ধ্বংসস্তুপ থেকে রাজশাহীকে জেতালেন মিরাজ

দুই দলের ইনিংসই ছিল ধ্বংসস্তুপ। সেখান থেকেই মাথা তুলে দাঁড়াল এক দল, কিন্তু আরেক দল খুঁজে পেল না কোনো ফিনিক্স পাখি। ভস্ম থেকেও তাই উড়ল রাজশাহী, ধ্বংসস্তুপ থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারল না রংপুর।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2016, 01:41 PM
Updated : 28 Nov 2016, 05:35 PM

বিপিএলে সোমবারের একমাত্র ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ৪৯ রানে হারিয়েছে রাজশাহী কিংস। রাজশাহীর ১২৮ রান তাড়ায় রংপুর গুটিয়ে যায় ৭৯ রানেই। উত্তরবঙ্গের দুই দলের প্রথম পর্বের ম্যাচেও জয়ী ছিল রাজশাহী।

ফলাফল বলবে এক তরফা ম্যাচ। রাজশাহী শেষ পর্যন্ত জিতেছে অনায়াসেই। তবে ম্যাচটি আসলে ছিল নাটকীয়তায় ভরা। সেই নাটকের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। পার্শ্বনায়ক ফরহাদ রেজা ও নাজমুল হোসেন অপু।

ম্যাচের প্রথম ভাগে মিরাজ ও ফরহাদ ছিলেন পাশাপাশি। উইকেটে যখন জুটি বেধেছেন দুজন, দলের তখন পঞ্চাশ ছোঁয়া নিয়েই শঙ্কা। ইনিংস শেষে যখন ফিরছেন, দল তখন পেয়ে গেছে লড়ার পুঁজি!

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা রাজশাহী ৪৩ রানে হারিয়েছিল ৭ উইকেট! ফরহাদ ও মিরাজের দারুণ ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত আর হারাতে হয়নি কোনো উইকেট। অষ্টম উইকেটে বিপিএলের রেকর্ড ৮৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন দুজন।

রংপুর ৭ উইকেট হারিয়েছিল ৫৮ রানে। কিন্তু তাদের ছিল না কোনো মিরাজ বা ফরহাদ। তাই থুবড়ে পড়া দল আর তুলতে পারেনি মাথা। বল হাতেও মিরাজ নিয়েছেন ২ উইকেট।

ব্যাটিংয়ে যেখানে শেষ করেছিলেন, বোলিংয়ে সেখান থেকেই শুরু করেন মিরাজ। রংপুর প্রথম ২ ওভারে তুলেছিল ১৫ রান। মিরাজ বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই ব্রেক থ্রু। ব্যর্থতার বৃত্তে থাকা সৌম্য এবার ১ রানে স্টাম্পড।

নিজের পরের ওভারের প্রথম বলেই আবার মিরাজের সাফল্য। দারুণ এক ফিরতি ক্যাচে ফেরান নাসির জামশেদকে। মাঝে মোহাম্মদ সামির গতিময় শর্ট বলে কাটা পড়েন মোহাম্মদ শাহজাদ।

ধুঁকতে থাকা রংপুর আরও ধাক্কা খায় আম্পায়ারের আঙুলে। বাজে সিদ্ধান্তে এলবিডব্লিউ হন রংপুরের এই ম্যাচের অধিনায়ক লিয়াম ডসন। নাজমুল ইসলাম অপুর বল প্যাডে লাগার আগে পরিষ্কার লেগেছিল ব্যাটে।

নাজমুল পরে ফিরিয়ে দেন শহিদ আফ্রিদি ও জিয়াউর রহমানকেও। ৪ ওভারের দারুণ স্পেলে ৮ রান দিয়ে বাঁহাতি স্পিনার নিয়েছেন ৩ উইকেট!

