এই ম্যাচেও বাংলাদেশের এমন হার!

আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল সকাল থেকেই। মাঠের ক্রিকেট শুরুর পর অবশ্য দেখা গেল ঝলমলে রোদের খেলাও। বিকেলের দিকে আবার আকাশ ছেয়ে গেল ঘন কালো মেঘে। তবে নেলসনের আকাশের চেয়েও বেশি আঁধার তখন বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে। ওভার তখনও বেশ বাকি, কিন্তু খুব কাছে বাংলাদেশের হার!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিনেলসন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2016, 02:32 AM
Updated : 29 Dec 2016, 11:51 AM

হারটিও এমন এক ম্যাচে, যেটি মেনে নেওয়া কঠিন। ক্রাইস্টচার্চের রান উৎসব পেছনে ফেলে বৃহস্পতিবার স্যাক্সটন ওভালে দারুণ বোলিং করেছিল বাংলাদেশের বোলাররা। দুর্দান্ত ছিল ফিল্ডিং ও শরীরী ভাষা। বাকি ছিল কেবল বিচক্ষণ আর দায়িত্বশীল ব্যাটিং। হলো না সেটিই।

নিল ব্রুমের অসাধারণ এক অপরাজিত সেঞ্চুরির পরও লক্ষ্য ছিল ২৫২। রান তাড়ার দারুণ রেকর্ডের এই মাঠে যা ছিল খুবই সম্ভব। বাংলাদেশ যেতে পারেনি ধারে কাছেও। গুটিয়ে গেছে ১৮৪ রানে। ৬৭ রানের হারে নিশ্চিত হয়েছে সিরিজ হারও। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের হারানোর সুবর্ণ সুযোগটাও হলো হাতছাড়া।

অথচ রান তাড়ায় কী দারুণভাবেই না এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। ধীরস্থির সূচনার পর ফিরে যান তামিম ইকবাল। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমান গড়েন স্বপ্ন পূরণের ভিত।

কিন্তু দৃষ্টিকটু রান আউটে ভাঙে এই জুটি। সেটির ধাক্কায় হতভম্ব হয়েই কিনা, ক্রমেই বাংলাদেশের ইনিংস রূপ নিল ভূতুড়ে চেহারায়।

উইকেটের খুব কাছে বল ফেলেই দ্রুত রান নেওয়ার চেষ্টায় ভুল বোঝাবুঝি। সাব্বির ও ইমরুল এক পর্যায়ে ছুটলেন এক প্রান্তেই। নিজে রান আউট হয়েছেন ভেবে ফিরে যাচ্ছিলেন ইমরুল। কিন্তু আম্পায়াররা ফেরালেন তাকে। টিভি রিপ্লে দেখাল, কাছে থেকেও আগে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি সাব্বির (৩৮)। ভাঙল ৭৫ রানের জুটি।

দারুণ খেলতে থাকা সাব্বিরের বিদায়ের পর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল দলের ইনিংসও। আশা হয়ে টিকে ছিলেন ইমরুল। রান আউট হতে গিয়ে বেঁচে যাওয়ার পর জীবন পান সহজ ক্যাচ দিয়েও। ফিরতি ক্যাচ, স্টাম্পিং হতে হতে বেঁচেছেন কয়েক দফায়। কিন্তু অর্ধশতকের পর বাজে এক শটে ফিরে সুযোগ হারিয়েছেন।

১ উইকেটে ১০৫ থেকে ১০ ওভারের হতাশার এক চক্করে বাংলাদেশ হয়ে গেল ৭ উইকেটে ১৪১! ম্যাচ শেষ ওখানেই! তার পর শুধু ব্যবধান কমানোর পালা। তার পরও এই ম্যাচের বাস্তবতায় ব্যবধান থেকে গেছে বেশ বড়!

অথচ ম্যাচের প্রথম ভাগে ছিল উল্টো চিত্র। শুধু অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্ব নয়, মাশরাফি এ দিন দলকে উজ্জীবিত করেছেন ক্ষুরধার বোলিংয়েও। দুর্দান্ত ছিলেন তাসকিনও। উইকেটে স্পিনারদের জন্য কিছু না থাকলেও সাকিব ঠিকই মেলে ধরেছেন অভিজ্ঞতার প্রমাণ। মাঠে বাংলাদেশের শরীরী ভাষাও এদিন ছিল দারুণ আগ্রাসী ও ইতিবাচক। নিউ জিল্যান্ডকে টেনেছেন একা ব্রুম।  

সাড়ে ৬ বছর পর এই সিরিজ দিয়েই দলে ফিরেছেন এই ব্যাটসম্যান। আগের ম্যাচে থিতু হয়েও আউট হয়ে গিয়েছিলেন। এদিন তার ব্যাটে যেন ছিল নির্বাচকদের আস্থার প্রতিফলন। এক প্রান্ত আগলে, রানের চাকা সচল রেখে এগিয়ে নিয়েছেন দলকে। নিজে করেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি।

