৩ উইকেট আর পাঁচটি সুযোগ

মার্টিন ক্রোর সেঞ্চুরির রেকর্ড ছোঁয়ার হাতছানি। মুহূর্তটার সাক্ষী হতে গ্যালারিতে রস টেইলরের বাবা-মা আর পরিবারের বেশ কজন। টেইলর থমকে গেলেন দারুণ শুরুর পরও। থিতু হওয়া কেন উইলিয়ামসনকে সরানোর দুঃসাধ্য কাজটিও হয়ে গেল তাসকিন আহমেদের গোলায়। কিন্তু টম ল্যাথামের দেয়ালে মুখ থুবড়ে পড়ল সব প্রচেষ্টা। ঠিক প্রথম ওয়ানডের মতো!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিওয়েলিংটন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2017, 06:41 AM
Updated : 14 Jan 2017, 11:46 AM

হ্যাগলি ওভালে ল্যাথামের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি দেখিয়েছিল জয়ের পথ। প্রথম টেস্টে সেই ল্যাথামের ব্যাটেই চলছে জবাব। ৩ উইকেটে ২৯২ রান নিয়ে ওয়েলিংটন টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ করেছে নিউ জিল্যান্ড। ল্যাথাম অপরাজিত ১১৯ রানে।

সকালে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ।

বেসিন রিজার্ভের উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো হয়ে ওঠে তৃতীয় দিনে। জানাই ছিল তাই সহজ হবে না বাংলাদেশের বোলারদের কাজ। তার পরও থাকছে একটু আক্ষেপ। তিন সেশনে বাংলাদেশ নিতে পেরেছে একটি করে উইকেট। তবে ধরা দিতে পারত আরও দু-একটি, যদি কাজে লাগানো যেত সুযোগ আর ‘প্রায়’ সুযোগগুলোর দু-একটি! তেমন সুযোগ বাংলাদেশ পেয়েছিল পাঁচ-পাঁচটি!

প্রথম সুযোগটি ছিল তাসকিন আহমেদের বলে। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট পেতে পারতেন তরুণ ফাস্ট বোলার। তৃতীয় স্লিপে সহজ ক্যাচ ছাড়লেন দলের সেরা ফিল্ডার সাব্বির রহমান। রঙিন পোশাকের ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ হাতছাড়া হয় তাসকিনের বলেই। একই হতাশায় শুরু তার টেস্ট ক্যারিয়ারও।

সেঞ্চুরিয়ান ল্যাথাম সুযোগ দিয়েছিলেন ৮৩ রানে। লং লেগ থেকে ছুটে বলের কাছে যেতে পারেননি সাকিব আল হাসান। বোলার? কে আবার, তাসকিন!

খানিক পরই মিরাজের বলে হেনরি নিকোলসের ব্যাটের কানা নেওয়া বল পড়ল বোলার আর তামিমের মাঝে। দলে জায়গা বাঁচানোর লড়াইয়ে থাকা এই ব্যাটসম্যান সুযোগ দিয়েছিলেন আরও দুটি। শেষ বিকেলে শুভাশীষের বলে স্লিপে দুরূহ ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি মিরাজ। পরে মিরাজের বলে সিলি পয়েন্টে বলে কেবল আঙুল ছোঁয়াতে পারলেন সাব্বির।

দিনের শেষের মত শুরুতেও ছিলেন সাব্বির। তবে সেটি হতাশা নয়, বরং প্রাপ্তির প্রকাশ হয়ে। লোয়ার অর্ডারদের আগলে রেখে করলেন দারুণ অর্ধশতক। ছয়শর কাছাকাছি গিয়ে ইনিংস ঘোষণা করল দল।

ড্রেসিং রুম থেকে ইনিংস শেষের ঘোষণা দিলেও মাঠে নামেননি মুশফিকুর রহিম। আগের দিন ব্যাটিংয়ের সময় চোট পাওয়া দুই আঙুলে তোলেননি কিপিং গ্লাভসের ভার। ঠেকার কাজ ভালোই চালিয়েছেন ইমরুল।

বোলিংয়ে বাংলাদেশের শুরু চমক দিয়ে। মিরাজের হাতে বল, নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে দলের প্রথম ইনিংসে স্পিন দিয়ে শুরু এই প্রথম!

