সবাইকে ধৈর্য ধরতে বললেন তামিম

ধৈর্য চাই, ধৈর্য। ব্যাটসম্যানদের কাছে চাওয়া ধৈর্য ধরে লম্বা ইনিংস খেলার। বোলারদের কাছে আশা ভালো লাইন-লেংথে টানা বোলিং করে যাওয়ার। নিউ জিল্যান্ড আসার পর দলের ড্রেসিং রুমে বা টিম মিটিংয়ে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দ বুঝি ধৈর্য। সেটি এখন চলে এল ড্রেসিং রুমের বাইরেও। দেশের বাইরে ভালো ফল দেখতে সমর্থকদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ করলেন তামিম ইকবাল।

ক্রীড়া প্রতিবেদক মাউন্ট মঙ্গানুই থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2017, 12:27 PM
Updated : 7 Jan 2017, 03:39 PM

তামিম নিজেই অবশ্য খুব বেশি ধৈর্য ধরতে পারেনি ২২ গজে। ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৫ ইনিংসের প্রতিটিতেই ছুঁয়েছেন দু অঙ্ক, কিন্তু অর্ধশতক করতে পেরেছেন মাত্র একটিতে। নিজের ও দলের ব্যর্থতা অকপটেই স্বীকার করে নিলেন তামিম।

“সত্যি বলতে আমাদের কারও পারফরম্যান্সই আপ টু দি মার্ক নয়। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের। সবচেয়ে বাজে ব্যাপার, সবাই শুরু পেয়েও বড় করতে পারেনি। নিজের কথাই বললে, ৫ ইনিংসের প্রায় প্রতিটিই ভালো শুরু করে সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। সেদিক থেকে আমি ও আমরা অবশ্যই হতাশ।”

“সেদিক থেকে” যখন বলেছেন, বোঝাই যাচ্ছে, অন্য একটি দিকও আছে তামিমের ভাবনায়। হতাশার মাঝেও দেখছেন আশার আলো, নেতিবাচকতার স্রোতেও খুঁজে পাচ্ছেন ইতিবাচকতার ঢেউ।

“প্রায় সব ম্যাচেই আমরা সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছি। মনে হচ্ছিলো যে আমরা জিততেও পারি। সব কিছু নেতিবাচক ভাবে না দেখে আমরা এভাবেও দেখতে পারি যে, আগে এখানে যতবার এসেছি, আমরা সুযোগও সৃষ্টি করতে পারিনি। এবার সবার মধ্যে একটা বিশ্বাস জেগেছে যে আমরা জিতেও যেতে পারি। শেষ পর্যন্ত জিততে পারিনি, সেজন্য আমরা অবশ্যই হতাশ। তবে দেশের বাইরে এসে যে সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছি, আমার কাছে মনে হয় এটাও ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত।”

তামিমের মতে, জিততে শেখা একটি প্রক্রিয়া। দেশের ভেতরে যেমন সেটি আয়ত্ত হয়েছে, তেমনি দেশের বাইরেও চলছে সেটি শেখার পালা।

“এই দলই সবশেষ দুই বছর দেশের মাটিতে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে। এক সময় আমরা যখন জিততে পারতাম না, তখন বলা হতো যে আগে দেশের মাটিতে জেতা শুরু করা দরকার। তারপর বাইরে। আমরা দেশে জিততে শুরু করেছি। এরপর দেশের বাইরে এটিই প্রথম পুরো সিরিজ।”

“এখানে এসেও আমরা সুযোগ সৃষ্টি করছি। ফল দেখে হয়ত তেমন মনে হবে না কারণ ৫ ম্যাচ টানা হেরেছি। কিন্তু যারা খেলা দেখেছে, তারা জানে যে আমরা জিততে পারতাম। শেখার পথে এসবও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যদি সুযোগগুলো আমরা বেশি সময় ধরে রাখতে পারি, ম্যাচ জেতাও শুরু করব। সবকিছুর একটি সময় থাকে। আমার মনে হয় সবারই ধৈর্য ধরা উচিত।”

