শেষ বিকেলে ৩ উইকেট
নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে সাবলীলভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। হঠাৎ বিপত্তি, দ্রুত রান নিয়ে গিয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন ইমরুল কায়েস। দ্রুত ফিরেন তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। আঙুলে চোট রয়েছে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের। তাই হঠাৎ অস্বস্তিতে বাংলাদেশ।
চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৬৬ রান; লিড ১২২। ১০ রানে অপরাজিত আছেন মুমিনুল হক। পঞ্চম ও শেষ দিন দলকে নিরাপদে নিতে মুমিনুল-সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমানকেই রাখতে হবে বড় ভূমিকা।
দলকে বিপদে ফেলে রান আউট মিরাজ
রান আউট হয়ে ফিরেন নাইটওয়াচম্যান মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছিলেন দ্বিতীয় দিনের শেষ বলে। এবার মিচেল স্যান্টনারের সরাসরি থ্রোয়ে তিনি রানআউট হওয়ারই শেষ হয় চতুর্থ দিনের খেলা।
মাহমুদউল্লাহর বিদায়
আহত হয়ে মাঠ ছেড়েছেন ইমরুল কায়েস, আঙুলে চোট আছে মুশফিকুর রহিমের। ততক্ষণ আউট তামিম ইকবাল। এই সময়ে যতটা দায়িত্বশীল ব্যাটিং দরকার ছিল সেটা করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। নিল ওয়েগনারের লেগ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে উইকেটরক্ষক বিজে ওয়াটলিংকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন এই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান।
৫ রান করে মাহমুদউল্লাহ ফেরার সময় বাংলাদেশের স্কোর ৬৩/২। দলের লিড তখন ১১৯।
বোল্ড হয়ে ফিরলেন তামিম
ইমরুল কায়েস আহত হয়ে মাঠ ছাড়ার পরের ওভারে বিদায় নেন তামিম ইকবাল। বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের ভেতরে ঢোকা বলের লেংথ বুঝতে পারেননি তিনি। পিছিয়ে গিয়ে লেট কাট করার চেষ্টায় হন বোল্ড।
দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম করেন ২৫ রান। ১৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৫১/১। দলের লিড তখন ১০৭ রান।
স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়লেন ইমরুল
নিউ জিল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রথম লিড
নিউ জিল্যান্ডে প্রথম ইনিংসে প্রথমবারের মতো লিড নেয় বাংলাদেশ। ৮ উইকেটে ৫৯৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করা মুশফিকুর রহিমের দল স্বাগতিকদের গুটিয়ে দেয় ৫৩৯ রানে।
ক্যারিয়ার সেরা ৭৩ রানের ইনিংস খেলা মিচেল স্যান্টনারকে বোল্ড করে দলকে ৫৬ রানের লিড এনে দেন শুভাশীষ রায়। এর আগে দেশের মাটিতে দুই বার নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে লিড নিয়েছিল বাংলাদেশ।
৮৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার কামরুল ইসলাম রাব্বি (৩/৮৭)। দুটি করে উইকেট নেন মাহমুদউল্লাহ (২/১৫), সাকিব আল হাসান (২/৭৮) ও শুভাশীষ রায় (২/৮৯)।
২৯ ওভারে ১৪১ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। সবচেয়ে বেশি ৩৭ ওভারে ১১৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য মেহেদী হাসান। তার বোলিং ফিগার যা বলছে তার চেয়ে অনেক ভালো বোলিং করেছেন এই তরুণ অফ স্পিনার।
মুশফিকের চোটে আবার উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ইমরুল কায়েস স্পর্শ করেন দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫ ডিসমিসালের রেকর্ড। এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান নিউ জিল্যান্ড ইনিংসের পুরোটা সময় কিপিং করেন। এর আগে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে মুশফিক চোট পেলে ১২০ ওভারের মতো কিপিং করেছিলেন ইমরুল। সেবার শেষ দিকে তার কাছ থেকে গ্লাভস নিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
মুশফিকের পাশে ইমরুল
মুশফিকুর রহিমের জায়গায় দাঁড়িয়ে তারই রেকর্ড স্পর্শ করেন ইমরুল কায়েস। কিপিংয়ে টেস্টে এক ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ডিসমিসাল এখন যৌথভাবে এই দুই জনের।
