানির সামনে দাঁড়িয়ে, দিনের শুরুতেই এমন অবিশ্বাস্য আত্মঘাতী শট!
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম থেকে একটি ভুতুড়ে স্মৃতি এসে ভর করলো যেন হাজার হাজার মাইল দূরের বেসিন রিজার্ভে। এই তো, গত অক্টোবরেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেখা গিয়েছিল ঠিক এরকমই মস্তিষ্ক বিস্ফোরণ।
সেটি ছিল তৃতীয় দিনের সকাল। মাত্র দ্বিতীয় বলেই মইন আলির স্পিনে তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে সাকিব হয়েছিলে স্টাম্পড। সে সময়ও তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল সেই শট। এবার সেটির পুনরাবৃত্তি। বিস্মযের পাশাপাশি জাগছে প্রশ্নও, আগের ভুল থেকে কতটুকু শিক্ষা নিলেন সাকিব?
তামিম ইকবাল চেষ্টা করলেন ক্রিকেটীয় যুক্তি একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর।
“একটা ব্যাপার আমরা জানতাম যে দিনটা কাটাতে হলে আমাদের স্বাভাবিক খেলতে হবে। অতি রক্ষণাত্মক হলে সমস্যা, অতি আক্রমণাত্মকও নয়। সাকিবের ক্ষেত্রে হয়ত যেটা হয়েছে, বাঁহাতি স্পিনার বল করছিল, বাতাসের অনুকূলে। ও যদি মনে করে থাকে এটা ঠিক শট ছিল, তাহলে আমি একমতই। কিন্তু লাগেনি, আউট হয়ে গেছে। এখন অনেক কথাই বলা যায়।”
উইলিয়ামসনের ধারণাটাও মিলে যাচ্ছে তামিমের ভাবনার সঙ্গে।
“বাঁহাতি স্পিনারের বল ঢুকছিল ভেতরে। সাকিব শট খেলেছে বাতাসের অনুকূলে, হয়ত ভেবেছিল ফিল্ডার পার করাতে পারবে। কিন্তু টাইমিংয়ে গড়বড় করেছে, আমাদের জন্য যেটি হয়েছে দারুণ। কারণ সে দুর্দান্ত একজন ক্রিকেটার, প্রথম ইনিংসে খেলছে অবিশ্বাস্য একটি ইনিংস।”
সাকিব দুর্দান্ত বলে আক্ষেপটাও বেশি। ডাবল সেঞ্চুরির পিঠে শূন্য বলে আরও বেশি আক্ষেপ। সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ থেকে শিক্ষা না নিয়ে ভুলের পুনরাবৃত্তি। ক্রিকেটীয় যুক্তিতে তামিমের ব্যাখ্যাটা বোধগম্যই। সেসব বিবেচনায় নিয়েও জাগে প্রশ্ন, দলের বিপদে সামান্যতম ঝুঁকি নেওয়াও কতটা যৌক্তিক?
ব্যাখ্যা নেই জানিয়ে তামিম এক পর্যায়ে বলতে বাধ্য হলেন, “আমার কাছে মনে হয়, একটু সময় নিয়ে ওরকম শট খেললে সবার জন্য ভালো হতো।”
শেষ কথা এটিই। দলের প্রয়োজনে ‘সেন্সিবল’ হওয়া। প্রশ্নগুলোর উত্তর সাকিবের দ্রুত বের করা জরুরি। তাতে চট্টগ্রাম বা বেসিন রিজার্ভের দুঃসহ স্মৃতি মোছা যাবে না, তবে অন্তত ঠেকানো যাবে ফিরে আসা!
সর্বাধিক পঠিত
- বদলি করা হল চট্টগ্রামের মানবিক পুলিশ ইউনিটের শওকতকে
- ‘ওভারনাইট বান্দরবান পাঠিয়ে দেব’ বন্ধ চায় সংসদীয় কমিটি
- মেসির জোড়া গোলে বার্সার জয়
- ‘বনবন্ধু’ সেজে মুজিববর্ষে বৃক্ষরোপণের নামে প্রতারণা
- বিস্ফোরণে সড়ক ফেঁড়ে উঠে এল ঢাকনি
- আমার ‘ওয়াইফ’কে নিয়ে বাজে কথা বললে ‘অ্যাকশন’: নাসির
- ‘সি’ ক্যাটাগরি দেওয়ায় পিসিবির চুক্তি ফিরিয়ে দিলেন হাফিজ
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বসে বসে মধু খেয়েছেন: হাই কোর্ট
- ‘রুটের ভুল ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত’
- ১০ জনের আতালান্তার বিপক্ষে রিয়ালের কষ্টের জয়