রেকর্ড জুটির গল্প

সম্পর্কটা বেশ পুরোনো মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের; তবে ঝালাই হয় নিত্যই। মাঠের বাইরে যতটা, তার চেয়ে বেশি ২২ গজে। সেই ঝালাইয়ের স্ফুলিঙ্গে আলোকিত হয় বাংলাদেশের ক্রিকেট, পুড়ে যায় প্রতিপক্ষ।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিওয়েলিংটন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2017, 01:17 PM
Updated : 13 Jan 2017, 06:10 PM

সনদের বয়সে মুশফিকের চেয়ে আড়াই মাসের বড় সাকিব। তবু সাকিবের কাছে মুশফিক ‘ভাই’। বিকেএসপিতে এক ক্লাস ওপরে ছিলেন মুশফিক। সাকিব সেই থেকে ভাই বলেই ডাকেন। এই বড় ভাইয়ের সঙ্গে যখন জুটি বাধেন ছোট ভাই, বন্ধনটা হয় দারুণ জমাট। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে খেলছেন একইসঙ্গে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সফলতম জুটি তারা। এই দুজনের হাত ধরেই রচনা হলো নতুন ইতিহাস।

তিন সংস্করণে ৮টি শতরানের জুটি মিলিয়ে দুজন একসঙ্গে তুলেছেন ৪ হাজার ৬০০ রান। যার ৩৫৯ রান এসেছে ওয়েলিংটন টেস্টের দ্বিতীয় দিনে। এক জুটিতেই তোলপাড় রেকর্ড বই।

বাংলাদেশের দিন শুরু হয়েছিল মুমিনুল হককে হারিয়ে। বিকেলে আউট হয়েছেন সাকিব-মুশফিক দুজনই। তবে মাঝের সময়টায় ছিল তাদেরই রাজত্ব। দিন শেষের সংবাদ সম্মেলন যেন রূপ নিয়েছিল দুজনের জুটির গল্পে। মুশফিক শোনালেন, উইকেটে যাওয়ার পর কিভাবে তাকে অভয় দিয়েছিলেন সাকিব।

“আমি ক্রিজে যাওয়ার পর সাকিব বলেছিল, ভাই উইকেট খুব ভালো। যদি নিবেদন দেখাতে পারেন, রান করতে পারবেন। আমরা চেষ্টা করেছি, ও ওর স্বাভাবিক ব্যাটিং করবে, আমি আমার স্বাভাবিক ব্যাটিং করবো। চেষ্টা করেছিলাম জুটি যেন হয়, কিন্তু এত বড় হবে কখনও হয়তো ভাবা হয়নি। আমরা বারবার বলছিলাম, এমনকি লাঞ্চ বিরতির সময় ড্রেসিংরুমেও বলেছিল, এমন সুযোগ সব সময় আসে না। এটাকে বড় করো।”

এমনিতে দুজনের ধরনে মিল নেই খুব একটা। তবে ২২ গজে ধরনটা গুরুত্বপূর্ন নয়, বেশি প্রয়োজন পরস্পরের পরিপূরক হওয়া। মুশফিক যেমন শোনালেন সাকিবের সঙ্গে জুটির রসায়ন।

“সাকিবের সাথে ব্যাট করতে আমি পছন্দ করি। যারা একটু আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে, তাদের সঙ্গে খেলতে পছন্দ করি। ওর সাথে তো অবশ্যই। সেই অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে আমরা এক সঙ্গে খেলছি। ওর সাথে আমার কয়েকটা বড় জুটি আছে। ও খুব বেশি কথা বলে না; ছোটোখাটো ব্যাপার বলে। এটা আমাকে খুব সাহায্য করে।”

স্টেডিয়ামের লাউড স্পিকারে একটু পর পর ঘোষণা আসছিল মাইফলকের। আর তাদের পেয়ে গিয়েছিল আরও বড় করার নেশা। সাকিব মেলে ধরলেন জুটিকে এগিয়ে নেওয়া আর হৃষ্টপুষ্ট করার আখ্যান।

“আসলে উইকেটে থাকার সময় একটু পরপর শুনছিলাম যে এই রেকর্ড ভাঙতেছে, ওই রেকর্ড হচ্ছে। শুনতেই ভালো লাগছিল। স্বাভাবিকভাবেই দুজনেই চেয়েছিলাম আরও একটু বড় হোক।”

একটু একটু করেই এগিয়ে চলা বড় কিছুর দিকে। আস্তে আস্তে যেটি আকার ধারণ করেছে প্রকাণ্ড। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টেস্ট জুটিতে গড়া হয়েছে রান উৎসবের মঞ্চ। জয়োৎসবের স্বপ্ন দেখতেও এখন ভয় লাগছে না!