হার দিয়েই শুরু বাংলাদেশের বছর

উচ্ছাসের তেমন কোনো বহি:প্রকাশ নেই। নেই চোখে পড়ার মত উদযাপন। স্রেফ হাতে হাত মেলালেন দুই ব্যাটসম্যান, কাঁধে একটু টোকা; ব্যস! দুলতে থাকা ম্যাচ নিউ জিল্যান্ড জিতে গেল এই জুটিতেই। উদযাপন দেখে সেটা কে বলবে! কেন উইলিয়ামসন ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের শরীরী ভাষা বলল, এমনটিই তো হওয়ার কথা!

নেপিয়ার থেকে আরিফুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2017, 07:54 AM
Updated : 3 Jan 2017, 02:40 PM

দুজনের ব্যাটিংই হয়ে থাকল পেশাদারি রান তাড়ার প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের লড়াই গুঁড়িয়ে গেল দুজনের ব্যাটে। উইলিয়ামসন ব্যাট করলেন অধিনায়কের মতোই, ডি গ্র্যান্ডহোমের ব্যাটে মিটল পরিস্থিতির দাবি। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিউ জিল্যান্ড জিতল ৬ উইকেটে।

ভেন্যু বদলাল, ঘুরল বছর। কিন্তু বদলাল না নিউ জিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের ভাগ্য। ওয়ানডে সিরিজে সব ম্যাচ হারার পর টি-টোয়েন্টির শুরুও হার দিয়ে।

নেপিয়ারে টস জয়ী বাংলাদেশকে বিপর্যয় থেকে টেনে নিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। প্রায় একা লড়াই করে এনে দিয়েছিলেন ১৪১ রানের পুঁজি। তাতে লড়াই হলো, জেতা হলো না। নিউ জিল্যান্ড জিতেছে দুই ওভার বাকি থাকতেই।

অথচ বাংলাদেশের বোলিয়ের শুরুটায় ছিল অন্য ইঙ্গিত। কিউইদের ওয়ানডে সিরিজ জয়ের দুই নায়ক নিল ব্রুম ও কলিন মানরো ফিরেছিলেন দ্রুতই। সুবিধে করতে পারেননি দলে ফেরা কোরি অ্যান্ডারসন বা অভিষিক্ত টম ব্রুস। একাদশ ওভারে রান ৪ উইকেটে ৬২, ম্যাচ তখন দোদুল্যমান।

দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সেখান থেকেই ম্যাচ নিজেদের করে নিলেন উইলিয়ামসন। কিউই অধিনায়ককে রান রেটের চাপ বুঝতে দেননি ডি গ্র্যান্ডহোম। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৪৭ বলে ৮১ রানের।

ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ৫৫ বলে ৭৩ রানে অপরাজিত উইলিয়ামসন। ৩টি করে চার ছক্কায় ২২ বলে অপরাজিত ৪১ ডি গ্র্যান্ডহোম।

এ আগে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটেও ছিল তিনটি করে চার ও ছক্কা। ওয়ানডে সিরিজটা কেটেছিল দুঃস্বপ্নের মতো। ৩ ম্যাচে করেছিলেন ৪ রান। টি-টোয়েন্টির শুরুতেই অর্ধশতক। তবে সঙ্গী পাননি তেমন কাউকে। বড় হয়নি তাই দলের রান।

বাংলাদেশের শুরুটাই ছিল অস্বস্তির। অভিষিক্ত বেন হুইলার প্রথম ওভারেই কাঁপিয়ে দেন তামিম ইকবালকে। ছটফটে কিছু সময় কাটিয়ে এই বাঁহাতি পেসারের শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম (১৩ বলে ১১)।

ম্যাট হেনরির বলে জঘন্য এক শটে এর আগেই ফিরেছেন ইমরুল কায়েস। হেনরিকেই ছক্কা মেরেছিলেন সাব্বির রহমান। খানিক পর অভিষেকের উপহার তুলে দিলেন লকি ফার্গুসনকে।

অভিষিক্ত ফার্গুসনের প্রথম বলটিই ফুলটস। নিরীহ সেই বল সাব্বির তুলে দিলেন বৃত্তের ভেতর মিড উইকেট ফিল্ডারের হাতে! পরের বলেই ১৪৮ কিমি গতির সুইং ও বাউন্সে গালিতে ক্যাচ দিলেন সৌম্য সরকার। দুঃস্বপ্নের আগের বছরের পর সৌম্যর নতুন বছর শুরু হলো গোল্ডেন ডাকে।

ফার্গুসনের নাম উঠে গেছে তখন রেকর্ডে পাতায়। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই বলেই উইকেট টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আগে দেখেছিল একবারই। সেটি সেই প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে, ২০০৫ সালে নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার মাইকেল ক্যাসপ্রোইচ।

বাংলাদেশ তখন কাঁপছে ৩০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে। উদ্ধার করতে নামলেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৭ রানের জুটির পর সাকিব আল হাসান ফিরলেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী মোসাদ্দেক হোসেন। এই জুটিতেই একটু গতি পেল দলের ইনিংস।

ফার্গুসনকে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে দারুণ এক ছয় মেরেছিলেন মোসাদ্দেক। বড় কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়েও তার ইনিংস শেষ হয় ২০ রানে। বাকিটা বলতে গেলে মাহমুদউল্লাহর একার পথচলা। ৪৭ বলে ৫২ রান করে শেষ ওভারে ফিরেছেন ফার্গুসনের স্লোয়ার ইয়র্কারে।

গুমোট ড্রেসিং রুমে ততক্ষণে মিলেছে কিছুটা আলোর রেখা। শেষ পর্যন্ত আর টিকে থাকল না তা। বরং রোশনাই উইলিয়ামসনের ব্যাটে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪১/৮ (তামিম ১১, ইমরুল ০, সাব্বির ১৬, সাকিব ১৪, সৌম্য ০, মাহমুদউল্লাহ ৫৩, মোসাদ্দেক ২০, মাশরাফি ১, নুরুল ৭*, রুবেল ২*; হুইলার ২/২২, হেনরি ১/৪৪, ফার্গুসন ৩/৩২, ডি গ্র্যান্ডহোম ১/২৩ স্যান্টনার ১/২০)।

নিউ জিল্যান্ড: ১৮ ওভারে ১৪৩/৪ (ব্রুম ৬, উইলিয়ামসন ৭৩*, মানরো ০, অ্যন্ডারসন ১৩, ব্রুস ৭, ডি গ্র্যান্ডহোম ৪১*; সাকিব ১/৩০, মাশরাফি ০/২২, রুবেল ১/৪৩, মুস্তাফিজ ১/২১, মোসাদ্দেক ০/৯, সৌম্য ০/১৮ )।

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৬ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: কেন উইলিয়ামসন