চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি-বিশ্বকাপ ভাবনাতেই তানবীর!

ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় জুড়ে ছিলেন দৃষ্টির আড়ালে। ঘরোয়া ক্রিকেটে মাঝারী মানের ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পারফর্মও করতেন সেভাবেই। তবে পরিশ্রম করে, অনেক খেটে গত দুই মৌসুমে অনেকটা ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে। হুট করে জাতীয় দলের কোচের নজরে পড়লেন। সুযোগ পেলেন জাতীয় দলে। জোগালেন আলোচনার খোরাক। গত কদিনে মনে হচ্ছে, দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত ক্রিকেটার এখন তানবীর হায়দার।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিনেপিয়ার থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2017, 12:24 PM
Updated : 1 Jan 2017, 02:37 PM

তবে যেভাবে আলোচনায় এসেছেন, সেটা নিশ্চয়ই কখনোই চাননি তানবীর। তাকে নিয়ে আলোচনার বেশিরভাগই যে সমালোচনা! নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ দুটি ওয়ানডে খেলে খুব বেশি ভালো করতে পারেননি। সংশয়, প্রশ্ন আর তাচ্ছিল্যের তীরে ক্রমাগত বিদ্ধ করা হচ্ছে এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডারকে। যদিও সিরিজ হারের পেছনে দায় সিনিয়র ক্রিকেটারদেরই, কিন্তু নানা জায়গায় বলির পাঠা বানানো হচ্ছে নবীন তানবীরকে।

থেকে থেকে ভেসে আসা আলোচনা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলোধুনো বা ট্রল করা, সবই চোখে পড়েছে ক্রিকেটারদের। তানবীরের সতীর্থরা এসবে যারপরনাই আহত। বিশেষ করে সিনিয়র ক্রিকেটাররাই এসবকে দেখছেন তানবীরের মত নতুন একজন ক্রিকেটারের প্রতি ভীষণ অন্যায় হিসেবে।

তবে সতীর্থর পাশে দাঁড়ানো বা সহানুভূতিই তো সব নয়। তার পক্ষে ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যাও আছে। তানবীরকে দলে নেওয়ায় বড় ভূমিকা চন্দিকা হাথুরুসিংহের। কোচই শুধু নন, জাতীয় দলের অন্যতম নির্বাচকও তিনি। নেপিয়ারে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ব্যাখ্যা করলেন তানবীরকে দলে আনার পেছনে কারণ। শোনালেন চমকপ্রদ পরিকল্পনার কথা।

“আমরা দেখতে চেয়েছি, এই লেগ স্পিনারটা কেমন করছে। সে অনুশীলনে ভালো বোলিং করেছে। সিডনিতে করেছে, এখানেও নেটে ভালো করেছে। সামনে তাকিয়ে আরও বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের কথা ভেবে আমরা একজন লেগ স্পিনারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি।”

এই বছর ও ২০১৯ সালে, দুটি টুর্নামেন্টই হবে ইংল্যান্ডে। আর সেখানে লেগ স্পিনাররা ভালো করে আসছে বরাবরই। হাথুরুসিংহে তাই একজন লেগ স্পিনার পেতে চাইছেন মরিয়াভাবে। বিশেষ করে আসছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি ঘোষণার পর লেগ স্পিনার অনুসন্ধান জোড়ালো হয়েছে আরও। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচের ভেন্যু ওভাল। যেখানে উইকেট অন্য ইংলিশ উইকেটগুলোর তুলনায় একটু শুষ্ক থাকে, স্পিন ধরে। তো কোচের সেই মরিয়া চেষ্টারই উত্তর আপাতত তানবীর।

এর আগেও আরেকজন লেগ স্পিনারকে নিয়ে অনেক চেষ্টা করেছেন হাথুরুসিংহে। জুবায়ের হোসেনকে বারবার দলে রাখার জন্য কোচের সমালোচনাও হয়েছে তীব্র। পরে এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিয়ে কোচ নিজেই প্রকাশ্যে জানান জুবায়েরের প্রতি হতাশার কথা। এখন হাথুরুসিংহের আশা তানবীরকে নিয়ে।

“নির্বাচকরা তাকে দলে নিয়েছে একজন লেগ স্পিনার অলরাউন্ডার হিসেবে, লেগ স্পিনের পাশাপাশি কিছু রান করতে পারে। আড়াই বছর আগে আমার দায়িত্বের শুরু থেকেই একজন লেগ স্পিনার খুঁজে আসছি। আমরা যার মাঝে সম্ভাবনা দেখেছিলাম (জুবায়ের), দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু কারণে সে ভালো করেনি। তানবীরকে আমরা ভেবেছি তার পরের সেরা। সেই কারণেই সে এখানে। আমরা ওকে দেখে নিতে চাই।”

দুটি ম্যাচে দেখা হয়েছে তানবীরকে। প্রথম ম্যাচে ৮ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য, পরের ম্যাচে ২ ওভারে রান ২০। ব্যাট হাতেও কিছু করতে পারেননি। তবে স্রেফ দুই-এক ম্যাচের দেখাকে যথেষ্ট মনে করছেন না হাথুরুসিংহে।

“কেউ এসেই দুই ম্যাচে ভালো করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলবে, এটা তো সম্ভব না! শেন ওয়ার্ন সর্বকালের সেরা স্পিনার। প্রথম দুই ম্যাচে দেখুন, কিছুই করেনি! তানবীর প্রথম ম্যাচে খারাপ করেনি। দ্বিতীয় ম্যাচে প্রত্যাশা মতো ভালো করেনি, তবে মনে রাখতে হবে আমাদের কোনো স্পিনারই সেদিন ভালো করেনি”

“ভালো করেনি বলে আমরা অবশ্যই হতাশ। তবে আমি কখনোই দুই-এক ম্যাচ দেখে কোনো ক্রিকেটারকে বিচার করি না। ওর মধ্যে কিছু দেখেই আমরা ওকে দলে নিয়েছি।”

কিন্তু এই ভরসা, এত বড় আশা মেটানোর সামর্থ্য কি তানবীরের আছে? এই ধরনের প্রশ্নে কোচের উত্তর প্রস্তুতই থাকে, “না খেলালে সামর্থ্য বোঝা যাবে কী করে!”