কাঙ্ক্ষিত টস জয়ের পর দলকে প্রথম উইকেট এনে দেয় মাশরাফি। বিপজ্জনক মার্টিন গাপটিলের ডানা ছেটে দিলেন উড়াল দেওয়ার আগেই। প্রথম ওভারেই টানা দুই বলে অস্বস্তিতে ফেলার পর এলবিডব্লিউ পরের বলেই (০)।

আরেকপাশে অভিষিক্ত শুভাশীষ রায়ও খারাপ করেননি। তবে প্রথম ওভার থেকেই তাসকিন আহমেদ ছিলেন দুর্দান্ত। প্রথম ম্যাচের মত এদিনও সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত উইকেটটি এসেছে তার হাত ধরে। কেন উইলিয়ামসনকে নড়ার সুযোগই দিচ্ছিলেন না তরুণ ফাস্ট বোলার। তাসকিনের টানা ১০ বলে রান না পেয়ে হাঁসফাঁস করে আউট হয়েছেন কিউই অধিনায়ক।

আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান টম ল্যাথাম ফিরেছেন সাকিবকে সুইপ করতে গিয়ে। ১৪তম ওভারে নিউ জিল্যান্ড তখন ৩ উইকেটে ৪৭। ব্রুমের বিপর্যয়কে ‘ঝাড়ু’ দেওয়ার কাজ শুরু এরপর থেকেই।

চতুর্থ উইকেটে জিমি নিশামের সঙ্গে জুটি ৫১ রানের। জমে উঠতে থাকা নিশামকে প্রথম ওভারেই ফিরিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। স্টাম্পিংয়ে প্রথম ডিসমিসালের স্বাদ পেয়েছেন নুরুল হাসান।

বোলিং পরিবর্তনে উইকেট এনে দেওয়ার পর মাশরাফি আরেকটি উইকেট এনেছেন নিজের হাতেই। দারুণ এক ডেলিভারিতে ফিরিয়েছেন আগের ম্যাচে বিধ্বংসী কলিন মানরোর উইকেট। অফ-মিডলে পিচ করে সিমে পড়ে একটু ভেতরে ঢুকে বল উড়িয়েছে বাঁহাতি মানরোর বেলস।

ইনিংসের তখন পেরিয়েছে অর্ধেক, নিউ জিল্যান্ড হারিয়েছে অর্ধেক উইকেট। ৫ উইকেটে ১০৭। এরপরই স্বাগতিকরা পেয়েছে তাদের সেরা জুটি।

ষষ্ঠ উইকেটে লুক রনকির সঙ্গে ব্রুমের জুটি ৬৪ রানের। দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা তাসকিন ফিরিয়েছেন রনকিকে (৩৫)।

শেষ দিকে লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে রান বাড়ান ব্রুম। তাকে ৯৯ রানে রেখে দল হারিয়েছিল নবম উইকেট। কিন্তু শেষ উইকেটে শুধু ব্রুমের সেঞ্চুরিই হয়নি, ট্রেন্ট বোল্ট করেছেন মহামূল্য কিছু রান। ১০৭ বলে ১০৯ রানে অপরাজিত ব্রুম। শেষ জুটিতে এসেছে ২৩ রান।

শেষ দিকে বাংলাদেশের হয়েও রান করেছেন মাশরাফি-নুরুলরা। তবে সেটি শুধু আক্ষেপই বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কেউ যে হতে পারেননি ব্রুম!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 
 
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৫১ (গাপটিল ০, ল্যাথাম ২২, উইলিয়ামসন ১৪, ব্রুম ১০৯*, নিশাম ২৮, মানরো ৩, রনকি ৩৫, স্যান্টনার ৯, সাউদি ২, ফার্গুসন ৪, বোল্ট ১২ ; মাশরাফি ৩/৪৯, শুভাশীষ ১/৪৫, তাসকিন ২/৪৫, সাকিব ২/৪৫, তানবীর ০/৪৭, মোসাদ্দেক ১/১২)।
 
বাংলাদেশ: ৪২.৪ ওভরে ১৮৪ (তামিম ১৬, ইমরুল ৫৯, সাব্বির ৩৮, মাহমুদউল্লাহ ১, সাকিব ৭, মোসাদ্দেক ৩, তানবীর ২, নুরুল ২৪, মাশরাফি ১৭, তাসকিন ০, শুভাশীষ ১*; বোল্ট ২/২৬, সাউদি ২/৩৩, মানরো ০/১২, ফার্গুসন ১/৫৩, স্যান্টনার ১/২০, নিশাম ০/১৩, উইলিয়ামসন ৩/২২)।
 
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৬৭ রানে জয়ী
 
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ জিতে নেওয়া নিউ জিল্যান্ড ২-০তে এগিয়ে
 
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নিল ব্রুম