২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে আর ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বো টেস্টে ইনিংসে পাঁচটি করে ডিসমিসাল রয়েছে মুশফিকের। তার আঙুলের চোটে ওয়েলিংটন টেস্টে কিপিংয়ে দাঁড়ান বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইমরুল।
কিপিংয়ে ইমরুলের পারফরম্যান্স চমকে দেওয়ার মতো। কোনো সুযোগ হাতছাড়া করেননি। কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে নিল ওয়েগনারের ক্যাচ ধরে পাঁচ ডিসমিসালে মুশফিকের পাশে যান তিনি। ব্যাটিংয়ে নিউ জিল্যান্ডের দশম উইকেট জুটি। তাই অধিনায়ককে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ এখনও আছে তার।
রাব্বির তৃতীয় শিকার ওয়েগনার
চমৎকার বল করা কামরুল ইসলাম রাব্বি ফেরান নিল ওয়েগনারকে। নিউ জিল্যান্ডের ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে ইমরুল কায়েসের গ্লাভসবন্দি হন। এটি কিপিংয়ে দাঁড়ানো বাংলাদেশের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের পঞ্চম ডিসমিসাল।
কামরুলের তিন ওভারে তিনবার ওয়েগনারের হেলমেটে আঘাত লাগে। যে ওভারে আউট হন তাতে পরপর দুই বলে বাউন্সার হেলমেটে লাগে ওয়েগনারের। ১৮ রান করে তার ফেরার সময় নিউ জিল্যান্ডের স্কোর ৫০৪/৯।
দ্বিতীয় সেশনে মাহমুউল্লাহর জোড়া ধাক্কা
অর্ধশতকের পথে মিচেল স্যান্টনার। তার ব্যাটেই পাচশ’ ছোঁয়ার পথে আছে নিউ জিল্যান্ড। দ্বিতীয় সেশনে ২৫ ওভারে ৯০ রান যোগ করতে ২ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
ম্যাচে নিজের প্রথম ওভার করতে এসে বিজে ওয়াটলিং ও টিম সাউদিকে ফেরান মাহমুদউল্লাহ।
এরই মধ্যে চারটি ডিসমিসাল হয়ে গেছে মুশফিকুর রহিমের জায়গায় কিপিং করা ইমরুল কায়েসের।
মাহমুদউল্লাহর দ্বিতীয় শিকার সাউদি
প্রথম উইকেট ভালো কোনো বলে পাননি মাহমুদউল্লাহ। তবে দ্বিতীয়টি নেন চমৎকার এক ডেলিভারিতে। আর্ম বল ব্যাটের কানা ফাঁকি দিয়ে প্যাডে লাগলে এলবিডব্লিউ হন টিম সাউদি। রিভিউ নেন তিনি কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি।
দারুণ এক ওভারে ২ উইকেট নিয়ে দলকে লিড নেওয়ার পথে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ।
সাউদি ফেরার সময় নিউ জিল্যান্ডের স্কোর ৪৭৩/৮।
রিভিউ নিয়ে ওয়াটলিংকে ফেরাল বাংলাদেশ
বোলিংয়ে এসেই বিজে ওয়াটলিংকে ফেরান মাহমুদউল্লাহ। লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে শর্ট বল সজোরে হাঁকাতে গিয়ে ইমরুল কায়েসের গ্লাভসবন্দি হন নিউ জিল্যান্ডের উইকেটরক্ষক।
আম্পায়ার জোরালো আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। তাতে পাল্টায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। নিউ জিল্যান্ডের স্কোর তখন ৪৭১/৭।
ওয়াটলিং-স্যান্টনার জুটির অর্ধশতক
দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর বিজে ওয়াটলিং-মিচেল স্যান্টনারের ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে নিউ জিল্যান্ড। ৯৪ বলে আসে সপ্তম উইকেট জুটির অর্ধশতক।
১২৭ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের স্কোর ৪৫১/৬।
প্রথম সেশনে ৩ উইকেট
আগের দিন তিন সেশনে একটি করে উইকেট নেওয়া বাংলাদেশ চতুর্থ দিন লাঞ্চের আগে তুলে নেয় ৩ উইকেট। ৩৬ ওভারে হেনরি নিকোলস, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও টম ল্যাথামকে হারিয়ে ১১০ রান যোগ করে নিউ জিল্যান্ড।
লাঞ্চে যাওয়ার সময় স্বাগতিকদের স্কোর ৪০২/৬। বিজে ওয়াটলিং ১৬ ও মিচেল স্যান্টনার ৩ রানে অপরাজিত।
১২ ওভারের টানা স্পেলে দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নিকোলস ও ল্যাথামকে ফেরান সাকিব। ডি গ্র্যান্ডহোমকে ফিরিয়ে নিজের প্রথম টেস্ট উইকেট নেন শুভাশীষ রায়। মুশফিকুর রহিমের অনুপস্থিতিতে মাঠে দলকে পরিচালনা করা তামিম ইকবাল তিন পেসারকে ব্যবহার করেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। লম্বা স্পেল করাননি কাউকে দিয়েই।
নিউ জিল্যান্ডের চারশ’
বাংলাদেশের বিশাল সংগ্রহের জবাবে চতুর্থ দিনের লাঞ্চের আগে চারশ’ রানে পৌঁছায় নিউ জিল্যান্ড। ১১২ ওভার শেষে তাদের স্কোর ৪০০/৬। উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান বিজে ওয়াটলিংয়ের সঙ্গে ক্রিজে মিচেল স্যান্টনার।
