মুস্তাফিজ খেলতে চান, তবে…

গ্যালারির প্রায় পুরোটাই সবুজের গালিচা। মাঠের চারপাশটাও ঘেরা গাছগাছালিতে। ক্রাইস্টচার্চের সবচেয়ে বড় খোলা জায়গা হ্যাগলি পার্ক, সেটিরই এক পাশে এই হ্যাগলি ওভাল ক্রিকেট মাঠ। নির্মল প্রকৃতিও যেন চোখ ধাঁধিয়ে দেয় সৌন্দর্য্যের তীব্রতায়। সবুজের এই সমারোহে ইট-কাঠের স্থাপনা বলতে কেবল ড্রেসিং রুম আর তার নিচে ছোট্ট একটু গ্যালারি। এটির পেছনেই নেট অনুশীলনের জায়গা। যেখানে বোলিং করছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। শ্যেনদৃষ্টিতে তাকিয়ে কোর্টনি ওয়ালশ।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিক্রাইস্টচার্চ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2016, 08:38 AM
Updated : 25 Dec 2016, 09:21 AM

বাংলাদেশ দল ক্রাইস্টচার্চ এসেছে আগের দিন। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের ভেন্যু হ্যাগলি ওভালে প্রথম অনুশীলন ছিল শনিবার। প্রথম ওয়ানডের স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের পর নেটে ঘাম ঝরিয়েছেন বাংলাদেশের বিশাল বহরের বাকিরাও। তবে আগ্রহের কেন্দ্রে ওই একজন, মুস্তাফিজ।

বোলিং কোচের পাশাপাশি ফিজিও-ট্রেনার তাকিয়ে তার বোলিংয়ে। নিজের কাজের ফাঁকে কোচ-অধিনায়কও তার দিকে রাখছেন চোখ। সবার দৃষ্টি খুঁজছে একটি প্রশ্নের উত্তর, প্রথম ওয়ানডে কি খেলতে পারবেন মুস্তাফিজ?

স্বয়ং মুস্তাফিজের কাছ থেকেই শোনা যাক উত্তর! নেটে বোলিং সেরে আসার পর প্রশ্নটি শুনেই হাসলেন রহস্যময় ভঙ্গিতে। উত্তর দেওয়ার কোনো আগ্রহ দেখা গেল না। বরং পরিচিত সংবাদকর্মীদের সঙ্গে শুরু করলেন রসিকতা। একজন তার বাঁ কাঁধে হাত রাখতেই ব্যথা পাওয়ার মত মুখভঙ্গি করলেন নাটকীয়ভাবে। বেচারার অপ্রস্তুত চেহারা দেখে পর মুহূর্তেই আকর্ণ বিস্তৃত হাসি, “ভয় পেয়েছেন? হাত রাখলে সমস্যা নাই, ঘুসি না দিলেই হলো!”

মুস্তাফিজের অস্ত্রোপচার হওয়া বাম কাঁধে ঘুষি মেরে জাতীয় শত্রু এখন নিশ্চয়ই কেউ হতে চাইবে না! তবে তার কাঁধের অবস্থা নিয়ে কৌতুহল প্রায় সবারই আছে। মুস্তাফিজ নিজেই দায়িত্ব নিলেন কৌতুহল কিছুটা মেটানোর।

“অনেক দিন পরে বোলিং করছি, একটু তো অস্বস্তি থাকবেই। এমনিতে সব ভালো যাচ্ছে। অল্প ব্যথা আছে, তবে কাঁধে না, শরীরের পাশে। ফিজিও বলছে ওটা থাকবেই। আরও বেশ কিছু দিন থেকে আস্তে আস্তে যাবে। কোচ-অধিনায়ক, সবাই যদি চায়, তাহলে খেলব প্রথম ম্যাচে।”

এটুকু শুনে আশাবাদী হওয়াই যায়। নিজেই জানালেন, নতুন বলে এখনও না করলেও পুরোনো বলে কাটার অনুশীলনও করছেন। পাশাপাশি ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি নিয়েও কাজ করছেন টুকটাক।

দীর্ঘ পুনবার্সন প্রক্রিয়ার পর প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে বৃহস্পতিবার ফিরেছেন মাঠে। দুই স্পেলে বোলিং করেছেন ৭ ওভার। সে দিন সব কিছু পরিকল্পনা মতো হওয়ার পর শনিবারের অনুশীলন। সব দেখে আশার কথা শোনালেন বোলিং কোচ ওয়ালশও।

“এখনও পর্যন্ত সব ঠিক। কিছু জড়তা, হালকা ব্যথা। এতদিন পরে ফিরলে এসব থাকবেই। সে ঠিক পথেই আছে। খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে ওর অগ্রগতি।”

“খেলবে কিনা (প্রথম ম্যাচে), এখনও আমরা জানি না। আজকে ও কালকে অবস্থা দেখে আমরা নিদ্ধান্ত নেব। তবে আজকে নেট সেশনে বড় কোনো অস্বস্তি ছিল না। আমরা আশাবাদী।”

তবে স্বস্তির পাশাপাশি দুর্ভাবনাও আছে। ফিল্ডিংয়ে এখনও আছে দুশ্চিন্তার অবকাশ। থ্রোয়িং করতে পারছেন না পুরোপুরি, ডাইভ দেওয়া বারণ। মাঠে নেমে সব সময় সাবধানে থাকাও কঠিন; ফিল্ডিংয়ে সহজাত প্রবণতা থেকেই ডাইভ দিলে কাঁধ আবার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সব মিলিয়ে শঙ্কার চোরকাঁটা টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনাকে বিদ্ধ করছে যথেষ্টই। সিরিজের প্রথম ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ সব সময়ই। মুস্তাফিজের মত একজনকে খেলানোর লোভ সামলানো কঠিন। তবে ভবিষ্যত ভাবনায় বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নেওয়াটাও সমীচীন নয় কোনোভাবেই।

মুস্তাফিজকে নিয়ে সিদ্ধান্ত আটকে এখন এই দুই ভাবনার টানাপোড়েনে। ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনে হয়ত আরেকটু পরিষ্কার হবে চিত্র। বোঝা যাবে, বক্সিং ডের উৎসবেই সবুজ পোশাকে হ্যাগলি ওভালের সবুজ প্রান্তর চিড়ে ছুটবেন মুস্তাফিজ, নাকি আরেকটু দীর্ঘায়িত হবে অপেক্ষা।