আমি মূলত ব্যাটসম্যান: আফিফ

“প্রত্যাশা বোলিংয়ে বেশি থাকবে না। আমি মেইনলি ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং আগে, তারপর আমার বোলিং” …সংবাদ সম্মেলনে যখন বলছেন আফিফ হোসেন, পাশে বসে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে জেমস ফ্র্যাঙ্কলিন। আফিফ কথা বলছিলেন বাংলায়, তবে ‘মেইনলি ব্যাটসম্যান’ শুনেই অবাক কিউই অলরাউন্ডার। আফিফের বিপিএল সতীর্থের জন্যও কথাটি চমক। ফ্র্যাঙ্কলিন যেন আকাশ থেকে পড়লেন, “তুমি মূলত ব্যাটসম্যান।”

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2016, 05:50 PM
Updated : 3 Dec 2016, 05:50 PM

শুধু ফ্র্যাঙ্কলিন নয়, আরও অনেকেরই এরকম ধন্দে পড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। টি-টোয়েন্টি অভিষেকে ৫ উইকেট নিয়ে আলো ছড়িয়েছেন, নাম লিখিয়েছেন রেকর্ডের পাতায়। সেই আফিফ আসলে ব্যাটসম্যান, না জানা থাকলে এটা কে ধারণা করতে পারবে!

আদতে তিনি বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। বিকেএসপিতে ও বয়সভিত্তিক দলগুলির কোচরা তার ব্যাটিংয়ে দেখেন তামিম ইকবালের ছায়া। রাজশাহী কিংস দলে জায়গাও পেয়েছেন ব্যাটিং দিয়েই!

টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পরও একজন বাড়তি টপ অর্ডার খুঁজছিল রাজশাহী। তখন তারা জানতে পারে আফিফের কথা। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই ব্যাটসম্যান বিকেএপিতে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচের একটিতে করেছেন ১৫০, আরেকটি ১১০, শেষটিতে ৭১। কোচদের কাছ থেকে আরও জেনে চট্টগ্রাম যাওয়ার আগে ১৭ বছর বয়সী আফিফকে দলে টানে রাজশাহী।

সেই আফিফ খেলার সুযোগ পেলেন প্রাথমকি পর্বের শেষ ম্যাচে। নায়ক হলেন বল হাতে। ২১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে গড়লেন সবচেয়ে কম বয়সে টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড।

বলার অপেক্ষা রাখে না, আফিফ ছাড়িয়ে গেছেন নিজের প্রত্যাশাকেও। আগের দিন জানতে পেরেছিলেন, খেলবেন এই ম্যাচে। ভাবনা জুড়ে ছিল ব্যাটিং। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানালেন, বোলিং দিয়ে সাড়া জাগানো ছিল তার ভাবনার বাইরে।

“এতটা প্রত্যাশা করিনি... আমার পরিকল্পনা ছিল পরিকল্পনামত কাজটা করব। জায়গামত বল করব। এটাই পরিকল্পনা ছিল। জায়গায় বল করছি, ভালো বল হয়েছে অনেক। উইকেট পেয়েছি।”

শুরু থেকেই ক্রিস গেইলকে উইকেটে বেধে রাখতে পেরেছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এটা দেখেই আফিফকে পাওয়ার প্লের মধ্যে বোলিংয়ে আনেন ড্যারেন স্যামি। প্রথম দুই বলেই আফিফ চার হজম করেছিলেন জহুরুল ইসলামের ব্যাটে। তবে তৃতীয় বলেই নেন জহুরুলের উইকেট।

আফিফ জানালেন, খানিকটা নার্ভাস ছিলেন তিনি। তবে তার মনে ছিল পূর্বসূরী মিরাজের পরামর্শ।

“প্রথম দুটি চারের পর ড্যারেন স্যামি বলেছিলেন, যাই হোক নিজের জায়গায় পরিকল্পনামত বল করবে। মিরাজ ভাই ম্যাচের আগে বলছিল, কোনো কিছু দেখবি না জায়গায় বল করবি। প্রথম দুটি চার খাওয়ার পর একটু নার্ভাস হয়েছিলাম। তারপর ঠিক জায়গায় বল করেছি বলে পরবর্তীতে ভালো ফল এসছে।”

দ্বিতীয় ওভারেই আফিফ পেয়ে যান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বজুড়ে বোলারদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত উইকেটটি, ক্রিস গেইল! ভালো লাগাটাও তাই বেশি আফিফের।

“নার্ভাস একটু লাগছিল, গেইলের সামনে বল করছিলাম। উইকেট পাওয়ার পর ভালো লেগেছে অনেক।”

তার ৫ উইকেটে বিস্ময় শুধু মূলত ব্যাটসম্যান বলেই নয়। বোলিং অ্যাকশনটা অনেকটা নতুন। নাসির হোসেনকে মনে করিয়ে দেওয়া বোলিং অ্যাকশনটি আগের থেকে বদলানোর জন্য। অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ থাকায় সেটি বদলেছেন নিবিড় ভাবে কাজ করে।

“বিকেএসপি ক্যাম্পে মাহবুব জ্যাকি স্যার আমাদের নিয়ে কাজ করছে। এরপর মিরপুরে এসে আমাদের টেস্ট নিয়েছিলেন কিছু। এরপর রেজাল্ট দিয়েছেন। পাশ করার পর থেকে নিয়মিত বোলিং করতে পারছি।”

তবে বোলিং তো বরাবরই তার ভাবনায় কম। দৃঢ়কণ্ঠেই জানালেন, মূলত তিনি ব্যাটসম্যান। এবার কণ্ঠের সেই দৃঢ়তার প্রতিফলন ২২ গজে ফেলার অপেক্ষা!