পরে আবুল হাসানও ৩ উইকেট নিয়ে ধ্বংস করেন রংপুরকে। ১৬ বল আগেই তারা অলআউট।

চোটে নাঈম ইসলাম না থাকায় এই ম্যাচে রংপুরকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার ডসন। বোলিংয়ে তাদের প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছিলেন রুবেল হোসেন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ফেরান জুনায়েদ সিদ্দিককে।

মুমিনুল হক ও সাব্বির রহমান এগোচ্ছিলেন ধীর গতিতে। সেই গতিও থমকে যায় সানি ও আফ্রিদি আক্রমণে আসার পর।

নিজের প্রথম ওভারেই জোড়া শিকার ধরেন সানি। দুর্দান্ত এক ফিরতি ক্যাচে শুরুতে ফেরান মুমিনুকে। ওভারের শেষ বলে কট বিহাইন্ড সামিত প্যাটেল। যদিও আউটটি নিয়ে অবকাশ আছে সংশয়ের। বল ব্যাট ছুঁয়েছিল কিনা, সেই প্রশ্ন আছে। টিভি রিপ্লে সন্দেহ জাগিয়েছে বল মোহাম্মদ শাহজাদের গ্লাভসে আশ্রয় নেওয়ার আগে হেলমেট ছুঁয়েছিল কিনা।

সেই শুরু, আসা-যাওয়ার মিছিল দীর্ঘায়িত হয়েছে আরও। প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নামা আবুল হাসান পারেননি টিকতে। আফ্রিদির সোজা বল কাট করতে গিয়ে বোল্ড উমর আকমল। আগের দুই ম্যাচের নায়ক ড্যারেন স্যামিও ব্যর্থ এদিন। সাব্বির টিকে ছিলেন অনেকটা সময়। আফ্রিদির ফিরতি ক্যাচ ফিরিয়েছে তাকেও।

তবে প্রয়োজনীয়তাই জন্ম দিয়েছে নায়কের। মিরাজ ও ফরহাদ এগিয়েছেন ধীরে ধীরে। একটু একটু বাড়িয়েছেন দলের রান। শেষ দিকে তুলেছেন ঝড়।

দুটি করে চার ও ছক্কায় শেষ পর্যন্ত ৩২ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত ফরহাদ। যার টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে ছিল প্রশ্ন, সেই মিরাজ ৪১ রানে অপরাজিত ৩৩ বলে। রুবেলকে স্কুপ করে চার যেমন মেরেছেন, তেমনি শর্ট বলে টেনিসের মতো ফোরহ্যান্ড শটে ছক্কা মেরেছেন লং অফ দিয়ে।

দুজনের ৮৫ রানের জুটি ছাড়িয়ে গেছে বিপিএলে আগের রেকর্ডকে। অষ্টম উইকেটে আগের রেকর্ড ছিল মোহামমদ শরীফ ও ধীমান ঘোষেন ৫৭ রান।

ফরহাদ ও মিরাজের ব্যাটে শেষ ৪ ওভারে ৫০ রান তুলে রাজশাহী। সেটিই শেষ পর্যন্ত গড়ে দিয়েছে ব্যবধান। রংপুর হেরেছে ৪৯ রানে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১২৮/৭ (মুমিনুল ৯, জুনায়েদ ২, সাব্বির ১৬, প্যাটেল ২, আবুল হাসান ২, আকমল ১, স্যামি ৫, মিরাজ ৪১*, ফরহাদ ৪৪*; সোহাগ ০/১৮, রুবেল ১/৩৮, সানি ৩/৩১, আফ্রিদি ২/১০, ডসন ১/২৭)।

রংপুর রাইডার্স: ১৭.৪ ওভারে ৭৯ (শাহজাদ ১২, সৌম্য ১, মিঠুন ২০, জামশেদ ১, ডসন ২, আফ্রিদি ৭, জিয়াউর ৫, সোহাগ ৮, মুক্তার ৫, সানি ৯, রুবেল ১*; সামি ১/৭, ফরহাদ ০/২০, মিরাজ ২/১২, নাজমুল ৩/৮, প্যাটেল ১/১৮, আবুল হাসান ৩/১১)

ফল: রাজশাহী ৪৯ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