কুমিল্লার হ্যাটট্রিক জয়ের নায়ক চোটাক্রান্ত মাশরাফি

হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট বয়ে বেড়াচ্ছেন বেশ কিছু দিন ধরেই। দলের অবস্থা সুবিধের নয় বলে তবু খেলে যাচ্ছেন। চোটের কারণে ছোট করলেন রান আপ। তার পরও করলেন ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। পরে ব্যাট হাতে ছোট্ট এক ঝড়ে ঘুরিয়ে দিলেন ম্যাচের মোড়। চোটে জেরবার মাশরাফি বিন মুর্তজাই ব্যাটে-বলে কুমিল্লার দারুণ জয়ের নায়ক!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2016, 09:28 AM
Updated : 2 Dec 2016, 02:05 PM

বিপিএলে শুক্রবার প্রথম ম্যাচে খুলনা টাইটানসকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। খুলনার ১৪১ রান তাড়ায় কুমিল্লা জিতে যায় ৮ বল বাকি থাকতেই!

ছোট্ট রান আপে মাত্র কয়েক পদক্ষেপে বোলিং করেও ৪ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি। এরপর খেলেছেন ১১ বলে ২০ রানের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ইনিংস। রান বলের টানাপোড়েনে থাকা কুমিল্লা এগিয়ে যায় সেখানেই। এরপর ৫৭ বলে অপরাজিত ৬৯ রানের ইনিংসে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন মারলন স্যামুয়েলস। গুরুত্বপূর্ণ একটি অপরাজিত ইনিংসে নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন লিটন দাসও।

প্রথম আট ম্যাচের মাত্র একটিতে জয়ী কুমিল্লা জিতল টানা তিন ম্যাচ। একটু হলেও টিকিয়ে রাখল শেষ চারের আশা। ১১ ম্যাচে খুলনা হারল পঞ্চমবার।

রান তাড়ায় কুমিল্লা প্রথম ওভারেই খেয়েছিল জোর ধাক্কা। টানা চার ম্যাচে রান পাওয়া আহমেদ শেহজাদ ফিরে যান প্রথম ওভারেই।

স্যামুয়েলস উইকেট গিয়েই শট খেলেছেন। তবে শুরু থেকেই ইমরুল কায়েসের ব্যাটে ছিল অস্বস্তি। কয়েকবার আউট হতে হতে বেঁচে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ফিরেছেন ২০ রানে। সুবিধা করতে পারেননি খালেদ লতিফও।

একাদশ ওভারে কুমিল্লার রানরেট তখন ছয়ের নিচে। জিততে চাই ওভারপ্রতি আটের বেশি। মাশরাফি নামলেন পাঁচ নম্বরে। তিন ছক্কায় ২০ রান করে যখন ফিরছেন, রান রেটের সমীকরণ তখন অনেকটাই সহজ।

সেই সমীকরণ মিলিয়েছেন স্যামুয়েলস ও লিটন। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে অপরাজিত অর্ধশতক আর দলের জয় নিয়ে ফেরেন স্যামুয়েলস। ১১ বলে ২৪ রানে অপরাজিত লিটন।

খুলনা ব্যাটিংয়ে নেমেছিল টস হেরে। ব্যাটিং নিয়ে ধুঁকতে থাকা দল এদিন আবার একাদশে ফেরায় হাসানুজ্জামানকে। এই ওপেনার রান পেয়েছেন কিছু, তবে আরেক প্রান্তে অবস্থা ছিল আগে মতোই। মোহাম্মদ শরীফকে সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড রিকি ওয়েসেলস।

একাদশে ফেরা আব্দুল মাজিদ শুরু করেছিলেন ভালোই। লেগ স্পিনার রশিদ খানের প্রথম বলেই ছক্কা মারেন লং অনকে। কিন্তু আউট হয়েছেন বাজে ভাবে। মাশরাফিকে প্রথম বলেই তেঁড়েফুড়ে মারতে গিয়ে বল টেনে আনলেন স্টাম্পে (১৪ বলে ১৮)।

খুলনার আশা হয়ে থাকা হাসানুজ্জামানকেও ফেরান মাশরাফি। নাবিল সামাদকে দারুণ এক ফ্লিকে ছক্কা মেরেছিলেন। পরে মাশরাফিকেও বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে একটু বাড়তি লাফানো বলে কটবিহাইন্ড (২৬ বলে ২৯)।

নাবিলকেই চার ও ছক্কা মেরে ঝড় তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নিকোলাস পুরান। ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানকেও ফিরিয়েছেন কুমিল্লা অধিনায়ক।

বড় কিছু করতে পারেননি আরিফুল হকও। টিকে ছিলেন কেবল মাহমুদউল্লাহ। তিনিই বাড়িয়েছেন দলের রান। ২৬ রানে মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান রশিদের হাতে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৩৮ বলে ৪০ করে।

বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতেও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন মাশরাফি। এমন দিনে জয়ের হাসিটাও তারই প্রাপ্য!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খুলনা টাইটানস: ২০ ওভারে ১৪১/৬ (ওয়েসেলস ৪, হাসানুজ্জামান ২৯, মজিদ ১৮, মাহমুদউল্লাহ ৪০*, পুরান ১৪, আরিফুল ১৩, শুভাগত ১, হাওয়েল  ১২*; শরীফ ১/২৭, সাইফুদ্দিন ১/৩১, নাবিল ০/৩০, রশিদ ১/৩৩, মাশরাফি ৩/১৬)।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৮.৪ ওভারে ১৪২/৫ (ইমরুল ২০, শেহজাদ ০, স্যামুয়েলস ৬৯*, লতিফ ৩, মাশরাফি ২০, শান্ত ৪, লিটন ২৪*; জুনাইদ ১/২৪, মোশাররফ ১/২১, শফিউল ১/৪৬, হাওয়েল ২/২৫, মাহমুদউল্লাহ ০/২৫)।

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৫ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মারলন স্যামুয়েল