মিরাজ খারাপ করেননি। দুই কিউই ওপেনার তবু সামলে নেন। প্রথম ব্রেক থ্রু দেন অবশ্য দলের সবচেয়ে ‘অভিজ্ঞ’ পেসার। অভিজ্ঞতা যার দুই টেস্টের। বল হাতে নিয়েই জিত রাভালকে ফেরান কামরুল ইসলাম রাব্বি। ভাঙে ৫৪ রানের উদ্বোধনী জুটি।

পরের তিনটি জুটিতেও অর্ধশতক ছাড়িয়েছে নিউ জিল্যান্ড। প্রতিটিতেই ছিলেন ল্যাথাম। যথারীতি উইলিয়ামসন খেলেছেন দৃষ্টিনন্দন কিছু শট। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তাসকিন তাকে ফিরিয়েছেন দারুণ এক ডেলিভারিতে। প্রথম দুই ওয়ানডের পর আরও একবার সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানকে শিকার করলেন তাসকিন।

দ্বিতীয় সেশনে ১২১ মিনিটে ১৩১ রান তোলে নিউ জিল্যান্ড। চোখের অস্ত্রোপচারের পর টেইলরের চোখ মনে হচ্ছিলো তীক্ষ্ণ হয়েছে আরও। শুরু করেছিলেন ঝড়ের গতিতে। কিন্তু ৪০ রানে ফিরেছেন রাব্বির নিরীহ শর্ট বলে পুল করে।

রান খরায় থাকা নিকোলস ‘হাফ চান্স’ দিয়ছেন তিনবার। ভুগেছেন অনেকটা সময়। কিন্তু পড়ে থেকেছেন উইকেটে। আরেক পাশে ল্যাথাম করেছেন যেটি তিনি ভালো পারেন। দারুণ টেকনিক ও টেম্পারামেন্ট দিয়ে তুলে নিয়েছেন ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি।

বাংলাদেশের অনভিজ্ঞ পেস আক্রমণ খারাপ করেনি। রাব্বি দুটি উইকেট নিয়েছেন। তিন স্পেলে ১৫ ওভার বোলিং করে অনেকটা সংশয় দূর করতে পেরেছেন তাসকিন। শুভাশীষ উইকেট না পেলেও খানিকটা রেখেছেন সামর্থ্যের প্রমাণ। মিরাজের বোলিং ফিগারও যা বলছে, বোলিং ছিল তার চেয়ে ঢের ভালো।

সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে হয়ত ফিগার আর স্কোরবোর্ডের চেহারাও থাকত আরেকটু ভালো। শেষ বিকেলে ভালো ছিল না আকাশের চেহারাও। বৃষ্টির শঙ্কা আছে চতুর্থ দিনে। ড্র হলেও সেটি কম প্রাপ্তি হবে না বাংলাদেশের জন্য।

তবে পাওয়ার সুযোগ ছিল, এখনও আছে আরও বেশি। যদি সুযোগগুলো কাজে লাগানো যেত, যদি সামনেও লাগানো যায়!


সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫২ ওভারে ৫৯৫/৮ ইনিংস ঘোষণা

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৭৭ ওভারে ২৯২/৩ (রাভাল ২৭, ল্যাথাম ১১৯*, উইলিয়ামসন ৫৩, টেলর ৪০, নিকোলস ৩৫*; মিরাজ ০/৮২, শুভাশীষ ০/৪৬, তাসকিন ১/৭৯, রাব্বি ২/৫৩, সাকিব ০/৩০)।