রাজশাহীকে হারিয়ে ছয়ে উঠল বরিশাল

দারুণ এক ওভারে ম্যাচ বরিশাল বুলসের দিকে হেলিয়ে দিলেন রায়াদ এমরিট। ডেভিড মালানের ব্যাটে লড়াইয়ের পুঁজি পাওয়া মুশফিকুর রহিমের দল জিতল সামিত প্যাটেলের ঝড় থামিয়ে। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2016, 01:44 PM
Updated : 1 Dec 2016, 03:49 PM

টানা ছয় ম্যাচে হারের পর জয়ে ফিরতে রাজশাহীকে ১৭ রানে হারিয়েছে বরিশাল। দুই দলের প্রথম দেখায় ৪ রানে জিতেছিল দলটি।

১১ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ছয় নম্বরে উঠে এসেছে বরিশাল। সমান ম্যাচে ষষ্ঠ পরাজয়ের স্বাদ পাওয়া রাজশাহী ১০ পয়েন্ট নিয়ে আছে চার নম্বরেই।

মালান-ফজলে মাহমুদের শতরানের জুটি আর থিসারা পেরেরা-শাহরিয়ার নাফীসের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৪ উইকেটে ১৬১ রান করে বরিশাল।

সামিত প্যাটেলের অর্ধশতকের পর প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন ড্যারেন স্যামি কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ৭ উইকেটে ১৪৪ রানে থেমে যায় রাজশাহীর ইনিংস।

লক্ষ্য তাড়ায় যে শুরু দরকার ছিল তা এনে দিতে পারেনি রাজশাহীর টপ অর্ডার। অষ্টম ওভারে ৫৩ রানের মধ্যে ফিরে যান প্রথম তিন ব্যাটসম্যান। দুই অঙ্কেই যেতে পারেননি সাব্বির রহমান ও রকিবুল হাসান।

আগের ম্যাচের মতো তেমন কিছু করতে পারেননি জেমস ফ্র্যাঙ্কলিন (১৮ বলে ১৮)। ফিরে যান কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে চড়াও হতে গিয়ে। প্যাটেলের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে শেষ দুই ওভারে ৩৩ রান দরকার ছিল রাজশাহীর। ড্যারেন স্যামিও তখন ক্রিজে থাকায় আশায় ছিল দলটি।

১৯তম ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে প্যাটেল ও ফরহাদ রেজাকে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচ পুরো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন ম্যাচ সেরা এমরিট। ৫১ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৬১ রান করা প্যাটেল সীমানায় ক্যাচ দেন শাহরিয়ারকে। রেজা ধরা পড়েন এনামুল হকের হাতে।

শেষ ওভারে দরকার ছিল ২৮ রান। প্রথম তিন বলে ১০ রান নিয়েছিলেন স্যামি। কিন্তু পরের তিন বলে আর কোনো বাউন্ডারি পাননি এই মারকুটে অলরাউন্ডার। শেষে কোনো সিঙ্গেলও নেননি।

২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে রাজশাহীর সেরা বোলার এমরিট। অফ স্পিনার এনামুল ২ ওভারে ৬ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হকও করেন আঁটসাঁট বোলিং।

এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বরিশালের। নিজের প্রথম ওভারেই জিবন মেন্ডিসকে ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

ভালো শুরুর সুবিধা ধরে রাখতে পারেনি রাজশাহী। এতে সবচেয়ে বেশি দায় বাজে ফিল্ডিংয়ের। হাতের ক্যাচ ছেড়েছেন তারা, কোনো হাফ-চান্সও কাজে লাগাতে পারেননি।

দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ক্রিজে থাকায় অফ স্পিনার মিরাজকে টানা বল করান স্যামি। সুযোগও তৈরি করেন মিরাজ। তার তৃতীয় ওভারে ছক্কা হাঁকানোর আগে-পরে দুবার জীবন পান সে সময় ৬ রানে ব্যাট করা মাহমুদ।

মিডঅফে বদলি ফিল্ডার সালমান হোসেন ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে আসা ক্যাচ গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি নুরুল হাসান, স্টাম্পিংয়ের সুযোগও নষ্ট করেন এই উইকেটরক্ষক।

সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১১.৫ ওভারে ১০০ রানের জুটিতে দলকে দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করান মালান-মাহমুদ। শুরুতে দেখেশুনে খেলা দুই ব্যাটসম্যান চড়াও হন থিতু হয়ে।

নাজমুল ইসলামকে ছক্কা হাঁকিয়ে অর্ধশতকে পৌঁছান মালান। এই ইংলিশ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের আউটের ধরন ছিল দৃষ্টিকটু। কাছেই বল পাঠিয়ে রান নিতে দ্রুত ছুটেছিলেনও। কিন্তু শেষ সময়ে একটু মন্থর হয়ে যান। ব্যাট ক্রিজে ছোঁয়ানোর চেষ্টা করেননি, পা-ও বাড়ননি। নাজমুল ইসলামের সরাসরি থ্রোয়ে হন রান আউট।

তিনটি বিশাল ছক্কা ও ছয়টি চারে ৩৩ বলে ৫৬ রান করেন মালান। ফরহাদ রেজার ওই ওভারে মিরাজের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন মাহমুদ। ৪৩ বলে চারটি চার ও দুটি ছক্কায় এই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানের রান ৪৩।

দুই থিতু ব্যাটসম্যানকে হারানো বরিশাল দেড়শ’ ছাড়ায় থিসারা ও শাহরিয়ারের ব্যাটে। ২২ বলে চারটি চারে ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার পেরেরা। শেষ ওভারে দুটি ছক্কায় ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন শাহরিয়ার। মাঝে ৮ বলে ৮ রান করে ফিরে যান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।

আঁটসাঁট বোলিং করেন মোহাম্মদ সামি। চার ওভারে ১৬ রান দিয়ে তিনি নেন ১ উইকেট। রাজশাহীর আর কোনো বোলার ওভার প্রতি ছয়ের কম রান দেননি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বরিশাল বুলস: ২০ ওভারে ১৬১/৪ (মেন্ডিস ৬, মালান ৫৬, মাহমুদ ৪৩, মুশফিক ৮, পেরেরা ২৯*, শাহরিয়ার ১৬*; সামি ১/১৬, মিরাজ ১/৩৪, রেজা ১/৩২, স্যামি ০/২৮, ফ্র্যাঙ্কলিন ০/২১, নাজমুল ০/২১, প্যাটেল ০/৭)

রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৪৪/৭ (মুমিনুল ১৬, নুরুল ১২, সাব্বির ৮, প্যাটেল ৬২, রকিবুল ৯, ফ্র্যাঙ্কলিন ১৭, স্যামি ১১*, রেজা ৪, মিরাজ ০*; তাইজুল ০/২৯, রাব্বি ১/২৭, মনির ১/১৭, এমরিট ৩/২৭, এনামুল ১/৬, পেরেরা ১/৩৫)

ফল: বরিশাল বুলস ১৭ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রায়াদ এমরিট।