দ্বিতীয় সুযোগও হারাল খুলনা, ফাইনালে রাজশাহী

ফাইনালে যাওয়ার দ্বিতীয় সুযোগটাও কাজে লাগাতে পারল না খুলনা টাইটানস। মাহমুদউল্লাহর দলের ব্যাটিং ব্যর্থতায় ধরা ছোঁয়ার মধ্যে লক্ষ্য পাওয়া রাজশাহী কিংস জিতেছে সহজেই।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2016, 01:57 PM
Updated : 7 Dec 2016, 05:25 PM

ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে দুটি ‘নক আউট’ ম্যাচই জিতল ড্যারেন স্যামির দল। সাব্বির রহমানের ব্যাটে এবার ৭ উইকেটে জিতেছে রাজশাহী।

আগামী শুক্রবার বিপিএলের চতুর্থ আসরের ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে খেলবে রাজশাহী। চলতি আসরে আগের দুই ম্যাচেই সাকিব আল হাসানের দলকে হারিয়েছে ড্যারেন স্যামিরা।

এর আগে প্রথম কোয়ালিফায়ারে ঢাকার কাছে ৫৪ রানে হারে খুলনা। এলিমিনেটর ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসকে বিদায় করে রাজশাহী।

বরাবরের মতো ব্যর্থ টপ অর্ডার, এবার জ্বলে উঠতে পারেনি খুলনার মিডলঅর্ডারও। প্রাণপণ লড়াইয়ে দলকে ৯ উইকেটে ১২৫ রানে নিয়ে যান আরিফুল হক।

পুঁজি ছোট, চোটের জন্য আবার নেই ছন্দে থাকা পেসার শফিউল ইসলাম। লড়াই করলেও সেভাবে কখনও জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি খুলনা। সাব্বির-জেমস ফ্র্যাঙ্কলিনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৪ বল বাকি থাকতেই ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছায় রাজশাহী।

লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি রাজশাহীর। দ্বিতীয় ওভারেই মুমিনুল হককে হারায় তারা। মোশাররফ হোসেনকে চার হাঁকিয়ে পরের বলে ফিরে যান অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান।

তিন নম্বরে নেমে ২৭ বলে তিনটি চারে ২৬ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন আফিফ হোসেন। টি-টোয়েন্টিতে নিজের দ্বিতীয় ইনিংসেই দেখালেন সামর্থ্যের ঝিলিক। ৬৭ রানে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে হারানো রাজশাহীকে সহজ জয় এনে দেন পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করা সাব্বির ও ফ্র্যাঙ্কলিন।

৭.৫ ওভার স্থায়ী অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেটে ৬২ রানের গড়ার পথে বাড়তি কোনো ঝুঁকি নেননি দুই ব্যাটসম্যান। প্রান্ত বদল করে রানের চাকা সচল রাখার সঙ্গে সাজা দিয়েছেন বাজে বলগুলোকে। 

মাহমুদউল্লাহর করা শেষ ওভারে ৪ রান দরকার ছিল রাজশাহীর। এবার আর জাদুকরী কিছু করতে পারেননি খুলনার অধিনায়ক। দ্বিতীয় বলেই বিশাল এক ছক্কায় ম্যাচ শেষ করে দেন ফ্র্যাঙ্কলিন। নিউ জিল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার ২৪ বলে করেন ৩০ রান। ৫২ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন সাব্বির।

প্রথম কোয়ালিফায়ারে চোট পাওয়া শফিউলের অভাব অনুভব করেছে খুলনা। দলটির কোনো বোলার একটির বেশি উইকেট নিতে পারেননি। আগের ম্যাচে ৪ উইকেট নেওয়া জুনায়েদ খান এবার ছিলেন উইকেটশূন্য। দলে ফেরা কেভন কুপার ৩২ রানে নেন ১ উইকেট।

এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি খুলনার। চতুর্থ ওভারে ১৭ রানের মধ্যে ফিরে যান তিন ব্যাটসম্যান।

কেসরিক উইলিয়ামসের করা তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে ভুল বোঝাবুঝিতে দুই ব্যাটসম্যান এক প্রান্তে গিয়ে রান আউট হন হাসানুজ্জামান। পরের বলে সরাসরি থ্রো স্টাম্প লাগলে ফিরে যতে হত নিকোলাস পুরানকে। বাজে রানিং বিটুইন দ্য উইকেটের মাশুল দিয়ে তৃতীয় বলে রান আউট হন ইতিবাচক শুরু পাওয়া আবদুল মজিদ।

দলের বিপদ বাড়িয়ে দ্রুত ফিরেন শুভাগত হোম চৌধুরী। পুরানের (১০ বলে ২২) পাল্টা আক্রমণে চাপ অনেকটাই সরে যায়। আফিফ হোসেনকে ছক্কায় শুরু করে তার পুনরাবৃত্তি করতে গিয়ে এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের বিদায়ে আবার চাপে পড়ে খুলনা।

দুই অঙ্কে গিয়েই ফিরে যান বেনি হাওয়েল, ব্যর্থ হয় ঘুরে দাঁড়ানোর আরেকটি প্রচেষ্টা। দলকে এগিয়ে নিতে পারেননি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও(২৮ বলে ২২)। এক চার হাঁকিয়ে ফিরেন কুপার। এক সময়ে খুলনার শতরান করা নিয়েই শঙ্কা জাগে। জুনায়েদের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন দশম উইকেটে ২৩ রানের জুটিতে দলকে লড়াই করার মতো স্কোর এনে দেন আরিফুল। ২৯ বলে দুটি চার ও একটি ছক্কায় ৩২ রান করেন তিনি।

১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে রাজশাহীর সেরা বোলার সামিত প্যাটেল। আরেক বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে দেন ২০ রান। আঁটসাঁট বোলিং করে খুলনাকে চাপে রাখেন উইলিয়ামস ও স্যামি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খুলনা টাইটানস: ২০ ওভারে ১২৫/৯ (মজিদ ১১, হাসান ১, পুরান ২২, শুভাগত ৪, মাহমুদউল্লাহ ২২, হাওয়েল ১২, আরিফুল ৩২*, কুপার ৪, নাঈম জুনিয়র ০, মোশাররফ ৪, জুনায়েদ ১*, উইলিয়ামস ১/১৮, নাজমুল ০/২০, রেজা ১/২৮, মিরাজ ০/১৪, আফিফ ১/৯, প্যাটেল ৩/১৯, স্যামি ১/৮)

রাজশাহী কিংস: ১৯.২ ওভারে ১২৯/৩ (মুমিনুল ২, নুরুল ১৪, আফিফ ২৬, সাব্বির ৪৩*, ফ্র্যাঙ্কলিন ৩০*; জুনায়েদ ০/২৫, কুপার ১/৩২, মোশাররফ ১/২৬, হাওয়েল ০/১৬, নাঈম জুনিয়র ০/১৬, মাহমুদউল্লাহ ১/১০)

ফল:  রাজশাহী ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সামিত প্যাটেল