‘একটু কি স্বস্তি পাচ্ছেন এখন?’ পাশ থেকে কণ্ঠ শুনে একটু চমকে উঠলেন সৌম্য। পরমুহূর্তেই মুখে হাসি, “নাহ, একটা ৩৯ রানের ইনিংসে কি আর স্বস্তি আসে! দলকে জেতাতে পারলে একটা কথা ছিল…।”
৩৯ রানের ইনিংস বড় কিছু নয় তো বটেই; বরং কোনো ব্যাটসম্যান থিতু হয়ে আউট হলে তাকে দাঁড়াতে হয় কাঠগড়ায়। জবাবদিহি করতে হয় ইনিংস বড় করতে না পারায়। কিন্তু সৌম্যর প্রেক্ষাপটই যে আলাদা! রানখরা এতটাই তীব্র ছিল যে ৩৯ রানের ইনিংসটা যেন স্বস্তির টুপটাপ বৃষ্টি। চরম দুঃসময়ে যারা তার পাশে থেকেছে, সেই টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য তো বটেই। সৌম্য যতোই বলুন না কেন, স্বস্তির ছোঁয়া কিছুটা তার মনেও না লেগে পারেই না।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির পরই ঘোষণা করা টেস্ট সিরিজের দলেও জায়গা পেয়েছেন সৌম্য। অনেকে ৩৯ রানের ইনিংসটির সঙ্গে সেটির যোগসূত্র খুঁজতে পারেন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন অবশ্য দাবি করলেন, টেস্ট দল ঠিক হয়ে গিয়েছিল দল নেলসনে থাকতেই। সৌম্য তখনই দলে ছিল। সেই দাবি সত্যি হলেও, সৌম্যর অন্তত রানটুকু পাওয়া নির্বাচকদের জন্যও স্বস্তির।
রান সংখ্যাই শুধু নয়, সবাইকে ভরসা জোগাচ্ছে সৌম্যর ব্যাটিংয়ের ধরণ। তার ড্রাইভ, ফ্লিক, গ্ল্যান্স, লফটেড শট আর ব্যাটিংয়ে কর্তৃত্ব, সব কিছু মিলিয়ে দেখা গেছে সেই সেরা সময়ের আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া।
“অনেক সময় বাইরে বসে থেকেই মনে হয় যে আজ ভালো কিছু হবে। এ দিনও উইকেট দেখে সে রকম কিছু মনে হচ্ছিলো। প্রথম বলটায় ড্রাইভ মাঝব্যাটে লাগার পর থেকেই খুব ভালো বোধ করছিলাম।”
সেই ভালো বোধের প্রতিফলনই ছিল তিনটি চার আর দুটি ছক্কায়। সাব্বির রহমানের সঙ্গে তার জুটির সময় রান তাড়ার পথেও ভালো ভাবে ছিল দল। শেষ পর্যন্ত সৌম্য পারেননি বড় কিছু করতে, দলও পেছনে পড়েছে বড় রান তাড়ায়। বাঁহাতি ওপেনারের আক্ষেপটাই তাই বেশি।
“স্লোয়ার শর্ট বল ছিল, ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে গেল। জোরে বল থাকলে ঠিকই চার-ছক্কা হয়ে যেত। আমি ও সাব্বির আর ৩-৪ ওভার থাকলে, অন্তত দুজনের একজন টিকে থাকলে হয়ত আমরা জিততাম। তখন ভালো লাগত। এখন আর এত খুশির কিছু নেই।”
“কোনো কিছুই ভাবি নাই এই ম্যাচে। মাথা ফাঁকা রেখে খেলতে নেমেছি। বল দেখে খেলেছি। ভাবনা তো অনেক হলো, কিছুই আর বাকি নাই। আর ভেবে লাভ নেই। যা হওয়ার হবে। মাঠে নেমে বল বুঝে খেলার চেষ্টা করব।”
হারানোর কিছু না থাকলে অনেক সময়ই বেরিয়ে আসে সেরাটা। সৌম্য আছেন সেটিরও শেষ পর্যায়ে। টিকে আছেন স্রেফ কয়েকটি ‘লাইফলাইন’ নিয়ে। অমিত প্রতিভা আর ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্যের কারণেই কেবল পাচ্ছেন সেই লাইফলাইন।
একটি লাইফলাইনে মিলেছে কিছু সময়ের অক্সিজেন। তবে প্রাণ ভরে দম নিতে চাই ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স। অপেক্ষা এখন তেমন কিছুর।