সমর্থকদের হতাশা আর মনোবেদনার কথা দল অনুধাবন করছে। ক্রিকেটাদের চেষ্টারও কোনো কমতি দেখছেন না তামিম।

“ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে নিবেদনের কোনো কমতি নেই। অধিনায়ক থেকে শুরু করে সব ক্রিকেটার, টিম ম্যানেজমেন্ট সবাই আমরা চেষ্টা করছি বাংলাদেশর জন্য জিততে। এই সফরের পর হয়ত সমর্থকদের অনেকেই আমাদের ওপর নাখোশ থাকবেন। কিন্তু আমার তরফ থেকে এটিই চাওয়া থাকবে যে ২০১০ সালের কথা চিন্তা করুন আর এই সফরের কথা ভাবুন। এবার আমরা অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছি।”

আধুনিক ক্রিকেটের বাস্তবতাটুকুও উল্লেখ করলেন তামিম। মনে করিয়ে দিলেন, দেশের বাইরে গিয়ে কোনো দলই এখন ততটা সুবিধে করতে পারে না।

“সমর্থকদের হতাশ হওয়াই স্বাভাবিক। তবে সবাইকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে বাইরের কন্ডিশনে। আমাদের দলেল ২২ জনের মধ্যে হয়ত ১০ জনই এবার প্রথম এল এই কন্ডিশনে। কন্ডিশনটা আসলেই বড় ব্যাপার। যে কোনো দলই বিদেশে গেলে কিন্তু ধুঁকতে থাকে। ইংল্যান্ড টেস্টের অন্যতম সেরা দল হয়েও ৪-০তে হারল ভারতে। পাকিস্তানেরও তাই। সব দলেরই একই অবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা কোন ধরণের ক্রিকেট খেলছি। আমরা সুযোগ সৃষ্টি করছি এখন। নিকট ভবিষ্যতে হয়ত ম্যাচও জিতব।”

নিকট ভবিষ্যতে জেতার আশা দেখিয়ে আবার বাস্তবতার দেয়াল টপকানোর কথা্ও বললেন তামিম। দেশের মাটিতে সাফল্যের পথে হাঁটার উদাহরণ থেকেই সময় চাইলেন দেশের বাইরের সাফল্যের জন্যও।

“রাতারাতি হবে না, সময় লাগবে। দেশের মাটিতে যে সাফল্য আমরা এখন পাচ্ছি, সেটির জন্য ১০ বছর অপেক্ষা করেছি। বাইরের কন্ডিশনেও ভালো করতে হলে নিয়মিত সফরে আসতে হবে এবং খেলতে হবে। হয়তবা আগামী ৬-৮-১০ ম্যাচেও ফল আমাদের পক্ষে আসতে না পারে। তবে আমরা যদি ছোট ছোট ভুলগুলি না করি এবং আস্তে আস্তে উন্নতি করতে পারি, তাহলে ভালো কিছু হতে পারি।”

“সবচেয়ে ভালো ব্যাপার যেটা মনে হয়, ক্রিকেটারদের মধ্যে কোথাও না কোথাও বিশ্বাসটা আছে যে বাইরেও আমরা জিততে পারি। আমাদের ফল হয়ত কথার সঙ্গে মিলছে না। তবে আমি বলতে পারি নিশ্চিত করে যে, দলের সবাই আমরা কখনও স্বপ্ন দেখা বন্ধ করিনি। এটাও মনে করি না যে এখানে আসছি হারার জন্য। চেষ্টা করছি। কখনও ফল পক্ষে আসে, কখনও আসে না।”

তামিমরা উইকেটে একটু ধৈর্য ধরলে অবশ্য জয় দেখার জন্য সমর্থকদের খুব বেশি ধৈর্য ধরতে হয় না!