সৌম্য যদি একটু পিছিয়ে থাকতেন

সংবাদ সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে ড্রেসিং রুমে যাচ্ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। চোখে মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। শরীরটাকে যেন টেনে নিচ্ছিলেন কোনোরকমে। সংবাদ সম্মেলনে জুড়ে কণ্ঠও ছিল ভীষণ ম্রিয়মান। ড্রেসিং রুমে ঢোকার আগে আরেকবার দাঁড়ালেন, আবার ফিরে তাকালেন মাঠে। দৃষ্টি মাঠের ওই প্রান্তে, ম্যাচে যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন সৌম্য সরকার; কিংবা আসলে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন না!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি নেপিয়ার থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2017, 01:04 PM
Updated : 3 Jan 2017, 03:36 PM

অনেকটা স্বগতোক্তির মতোই বললেন, “ইস, যদি একটু পিছিয়ে থাকত সৌম্য… কেন যে সামনে আসতে গেল!” বাংলাদেশ অধিনায়কের বিশ্বাস, সৌম্য যদি তখন পজিশনে থাকতেন, যদি এই সময় আউট হতেন কেন উইলিয়ামসন, ম্যাচ অন্যরকমও হতে পারত!

ম্যাচের সেটি ১৪তম ওভার। মাশরাফি বোলিংয়ে এনেছিলেন মোসাদ্দেক হোসেনকে। কিন্তু সাকিব আল হাসান বললেন, ব্রেক থ্রু দরকার। তামিম ইকবালও জানালেন একই তাগিদ। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের সঙ্গে উইলিয়ামসনের জুটি জমে উঠতে শুরু করেছে। খানিক ভেবে মাশরাফিও সায় দিলেন। মোসাদ্দেকের হাত থেকে বল নিয়ে দিলেন সাকিবকে।

কাজে লেগেও যাচ্ছিলো। দ্বিতীয় বলেই উড়িয়ে মারলেন উইলিয়ামসন। কিন্তু ডিপ মিড উইকেটে ফিল্ডার সৌম্য সীমানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ১০ গজ মতো ভেতরে! বল গেল গুলির বেগে, সৌম্যর পেছনে ফেরার সুযোগই নেই। মাথার ওপর দিয়ে মাঠে এক বাউন্সে সীমানার বাইরে। অথচ যেখানে থাকার কথা, সৌম্য সেই সীমানায় থাকলে সেটি হতে পারত সহজ ক্যাচ।

অনেক সময় বোলারই ফিল্ডাকে একটু সামনে রেখে দেন, যাতে ব্যাটসম্যানের ঠিকমত টাইমিং না হলে ক্যাচ ফিল্ডারের হাতেই জমে। তবে মাশরাফি জানালেন, এ দিন বোলারের কোনো নির্দেশনা ছিল না।

“ওই দিকে মাঠ একটু বড় বলে হয়ত সৌম্য ৫-১০ গজ ভেতরে ওপরে ছিল। কোনো নির্দেশনা ছিল না। কোনো ভাবে, কানো কারণে ও ওপরে ছিল। হয়ত চিন্তা করেছে যে পেছন গিয়ে সামলে নিতে পারবে। কিন্তু পারেনি।”

এসব ক্ষেত্রে বেশির ভাগই বলের ফ্লাইট বুঝে নিজেকে সঠিক পজিশনে নেওয়া যায়। তবে এই শটে জোর এত বেশি ছিল যে সৌম্য ঠিক দ্রুত পেছনে যেতে পারেনি।

সৌম্যর যে সুযোগ ছিল না, সেটি ছিল ইমরুল কায়েসের। মিড উইকেটের সুযোগ মিসের পর এবার সৌম্য বোলার। উইলিয়ামসন আবারও উড়িয়ে মারলেন। এবার লং অফে দাঁড়ানো ইমরুল ছিলেন খানিকটা ভেতরে। বল উড়ে আসতে দেখে গড়বড় করে ফেলেন ফ্লাইট বুঝতে। অনেকটা সময় বল ছিল বাতাসে, ঠিক পজিশনে যাওয়ার সুযোগ ছিল। পারেননি ইমরুল।

দুটি সুযোগের জন্যই ম্যাচ শেষে আক্ষেপ ঝরল মাশরাফির কণ্ঠে। বিশেষ করে সৌম্যর সামনে থাকার ঘটনায়।

“ইমরুল বুঝতে ভুল করেছে বলতে পারেন। ওরা আসলে সীমানায় আমাদের সেরা ফিল্ডারই ছিল। হয়ত কাভার করতে পারবে ভেবেই একটু ওপরে ছিল। দুই রান ঠেকানোর ভাবনাও থাকতে পারে। দুটি সুযোগের একটি কাজ লাগাতে পারলে হয়ত খেলাটা আমাদের দিকে আসত। বিশেষ করে সাকিবের বলে সৌম্যর সুযোগটা। ওই সময়ে ওদের ৮ রানের বেশি (ওভারপ্রতি) লাগত।”

সৌম্যর ওই ভুলের সময় ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন উইলয়ামসন। ওই বলে আউট হলে নিউ জিল্যান্ডের লাগত ৪০ বলে ৬১। রান রেটের চাপ তখন বাড়ত হু হু করে।

উইলিয়ামসনের মত একজনকে সুযোগ দিলে সেটার মূল্য দিতে হবে! শেষ পর্যন্ত কিউইরা জিতেছে দুই ওভার বাকি থাকতেই, অধিনায়ক অপরাজিত ছিলেন ৭৩ রানে। আর বাংলাদেশ যথারীতি আক্ষেপ করছে সুযোগ হাতছাড়া করার; আরও একবার!