সাকিবের দ্বিতীয় শিকার ল্যাথাম
শুভাশীষের প্রথম উইকেট ডি গ্র্যান্ডহোম
কঠিন সুযোগ হাতছাড়া
বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে হাত ছোঁয়ান মেহেদী হাসান মিরাজ কিন্তু তালুবন্দি করতে পারেননি টম ল্যাথামের ক্যাচ। নষ্ট হয় আরেকটি সুযোগ। সে সময় ১৫৮ রানে ব্যাট করছিলেন নিউ জিল্যান্ডের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।
কামরুল ইসলাম রাব্বির অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ বল তাড়া করতে গিয়ে ঠিক মতো পারেননি ল্যাথাম। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় দ্বিতীয় স্লিপের পাশ দিয়ে। দারুণ চেষ্টা করেন একটু আগেই হেনরি নিকোলসের ভালো একটা ক্যাচ তালুবন্দি করা মিরাজ। তবে এবার সফল হননি।
নিউ জিল্যান্ডের প্রতিরোধ ভাঙলেন সাকিব
ম্যাককালাম-রাইডারকে ছাড়িয়ে
কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে চার হাঁকিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো দেড়শ’ ছাড়ান টম ল্যাথাম। এই চারেই চতুর্থ জুটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি এনে দেয় নিউ জিল্যান্ডকে।
৮৯ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের স্কোর ৩৪৫/৩। জুটির ১৪০।
২০০৮ সালে ঢাকা টেস্টে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও জেসি রাইডার গড়েছিলেন ১৩৭ রানের জুটি। এত দিন চতুর্থ উইকেটে সেটাই ছিল সেরা। দেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের সেরা ছিল স্টিভেন ফ্লেমিং ও ক্রেইগ ম্যাকমিলানের ১৩০।
ল্যাথামের ক্যারিয়ার সেরা
নিউ জিল্যান্ডকে এগিয়ে নেওয়া টম ল্যাথাম ছাড়িয়ে যান নিজের ব্যক্তিগত সেরা। ২০১৪ সালে দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে করা ১৩৭ রান ছিল বাঁহাতি এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের আগের সর্বোচ্চ।
বেসিন রিজার্ভে নিউ জিল্যান্ডের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বোচ্চ রান ল্যাথামের। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জন রাইটের ১৩৮ রান আগের সেরা।
নিকোলসের অর্ধশতক
আগের দিন নড়বড়ে ব্যাটিং করা হেনরি নিকোলস চতুর্থ দিন পান অর্ধশতক। তাসকিন আহমেদের বলে তিন রান নিয়ে টেস্টে তৃতীয়বারের মতো পঞ্চাশে যান এই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান। ১১৬ বলের ইনিংসে হাঁকান ৫টি চার।
ল্যাথাম-নিকোলসের শতরানের জুটি
দ্বিতীয় নতুন বলের প্রথম ওভারে চতুর্থ উইকেট জুটির রান তিন অঙ্কে নিয়ে যান টম ল্যাথাম ও হেনরি নিকোলস। প্রথম ইনিংসে এটাই নিউ জিল্যান্ডের প্রথম শতরানের জুটি। এর আগে স্বাগতিকদের প্রথম তিন জুটি অর্ধশতক ছাড়ায়।
৭১ বলে এসেছিল ল্যাথাম-নিকোলস জুটির অর্ধশতক। শতক পর্যন্ত নিয়ে যেতে ২০০ বল খেলেন দুই ব্যাটসম্যান।
দ্বিতীয় নতুন বলেও মিরাজকে দিয়ে শুরু
স্বাগতিকদের ইনিংসের প্রথম ওভারটি করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে দলের প্রথম ইনিংসে স্পিন দিয়ে শুরু ওই প্রথম। ৮০ ওভার শেষে নতুন বল নেয় বাংলাদেশ, এবারও প্রথম ওভারটি করেন তরুণ অফ স্পিনার।
নিউ জিল্যান্ডের তিনশ’
চতুর্থ দিনের শুরুতেই নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ তিনশ’ রানে নিয়ে যান টম ল্যাথাম ও হেনরি নিকোলস। ৮০ ওভার শেষে স্বাগতিকদের স্কোর ৩০৩/৩।
রোববার ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে ৩ উইকেটে ২৯২ রান নিয়ে খেলা শুরু করে নিউ জিল্যান্ড। এদিন আকাশ ঘন মেঘে ঢাকা। সকালে হয়েছে বৃষ্টি।
খেলা শুরুতে পাঁচ মিনিট দেরি
বৃষ্টির জন্য চতুর্থ দিন খেলা শুরু হতে পাঁচ মিনিট দেরি হয়। প্রথম দিন প্রায় ৫০ ওভার খেলা কম হওয়ায় শেষ চার দিনই খেলা শুরু হওয়ার কথা নির্ধারিত সময়ের আধ ঘণ্টা আগে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে রোববার সকালে ছিল বৃষ্টির বাধা। তবে হঠাৎ করেই আবহাওয়া মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গেলে আম্পায়াররা খেলা শুরুর সিদ্ধান্ত নেন।